অলস্পোর্ট ডেস্ক: গত জুনে কাতারের কাছে হারের ফলে ২০২৬-এর বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিতে হয় ভারতকে। ওই রাউন্ডের গণ্ডী পেরিয়ে তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে পারলে ভারতীয় ফুটবলে এক নতু ইতিহাস তৈরি হত। কিন্তু সে আর হয়নি। এ বার ভারতের সামনে আর এক লক্ষ্য, ২০২৭-এর এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলা। গত দু’বার ভারত মূলপর্বে খেলেছে, যা তার আগে কখনও হয়নি। এ বারও তারা যদি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে, তা হলে তাও হবে এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
ভারতীয় সিনিয়র দলের নতুন কোচ মানোলো মার্কেজের প্রথম লক্ষ্য হতে চলেছে এটিই, এশিয়ান কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। সে জন্য ভারতীয় দলকে আসন্ন এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে সাফল্য পেতে হবে। ভারতে এসে মার্কেজ সেই লক্ষ্যের কথাই জানালেন সাংবাদিকদের।
নয়াদিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “এখন ভারতীয় দলের লক্ষ্য অবশ্যই এশিয়ান কাপের মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জন করা। সে জন্য ভারতীয় দলের ফুটবলারদেরও অনেক উন্নতি করতে হবে। উন্নতির পরবর্তী স্তরে পৌঁছতে হবে তাদের। দল হিসেবেও উন্নতি করতে হবে আমাদের। ক্রমতালিকায় অবস্থান নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। কারণ, অনেকসময়ই দেখা যায় পরিসংখ্যান সঠিক ছবিটা তুলে ধরে না। উন্নতি করতে সময় লাগে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবার মানসিকতা কেমন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খেলোয়াড়ষ ফেডারেশন, স্টাফ, কোচেরা, প্রত্যেককেই একসঙ্গে একই দিকে এগোতে হবে। আমি নিশ্চিত, তা হলেই ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে”।
এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব শুরু হবে আগামী বছর মার্চে। ২৪টি দলকে ছ’টি গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রতি গ্রুপে চারটি দলকে রাখা হবে এবং প্রতি গ্রুপের শীর্ষস্থানীয় দল সৌদি আরবে মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে। এই বাছাই পর্বের ড্র ঘোষণা করা হবে ডিসেম্বরে এবং ড্র ঘোষণার অনুষ্ঠানে ভারতের এক নম্বর পাত্রে থাকাটা খুবই জরুরি। তা হলে তাদের গ্রপ অপেক্ষাকৃত সহজ হতে পারে।
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে তিনটি ফিফা উইন্ডো রয়েছে। ডিসেম্বরে ড্র অনুষ্ঠানে এক নম্বর পাত্রে থাকতে হলে ভারতকে এই তিনটি উইন্ডো কাজে লাগাতে হবে। সেপ্টেম্বরে হায়দরাবাদে তারা ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে খেলবে মরিশাস ও সিরিয়ার বিরুদ্ধে। অক্টোবরে লেবানন ও আয়োজক ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে তারা খেলবে ত্রিদেশীয় সিরিজে।
এই ম্যাচগুলিকে এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে ধরছেন মার্কেজ। তিনি বলেন, “মার্চে বাছাই পর্বের আগে আমরা ছ-সাতটা ম্যাচ পাব। সেপ্টেম্বরে কী হয় দেখা যাক। ভুলে গেলে চলবে না যে, ডিসেম্বরের ড্রয়ের আগে আমাদের এক নম্বর পাত্রে থাকার জায়গায় পৌঁছতে হবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল একটা ভাল দল গড়ে সঠিক প্রস্তুতি নেওয়া। দলের জন্য খেলবে এমন খেলোয়াড় দরকার আমাদের। ২০-২৫ জনের একটা পুল তৈরি করতে হবে আমাদের। প্রত্যেককেই দলে তার ভূমিকা কী, জানতে হবে। যে স্টাইলের ফুটবল খেলতে চাই আমরা, সেই স্টাইলের ফুটবলই খেলতে হবে”।
শুধু দক্ষতা নয়, মানসিকতার দিক থেকেও তাঁর দলের ফুটবলাররা শক্তিশালী হয়ে উঠুক, এমনই চান ভারতীয় দলের নতুন কোচ। বলেন, “ফুটবলে টেকনিক, কৌশল, শারীরিক সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে মানসিক শক্তিরও দরকার। মাথা ঠিকমতো কাজ না করলে শুধু ফুটবল নয়, জীবনে কোনও কাজই ঠিকমতো হয় না। কোনও ম্যাচে ২০ মিনিটের মধ্যে যদি কোনও দল দু’গোলে পিছিয়ে পড়ে, তা হলে তার সামনে আরও ৭০ মিনিট থাকে, যে সময়ে ম্যাচের ফল উল্টে দেওয়া সম্ভব। এটাই মানসিকতা। জাতীয় দলে দেশের সেরা ফুটবলাররাই খেলবে। তাদের মানসিকতা যদি ঠিকঠাক হয়, তা হলে ভাল ফল পাওয়া যাবেই”।
জানুয়ারিতে এএফসি এশিয়ান কাপে ব্যর্থতার পর বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের শেষ দুই ম্যাচে কুয়েত ও কাতারের কাছে হেরে ছিটকে যায় ভারতীয় দল। তার পরেই সেই দলের হেড কোচের পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয় ক্রোয়েশিয়ার ইগর স্টিমাচকে।
তাঁর জায়গায় এফসি গোয়ার স্প্যানিশ কোচ মার্কেজকে আনার সিদ্ধান্ত নেয় সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। একই সঙ্গে ২০২৪-২৫ মরশুমে তিনি এফসি গোয়ার দায়িত্বও সামলাবেন। এই মরশুমের পর মার্কেজ ভারতীয় দলের পূর্ণ দায়িত্ব নেবেন বলে জানানো হয়। অর্থাৎ চলতি মরশুমে তাঁকে দ্বিগুন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দ্বৈত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তিনি? দুই দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পরিকল্পনা কী ভাবে করেছেন, তা জানাতে গিয়ে সাংবাদিকদের মার্কেজ বলেন, “জানি এটা স্বাভাবিক ব্যাপার নয়। কিন্তু এই পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব। এই প্রথম যে কেউ এটা করছে, তা নয়। বিদেশে তো হয়েছেই, ভারতেও হয়েছে। আমার জন্য এটা কোনও সমস্যা হওয়া উচিত নয়। যখন আইএসএলে বিরতি থাকবে, তখন আমি জাতীয় দল নিয়ে থাকব। এখানে পেশাদার হওয়া জরুরি। ফুটবল আমার নেশা। জাতীয় দলের জন্য খুবই পরিশ্রম করব। তাই আপনাদের কারও মনে এই নিয়ে কোনও সংশয় থাকতে দেব না”।
ভারতের কোচ হওয়ার ইচ্ছা যে তাঁর বহুদিনের, তা জানিয়ে এই সাংবাদিক বৈঠকে মার্কেজ বলেন, “অনেক দিন ধরেই ভারতের কোচ হওয়ার ইচ্ছা ছিল আমার। ভারতের কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। আর এখন সেই স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে। ভারতীয় খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভাল। তাদের অনেকেরই ব্যক্তি ব্যাপারেও অনেক কিছু জানি আমি। ওদের কোচ হতে অসুবিধা হবে না। স্পেন, থাইল্যান্ড আর ভারতে কোচিং করানো এক রকম নয়। সেটা আমি জানি”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার