সুচরিতা সেন চৌধুরী: ম্যাচের একদিন আগেই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, চাপমুক্ত তাঁর দল। মোহনবাগানের মতো প্রতিপক্ষ, তাদেরই ঘরের মাঠে ডুরান্ড কাপের ফাইনাল খেলতে নামার আগে কেউ এতটা চাপমুক্ত কীভাবে থাকতে পারে। তিনি নর্থইস্ট ইউনাইটেড কোচ হুয়ান পেড্রো। একদিন আগেই বলছিলেন, “আমরা এখানে খেলাটাকে উপভোগ করতে এসেছি। দারুণ শহর, দারুণ সমর্থক আর প্রতিপক্ষ মোহনবাগান।” কিন্ত এই হালকা মেজাজেই যে একটা হারতে থাকা ম্যাচকে এভাবে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেওয়া যায় তা শনিবাসরীয় যুবভারতীতে প্রমান করে দিয়ে গেলেন দার্শনিক কোচ। হ্যাঁ, তাঁর ভিতরে যে দর্শনটা নিয়ে তিনি কোচিং করান তা তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। সব জবাবই আসে দার্শনিকের ঢঙেই। আর এদিন মোহনবাগানকে হারিয়ে নর্থইস্টকে প্রথম ট্রফি দেওয়া কোচ আবেগের চাপে ক্লান্ত। বলছেন, “আজকে একটু ঘুমবো ভাল করে, তার পর কাল থেকে সব ভাবব।”
চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ হোসে মোলিনারও। সঙ্গে হারের যন্ত্রণা। স্বীকার করেই নিলেন ভাল নেই তিনি। বলছিলেন, “ম্যাচ হারের পর ভাল থাকা যায় না। সবাই জিততে চায়। এই মুহূর্তের অনুভূতি, ভাল নেই।” এর সঙ্গেই জুড়ে দিলেন, “কোথায় ভুল হল এই মুহূর্তে তার জবাব দেওয়াটা কঠিন। এমনকি বুঝে ওঠাটাও কঠিন। আমরা প্রথমার্ধ আর দ্বিতীয়ার্ধে একইভাবে খেলতে পারিনি। এই ধারাবাহিকতাটাই দলের মধ্যে আনতে হবে।”
এদিন ডুরান্ড কাপ ফাইনালে ঠিক যেভাবে খেলাটা শুরু করা দরকার ছিল সেভাবেই করেছিল মোহনবাগান। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া। সব মিলে জয় দেখতে পাচ্ছিলেন ফুটবলাররা। কিন্তু এগিয়ে থাকায় হয়তো কিছুটা আত্মতুষ্ট হয়ে পড়েছিলেন, যার প্রভাব পড়ল খেলায়। আর ঠিক তখনই খেলাটা ঘুরিয়ে দিলেন নর্থইস্ট কোচ। ড্রেসিংরুমে কী আলোচনা হয়েছে তা বলবেন না স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন। তবে বলছিলেন, “আমরা প্রথমার্ধেও পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলেছি। সব কিছু নিজের জায়গায় ঠিক ছিল কিন্তু আমরা খেলাটা ধরলাম দ্বিতীয়ার্ধে। এটা আসলে প্লেয়ারদের ভিতরের খিদে। আমরা জানতাম হারার আগে হারব না।”
এর সঙ্গেই তিনি জুড়ে দেন, “এটা একটা ইযং দল। সবাই খুব খেটেছে। আমরা নর্থইস্ট, যাঁরা শেষ পর্যন্ত শিকার খোঁজে। আর তাতেই ফল পরিবর্তন হয়ে যায়। আমাদের ২৬ জন প্লেয়ারকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন পজিশনে খেলাই।” তবে সাহাল, কামিন্স, স্টিওয়ার্ট যে প্রথমার্ধে তাদের খেলাটা তৈরি করতে দেননি সেটাও তিনি মেনে নিলেন। আর সেই সাহালকে তুলে নিয়েই দ্বিতীয়ার্ধে মাঝমাঠটাকে অকেজ করে দিলেন মোলিনা। তবে তিনি কেন সাহালকে তুলে নেন তার জবাবও দিয়েছেন। বলছিলেন, “দিমিত্রিতে সামনে থেকে আক্রমণে আনার জন্যই সাহালকে তুলে নেওয়া।” তার আগেই অবশ্য প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গোল করেছিলেন সাহাল।
এর মধ্যেই আলবার্তোর চোটের জন্য তাঁকে তুলে নিতে হয়। মোলিনা বলছিলেন, “আলড্রেড প্রথমার্ধে ভাল ছিল। প্রথমার্ধের খেলাটাই আমরা দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে পারিনি। আইএসএল-এর আগে কোনও একটা জায়গা নয়, সবটার উন্নতি করতে হবে।” এদিন তিনি খেলা শুরু করেছিলেন ৩-৫-২ ছকেই। বলছেন ফর্মেশন যাই হোক না কেন খেলার গতির সঙ্গে তালমেলাতে হবে আর নিজের কাজ করে যেতে হবে।
এদিন ট্রফি জিতে নর্থইস্ট ইউনাইটেড কোচ পার্দো প্রশংসায় ভরালেন দলের মালিক জন আব্রাহামকে। বলছিলেন, “সব কিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সেরা মালিক।” এদিন মাঠে বসে দলের প্রথম জয় দেখলেন জন আব্রাহাম। এত বছর ধরে হাল ছাড়েননি তিনিও। তার ফল এদিন পেলেন। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মাঠ ছাড়লেন। আজকে হয়তো শান্তির ঘুম ঘুমোবেন তিনিও।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার