সুচরিতা সেন চৌধুরী: এমনিতে কলকাতা তথা বাংলার ফুটবলপ্রেমীরা দু’ভাগে বিভক্ত। ডার্বি ছাড়া যুবভারতীর গ্যালারি ভরে না সাধারণত। কিন্তু এই মরসুম বার বার অন্য দৃশ্য দেখিয়েছে। যার প্রভাব আরও একবার দেখা গেল জাতীয় দলের ম্যাচে। অতীতে সব সময়ই দেখা গিয়েছে জাতীয় দলের ম্যাচে মুখ ফিরিয়ে থেকেছে কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। তবে এবার এই ম্যাচ শুধু জাতীয় দলের বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ ছিল না, এই ম্যাচ ছিল সুনীল ছেত্রীর বিদায়ী ম্যাচ। একমাস আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বনাম কুয়েত ম্যাচ থেকে অবসরের ঘোষণা করার পর থেকেই এই ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। সকলেই সুনীলের বিদায়ী ম্যাচের সাক্ষী থাকতে চায়। আর সে জন্যই এদিন ভরে গেল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারি। সরকারি হিসেব বলছে ৫৮ হাজার ৯২১।
গ্যালারি থেকে কখনও ভেসে এল ‘সুনীল সুনীল’ চিৎকার কখনও আবার একসঙ্গে গোটা গ্যালারি গেয়ে উঠল ‘বন্দে মাতরম’। তার মধ্যেই নির্ধারিত সময়ের তিন মিনিট পরে শুরু হল ম্যাচ। শুরু থেকেই কিছুটা দাপট দেখাল কুয়েত। যার ফল ম্যাচ শুরুর চার মিনিটেই গোলের মুখ প্রায় খুলেই ফেলেছিলেন কুয়েতের মহম্মদ আবদুল্লাহ। কিন্তু বল গুরপ্রীতের পায়ে লেগে চলে যায় বাইরে। সাত মিনিটেও আবারও সেই আবদুল্লাহ, এবার বল জমা হয় ভারতীয় গোলকিপারের হাতে।
ভারতীয় ফুটবল দলকে প্রথম আক্রমণে উঠতে দেখা গেল ১১ মিনিটে। যখন লিস্টন কোলাসোর গোলমুখি পাস কর্নারের বদলে বাঁচিয়ে দেন কুয়েত গোলকিপার সুলেমান। থাপার কর্নার থেকে আনোয়ারের হেড অল্পের জন্য বাইরে যায়। এর পর গুরপ্রীতকে একা পেয়েও বাইরে মারেন কুয়েতের ঈদ আলরশিদি। ম্যাচের বয়স তখন ২৫ মিনিট। এক মিনিচের মধ্যেই ভারতের আক্রমণ বাঁচিয়ে দেয় কুয়েত। প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্যভাবেই।
দ্বিতীয়ার্ধে দলে জোড়া পরিবর্তন করেন কোচ ইগর স্টিমাচ। সাহাল আব্দুল সামাদের জায়গায় রহিম আলি ও অনিরুদ্ধ থাপার জায়গায় ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজকে নামিয়ে খেলায় গতি বাড়ানোর চেষ্টা করলেন। সাময়িক তা কাজেও লাগল। প্রথম টাচেই প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন রহিম আলি। শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়ে দেন গোলকিপার। তাঁর ঠিক আগেই কুয়েতের নিশ্চিত গোলের সুযোগ আটকে দেন গুরপ্রীত। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ায় ভারত। পর পর চারটি কর্নার তুলে নেয়, যদিও তা কাজে লাগেনি।
আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে দ্বিতীয়ার্ধ জমে ওঠে। লিস্টন কোলাসোকে তুলে মনভীর সিংকে নামান ইগর। লক্ষ্য ছিল আক্রমণে লোক বাড়ানো। তার মধ্যেই প্রতিপক্ষ কুয়েতের তরফে পেনাল্টির দাবি ওঠে যা দেননি রেফারি। তবে ভারতের গোলের নিচে এদিন গুরপ্রীত না থাকলে ফল অন্যরকম হতে পারত। ভারতের গোলের নিচে এদিন প্রাচীর তৈরি করেছিলেন তিনি। সুনীলের বিদায়ের দিন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অভিষেক হয়ে গেল জয় গুপ্ত ও এডমন্ড লালরিনডিকার। তবে শেষটা জিতে শেষ করা হল না ভারত অধিনায়কের। এদিন জিতলে নিশ্চিত ছিল ভারতের এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের তৃতীয় পর্ব। গোলশূন্য ড্র করে এবার তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকে।
শেষ বাঁশি বাজার আগে কিছুটা উত্তেজনা ছড়াল দুই দলের ফুটবলারদের মধ্যে। তবে তা বেশিদূর গড়ায়নি। ভারতের এডমন্ড ও কুয়েতের সুলতান আলেনজিকে হলুদ কার্ড দেখিয়েই কাজ সারলেন রেফারি। বাজল ম্যাচ শেষের বাঁশি। যাঁরা গ্যালারি ভরিয়েছিলেন তাঁদের সুনীলের শেষ ম্যাচ দেখা হল ঠিকই কিন্তু ভারতের জয় দেখা হল না।
ভারত: গুরপ্রীত সিং সান্ধু, রাহুল ভেকে, আনোয়ার আলি, জয় গুপ্তা (এডমন্ড লালরিনডিকা), নিখিল পুজারী, অনিরুদ্ধ থাপা (ব্রেন্ডন ফার্নান্ডেজ), সুরেশ সিং ওয়াংজাম, লালিয়ানজুয়ালা ছাংতে, সাহাল আব্দুল সামাদ (রহিম আলি), লিস্টন কোলাসো (মনভীর সিং), সুনীল ছেত্রী
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার