Saturday, December 14, 2024
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলকঠিন ম্যাচে মিরাক্কেলের অপেক্ষায় সুনীলহীন ভারতীয় ফুটবল দল

কঠিন ম্যাচে মিরাক্কেলের অপেক্ষায় সুনীলহীন ভারতীয় ফুটবল দল

অলস্পোর্ট ডেস্ক: মরণ-বাঁচন ম্যাচ একেই বলে। ফিফা বিশ্বকাপ ও এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে শেষ ম্যাচে এশীয় চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিরুদ্ধে তাদের ঘরের মাঠে জেতা ছাড়া কোনও উপায় নেই ভারতের। ফলে এই ম্যাচে কঠিন পরীক্ষা ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচের ভারতের। 

কাতারকে রুখে দিতে পারলেও প্রথমবারের জন্য বাছাই পর্বের তৃতীয় রাউন্ডে উঠে ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা আছে ভারতের। কিন্তু তা সম্ভব হবে তখনই, যদি মঙ্গলবারের অপর ম্যাচে কুয়েত ও আফগানিস্তানের মধ্যে ম্যাচও যদি অমীমাংসিত থাকে। 

হিসেবটা এ রকম। বাছাই পর্বে গ্রুপ ‘এ’ তে ভারত পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে দু’নম্বরে রয়েছে। পাঁচ ম্যাচে চার পয়েন্ট পেয়ে চার নম্বরে কুয়েত। কাতারের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করে চার নম্বরে থাকা আফগানিস্তান পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে এসেছে। তাই আফগানিস্তান ও কুয়েতের মধ্যে ম্যাচ যদি ড্র হয়, তা হলে ভারতের পক্ষে এশীয় চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিরুদ্ধে ড্র করে তৃতীয় রাউন্ডের দরজা খুলে ফেলা সম্ভব। কারণ, গোল পার্থক্যে আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। অপর ম্যাচে ফয়সালা হলে অবশ্য ভারতের সামনে জয় ছাড়া কোনও রাস্তা থাকবে না। সেক্ষেত্রে তাদেরও শেষ ম্যাচে জিততে হবে।  

বাছাই পর্বে দ্বিতীয় রাউন্ডে মোট ৩৬টি দলকে ৯টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি গ্রুপে রয়েছে চারটি দল। তৃতীয় রাউন্ডে ১৮টি দলকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হবে, যেখানে প্রতি গ্রুপে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে খেলা হবে। ভারত এখন সেই দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কাজটা বেশ কঠিন। 

কাজটা কঠিন হলেও ভারতীয় দলের কোচ স্টিমাচ আশাবাদী। সোমবার দোহায় তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “গত পাঁচ বছরে দলের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছি আমরা। যা আগে কখনও ছিল না। দলের ছেলেদের নিয়ে আমি গর্বিত। আমার বিশ্বাস, ওরা আত্মবিশ্বাসী হয়েই মাঠে নামবে”। 

এই ম্যাচে ফলের কথা না ভেবে ভারতীয় ফুটবলারদের উপভোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন কোচ। বলেন, “ওদের আমি বলেছি, শুধু খেলাটা উপভোগ করো। এ ছাড়া আর কিছু চাই না। দেশের জন্য গর্বিত হয়ে খেলো এবং দেশের ১৪০ কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে সুযোগ কাজে লাগানোর আপ্রাণ চেষ্টা করো। কাল আমাদের কাছে ম্যাচের ৯০ মিনিটই সব এবং আমরা প্রয়োজন হলে মাঠে প্রাণ দিয়ে দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত”। 

গত ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও তরুণদের নিয়ে গড়া দল নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাতার। হাসান আল হেদোস বা ফরোয়ার্ড আক্রম আফিফের মতো অভিজ্ঞরা এই দলে নেই। এমনিতেই গ্রুপের শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে তারা। আর তা খোয়ানোর ভয় নেই তাদের। তাই কোচ টিনটিন মার্কেজ বিভিন্ন তরুণ ফুটবলারদের খেলিয়ে তৃতীয় রাউন্ডের জন্য তাদের তৈরি করে নিচ্ছেন। 

আফগানিস্তান ও কাতার ম্যাচে গোলশূন্য ড্র ভারতকে অবশ্যই প্রেরণা জোগাবে। হয়তো এই ম্যাচের ভিডিও তারা বারবার দেখেছে। কাতারের মতো দলকে কী ভাবে আটকে রাখতে হয়, তা হয়তো আফানিস্তানের খেলা দেখে শিখেছেন লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতেরা। সত্যিই যদি সেই শিক্ষা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেন তাঁরা, তা হলে অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে ভারত।

গত নভেম্বরে ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে দাপুটে ফুটবল খেলেই ৩-০-য় জেতে এশিয়ার সেরা দশে থাকা দলটি। মুস্তাফা মাশাল, আলমোজ আলি ও ইউসেফ আব্দুরিসাগের গোলে জয় পায় গত বিশ্বকাপের আয়োজক তথা অংশগ্রহনকারী দেশ কাতার। তার আগের ম্যাচে তারা আফগানিস্তানকে ৮-১ গোলে হারিয়েছিল। সেই ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ততটা বিধ্বংসী পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও ভারতকে তাদের পাল্টা চাপে ফেলার সুযোগ দেয়নি। প্রথমার্ধে কাতার যেখানে দশটি কর্নার আদায় করে, সেখানে ভারত একটিও কর্নার পায়নি। এ থেকেই বোঝা যায় কাতারের আক্রমণ কতটা তীব্র ছিল। ঘরের মাঠেও সে রকমই দাপুটে পারফরম্যান্স দেখাতে পারে কি না তারা, সেটাই দেখার।

এ পর্যন্ত মোট পাঁচবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দেশের সিনিয়র দল। তার মধ্যে কাতার জিতেছে দু’বার ও ভারত একবার। ড্র হয়েছে দু’বার। দুই দলের এই পাঁচ লড়াইয়ে ভারত দু’টি ও কাতার পাঁচটি গোল করেছে। বিশ্বকাপ আয়োজনের আগে থেকেই কাতার নিজেদের সেরা আন্তর্জাতিক দলগুলির মানে নিয়ে যায়। ফলে তারাই এখন এশীয়সেরা।    

গত বছরে ভারত ঘরের মাঠে ১১টি ম্যাচ খেলে। তার মধ্যে ন’টিতে জেতে এবং দু’টিতে ড্র করে। কিন্তু দেশের বাইরে তাদের দুর্বলতা ফুটে ওঠে। প্রথমে সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে কিংস কাপে ও পরে কুয়ালালামপুরে অক্টোবরে মারডেকা কাপে কোনও ম্যাচেই জিততে পারেনি তারা। এএফসি এশিয়ান কাপেও দু’টি ম্যাচে তারা হারে। একটিতেও কোনও গোল করতে পারেনি তারা। গোল করতে না পারার এই সমস্যাই চিন্তায় রেখেছে স্টিমাচকে। তাই গত তিন সপ্তাহে দলের এই সমস্যা সমাধানে বিশেষ জোর দেন তিনি। 

আইএসএলে দুরন্ত ফর্মে থাকা লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে ও  বিক্রমপ্রতাপ সিং ছাড়াও মনবীর সিং, নন্দকুমার সেকর, লিস্টন কোলাসো, নাওরেম মহেশ সিং-রা ভারতের আক্রমণের সেরা অস্ত্র হয়ে উঠতে পারেন। দূর্গরক্ষার জন্য আনোয়ার আলি, জয় গুপ্তা, মেহতাব সিং, রাহুল ভেকের ওপর ভরসা করতে হবে স্টিমাচকে। 

গোল সামলানোর দায়িত্বে গুরপ্রীত সিং সান্ধুকেই রাখবেন কোচ। কারণ, সদ্য প্রাক্তন হওয়া সুনীল ছেত্রীর অনুপস্থিতিতে তাঁকেই অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত ম্যাচে যে ভাবে একাধিক অবধারিত গোল বাঁচিয়ে দলের হার বাঁচিয়েছেন গুরপ্রীত, তার পর এটাই তাঁর প্রাপ্য ছিল। যে ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়েছেন স্টিমাচ, তাঁরা যদি নিজেদের স্বাভাবিক ফুটবল খেলতে পারেন, তা হলে এই ম্যাচ অঘটন ঘটাতে পারে তারা। কিন্তু শক্তিশালী প্রতিপক্ষের চাপ সামলে সেই ক্ষমতা কতটা কাজে লাগাতে পারবে তারা, সুনীল ছেত্রীকে ছাড়া এই কঠিন পরীক্ষায় কী ভাবে উত্তীর্ণ হবে তারা, সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

এখন অবশ্য সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে বেশি কথা বলতে চান না স্টিমাচ। বরং ম্যাচে মনোনিবেশ করতে চান তিনি। বলেন, “সুনীলের অনুপস্থিতি নিয়ে এখন আর বেশি ভাবছিই না। ওর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব ক্ষমতা ও ফুটবলের মান নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু সে সব এখন অতীত। গত পাঁচ বছরে সুনীলকে ছাড়াই অনেক ম্যাচ খেলেছি আমরা এবং যথেষ্ট ভাল ও পরিণত ফুটবলই খেলেছি। দলে আরও নেতা আছে, যাদের এ বার এগিয়ে আসার পালা”। 

তা হলে সুনীলের ১১ নম্বর জার্সি পড়বেন কে? স্টিমাচের অদ্ভুত উত্তর, “কে বলেছে, যে স্ট্রাইকার না নিয়ে মাঠে নামা যাবে না?” ভারতীয় দলের কোচের এই উত্তরে কিন্তু বেশি আক্রমণাত্মক না খেলে রক্ষণাত্মক নীতি অবলম্বন করার ইঙ্গিতই স্পষ্ট। হয়তো কাতারকে আটকানোর চেষ্টাই হবে তাদের প্রধান লক্ষ্য। ভারতীয় দলের মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের কথাতেও প্রায় এরকমই ইঙ্গিত, “ফুটবল এগারো বনাম এগারোর কথা। কেউ বলতে পারে না, ফুটবলে কখন কী হবে। যে কোনও অঘটন যখন খুশি হতে পারে”।  

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

ম্যাচ: কাতার বনাম ভারত 

টুর্নামেন্ট: বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব, এশীয় অঞ্চল, দ্বিতীয় রাউন্ড 

ভেনু: জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়াম

কিক অফ: ১১ জুন, রাত ৯.১৫

সম্প্রচার: ফ্যানকোড অ্যাপ

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments