সুচরিতা সেন চৌধুরী: আইএসএল ২০২৩-২৪-এর প্রথম ডার্বি ঘিরে অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তার অনেকটাই পূরণ হল না। গ্যালারি থেকে মাঠ, সব জায়গাতেই ফাঁক থেকে গেল। ডার্বির এক সপ্তাহ আগে থেকে টিকিটের হাহাকারের কথা শুনেও শেষ বেলায় ফাঁকা থেকে গেল গ্যালারির অনেকটাই। সাম্প্রতিক অতীতেও এমনটা দেখা যায়নি যা এবার দেখা গেল। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগেও স্টেডিয়ামের বাইরে দেখা গেল বাড়তি টিকিট ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ। মনে করা হয়েছিল ভরে যাবে দুই গ্যালারি। ইস্টবেঙ্গল সদ্য সুপার কাপ জিতে এসেছে এবং সুপার কাপেই মোহনবাগানকে হারিয়েছে। যে কারণে লাল-হলুদ ফ্যানদের মধ্যে উত্তেজনা অনেকটাই বেশি প্রত্যাশা করা হয়েছিল কিন্তু ফাঁকা থেকে গেল অনেকটাই। বরং মোহনবাগান গ্যালারি তার থেকে কিছুটা বেশি প্রত্যাশা পূরণ করল। কিন্তু ম্যাচ শেষ হল সমানে সমানে ২-২ গোলে।
ঠিক যেমনটা ৯০ মিনিটের শুরুতেও দেখা গেল। ম্যাচ শুরুর তিন মিনিটের মধ্যেই দারুণ গোল করে চুপ করে থাকা ইস্টবেঙ্গল গ্যালারিকে চাগিয়ে দিয়েছিলেন অজয় ছেত্রী। বড় ম্যাচের হিরো হয়ে যেতেই পারতেন তিনি। ডানদিক থেকে বল নিয়ে বাঁ দিকে পৌঁছে গিয়েছিলেন নাওরেম মহেশ। সবাইকে কাটিয়ে সেই বল তিনি ঠেলে দেন রক্ষণ থেকে উঠে আসা নিশু কুমারকে। চলতি বলেই বক্সের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া অজয়কে মাপা ক্রস রাখেন নিশু। গোলকিপারের সঙ্গে একের বিরুদ্ধে এক অবস্থা থেকেই নিখুঁত ফিনিশ অজয়ের। কিন্তু তার পর থেকেই খেলাটা ঘুরিয়ে দিল মোহনবাগান।
যদিও তাঁর আগে ক্র্যাম্পের জন্য মাঠ ছেড়েছেন চোট সারিয়ে দীর্ঘদিন পরে দলে ফেরা আনোয়ার আলি। কিন্তু আনোয়ারের ফেরা যতটা আশা জাগিয়েছিল ততটা যে তাঁর বিদায় প্রভাব ফেলেনি তা বোঝা গেল পাঁচ মিনিটের মধ্যেই। কারণ তাঁকে ছাড়া দলের রক্ষণ দুর্বল হয়ে গেলেও তাঁকে ছাঁড়া খেলাটা অভ্যেস হয়ে গিয়েছে সবুজ-মেরুনের। ১৭ মিনিটে আর্মান্দো সাদিকুর গোল যেন নতুন করে খেলায় ফেরাল মোহনবাগানকে। সেই থেকে প্রায় পুরো প্রথমার্ধটাই নিজেদের দখলে রাখল মোহনবাগান ব্রেন্ডন হামিলের সেন্টার থেকে বক্সের মধ্যেই। সাদিকুর ডান পায়ের জোড়াল শট আটকানোর কোনও চেষ্টাই করতে পারেননি গিল।
১৮ মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন সল ক্রেসপো। পরিবর্ত হিসেবে নামার জন্য আর কোনও বিদেশি ছিল না কুয়াদ্রাতের হাতে। তাই সায়নেই ভরসা রাখলেন তিনি। যদিও দ্বিতীয়ারধে সায়নকে তুলে বিষ্ণুকে নামিয়ে দিলেন। প্রথমার্ধের অনেকটা সময়ই খেলা হল ইস্টবেঙ্গল বক্সে। ব্যস্ত থাকতে হল লাল-হলুদ ডিফেন্ডারদের। আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিয়ান নাসিরিকে তুলে মনভীর সিংকে নামিয়ে দিলেন হাবাস। আক্রমণও বাড়ল আর তার মধ্যেই পেনাল্টি দায় করে নিল ইস্টবেঙ্গল। বক্সের মধ্যে মহেশকে ফাউল করে ইস্টবেঙ্গলকে পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন দীপক টাংরি। ৫৪ মিনিটে সেই পেনাল্টি থেকে নিখুঁতভাবে মোহনবাগান জালে বল জড়ালেন ক্লেটন সিলভা। ২-১ গোলে এগিয়ে গেল ইস্টবেঙ্গল।
চোট-আঘাত থেকে কার্ড, এই ম্যাচে কম হল না। সঙ্গে প্লেয়ারদের। মধ্যেও উত্তেজনা ছড়াল। তার মধ্যেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন নাওরেম মহেশ। এক সঙ্গে দুই দলই জোড়া পরিবর্তন করল। ম্যাচ শেষের কয়েক মিনিট আগেই সমতায় ফিরল মোহনবাগান। ৮৭ মিনিটে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভুলেই গোল পেয়ে গেলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। ২-২ করেও আক্রমণ চলল দুই পক্ষেরই। কিন্তু আর গোল হল না। আইএসএল ২০২৩-২৪-এর প্রথম ডার্বি শেষ হল সমান সমানে। আইএসএল-এ এই প্রথম ডার্বিতে পয়েন্ট পেল ইস্টবেঙ্গল।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আনোয়ার আলি (আমনদীপ), ব্রেন্ডন হামিল (গ্লেন মার্টিন্স), হেক্টর ইউয়েস্তা, শুভাশিস বোস, কিয়ান নাসিরি (মনভীর সিং), দীপক টাংরি (সুমিত রাঠি), সাহাল আব্দুল সামাদ, অনিরুদ্ধ থাপা (জেসন কামিন্স), দিমিত্রি পেত্রাতোস, আর্মান্দো সাদিকু।
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন গিল, মহম্মদ রাকিপ, হিজাজি মেহের, লাল চুংনুঙ্গা, নিশু কুমার (মন্দার রাও দেশাই), পার্দো লুকাস, নন্ধা কুমার, অজয় ছেত্রী (সুহের), সল ক্রেসপো (সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়) (পিভি বিষ্ণু), নাওরেম মহেশ (এডউইন ভ্যান্সপল), ক্লেটন সিলভা
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার