অলস্পোর্ট ডেস্ক: রবিবার গোয়ার মাঠে হারের হ্যাটট্রিকের হাত থেকে বাঁচতে ক্লেটন সিলভাকে বেঞ্চে রেখে নবাগত বিদেশি রিচার্ড সেলিসকে প্রথম দলে নামিয়ে দিয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। কিন্তু আলাদা করে পার্থক্য কিছু তৈরি করতে পারলেন না তিনিও। সত্যি কথা বলতে কী এই দলের এই মরসুমে আইএসএল-এ আর কিছু হওয়ার নেই। অস্কার তো দুরঅস্ত, স্বয়ং ফুটবলের ভগবান নেমে এলেও কিছু করতে পারবেন না। যেখানে রেখে গিয়েছিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাত, সেখানেই থেকে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। মরসুমের প্রথম দিকেই এই এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে খেলেছিল ইস্টবেঙ্গল। তখন কোচ কুয়াদ্রাত। বোরহা ফার্নান্ডেজের হ্যাটট্রিকে জিতেছিল গোয়া। তবে সেই ম্যাচে দুটো গোল করে ব্যবধান কমিয়েছিল ইস্টবেঙ্গলও। আদতে কোচ বদলে যে ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য বদলাবে না তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল ০-১ গোলে হারের ম্যাচে। আসল গলদ খুঁজে বের করার সময় এসেছে লজ্জার হাত থেকে বাঁচতে হলে।
গোল হজম আর গোলের সুযোগ নষ্ট করা প্রতিদিনের অভ্যেসে পরিণত করেছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। যে ভাবে প্রথমার্ধে প্রথম গোলটি হজম করল ইস্টবেঙ্গল তাতে গোলকিপার গিলের অপারগতা তো থেকেই যাচ্ছে। আর রক্ষণ সম্পর্কে যত কম বলা যায় তত ভাল। হিজাজি মেহের রক্ষণে থাকা মানেই প্রতিপক্ষ স্ট্রাইকারদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাওয়া। মরসুমের শুরু থেকেই ফর্মে না থাকা হিজাজি মরসুমের প্রায় শেষ মুহূর্তে চলে এলেও ফর্মে ফিরতে পারলেন না। তবে তাঁকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ চুক্তির কারণে। তার সঙ্গে রয়েছে পর পর চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়া দলের একাধিক প্লেয়ার সঙ্গে কার্ড সমস্যা। এক কথায় এই ম্যাচে প্রথম একাদশ সাজাতেই রীতিমতো মাথার চুল ছিড়তে হয়েছে অস্কার ব্রুজোঁকে।
এদিন ম্যাচ শুরুর ১৩ মিনিটের মধ্যেই গোল হজম করতে হল ইস্টবেঙ্গলকে। বোরহার শর্ট কর্নার নিজেদের মধ্যে খেলে বক্সের মধ্যে পাঠিয়েছিলেন বোরহাই। সেই বলে ব্রাইসন ফার্নান্ডেজের হেড ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের জটলার মধ্যে থেকেই চলে গেল জালে। বল আটকাতে ঝাঁপিয়েছিলেন গিল। কিন্তু তার নাগাল পেলেন না তিনি। শুরুতেই পিছিয়ে পড়তে হল অস্কার বাহিনীকে। এর পরই অবশ্য সমতায় ফিরতে পারত ইস্টবেঙ্গল। বক্সের একদম সামনে যেভাবে বল পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলেন না দিয়ামান্তাকোস তাতে তাঁর রিক্রুট নিয়েও প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এর পর ৩৪ মিনিটে গোলের ব্যবধান বাড়িয়ে নিতে পারত এফসি গোয়া। ইকার ভালেজোর গোলের ঠিকানা লেখা শট পোস্টে লেগে ফেরে। সেই ফিরতি বলে ব্রাইসনের শট বাঁচিয়ে দেন গিল। প্রথমার্ধের শেষের দিকে সেলিসের বল নিয়ে সোলো রান চোখে পড়ল ঠিকই। কিন্তু তাঁর মাপা পাসকে কাজে লাগিয়ে গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ পিভি বিষ্ণু।
প্রখম দিন খেলতে নামা সেলিসকে গোলের জন্য কিছুটা ছটফট করতে দেখা গেল। তাঁকে কিছুটা সময় দিতে হবে দলের সঙ্গে, ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। মন্থর ইস্টবেঙ্গলে গতি আনতে পারেন সেলিস। এদিন অস্কার ব্রুজোঁ আক্রমণাত্মক দল সাজিয়েছিলেন। দল দেখেই বোঝা গিয়েছিল, তিনি অ্যাটাকিং ফুটবল খেলার জন্যই দল নামিয়েছেন। আক্রমণও হল কিন্তু গোল এল না। ৫৪ মিনিটে ডেভিডকে তুলে নিয়ে এলেন ক্লেটনকে। তার আগেই নিশ্চিত সুযোগ চলে এসেছিল ইস্টবেঙ্গলের সামনে। ম্যাচের বয়স তখন ৫২ মিনিট। বিষ্ণুর শট বক্সের মধ্যে থাকা দিয়ামান্তাকোস রিচ করতে পারেননি। সেই বলেই সেলিসের শট বাঁচিয়ে দেন গোয়া গোলকিপার ঋত্বিক তিওয়ারি।
এদিকে প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধেও ইকারের শট পোস্টে লাগে। তবে এবার সেখানে গিলের হাতও ছিল। তাই কর্নার পেয়ে যায় এফসি গোয়া। তবে তা কাজে লাগেনি। এর পর ৬৬ মিনিটে নন্ধা কুমারের থেকে বল পেয়ে গোল লক্ষ্য় করে যে শট নিয়েছিলেন সেলিস তা থেকে গোল না পাওয়াটাই অস্বাভাবিক কিন্তু গোয়া গোলের নিচে ঋত্বিক এদিন নিজের সেরাটা দিচ্ছিলেন প্রথম থেকেই, তারই প্রতিফলন দেখা গেল। এফসি গোয়া শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেল ব্যবধান বাড়ানোর। বেশ কয়েকবার ইস্টবেঙ্গল বক্সে রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হল কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ভাগ্য ভাল তা থেকে গোল এল না। জয়ের হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও হারের হ্যাটট্রিক সম্পন্ন করে ফেলল অস্কার ব্রুজোঁর দল।
দিয়ামান্তাকোসকে ফাউল করে শেষ মুহূর্তে সরাসরি লাল কার্ড দেখলেন সাদিকু। যদিও ধারাভাষ্যকরদের দাবি এটা কোনওভাবেই লাল কার্ড হয় না। প্রথম লেগের ম্যাচে ৮১ মিনিটে লাল কার্ড দেখেছিলেন ম্যাক হফ আর ফিরতি লেগে সাদিকু। খেলার ফলও শেষ হল এক গোলের ব্যবধানে। জয় লেখা হল গোয়ার নামে। ১৬ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এল এফসি গোয়া। শীর্ষে থাকা মোহনবাগানের থেকে ছয় পয়েন্ট পিছনে। সম সংখ্যক ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ১১ নম্বরেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। এখান থেকে সুপার সিক্সের আশা অলীক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।
ইস্টবেঙ্গল এফসি: প্রভসুখন সিং গিল, লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের, নিশু কুমার, পিভি বিষ্ণু, নন্ধা কুমার, নাওরেম মহেশ সিং (মার্ক জোথান পুইয়া), জিকসন সিং, ডেভিড লানসাঙ্গা (ক্লেটন সিলভা), রিচার্ড সেলিস (সায়ন বন্দোপাধ্যায়), দিমিত্রিয়স দিয়ামান্তাকোস
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার