অলস্পোর্ট ডেস্ক: আন্তোনিও লোপেজ হাবাস বা হুয়ান ফেরান্দো নন। এ বার মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের দায়িত্ব নিতে চলেছেন আইএসএল খেতাবজয়ী স্প্যানিশ কোচ ফ্রান্সেসকো হোসে মলিনা।
বাংলার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে হোসে মলিনা মোটেই নতুন নাম নয়। কারণ, ২০১৬-য় আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে-র কোচ ছিলেন এই ভদ্রলোকই। গত মরশুমে মোহনবাগানকে প্রথমবারের জন্য লিগশিল্ড খেতাব জেতান হাবাস। ফলে এ বার সবুজ-মেরুন বাহিনীর সামনে আইএসএলে সেই খেতাব ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ তো থাকবেই। সঙ্গে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর গ্রুপ পর্বেও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে কলকাতার দলকে। তাই এ বার মলিনার মতো একজন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কোচকে দল পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে সবুজ-মেরুন বাহিনী।
মলিনার আগমনে মোহনবাগান এসজি-তে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। কেমন হবে সেই যুগ, আরও সাফল্যে ভরপুর, না কি অন্যরকম, তা তো সময়ই বলে দেবে। কিন্তু কেমন কোচ এই হোসে মলিনা, কতটা পরিপূর্ণ তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি, কোচ হিসেবে তাঁর অতীতের খতিয়ান কেমন, তা একবার দেখে নেওয়া যাক। এর আগেও অবশ্য তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, তাঁর সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা আছে অনেকের। কিন্তু সে সবই আট বছর আগের কথা। অনেকেরই স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে বোধহয় সে সব তথ্য হারিয়ে গিয়েছে। তাই আরও একবার তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া যাক সবুজ-মেরুন জনতার।
কে এই হোসে মলিনা?
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ার বাসিন্দা মলিনার ঝুলিতে রয়েছে ফুটবল কোচিংয়ের বহু মূল্যবান অভিজ্ঞতা। ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কেও তাঁর ধারণা মোটেই খারাপ নয়। কারণ, ভারতে তিনি কাজ করেছেন দীর্ঘ সময়। ২০১৬-য় এটিকে-কে চ্যাম্পিয়ন করানোর সময় থেকেই তাঁর সঙ্গে কলকাতা তথা ভারতের যোগাযোগ। ফুটবল জীবনে তিনি ছিলেন গোলকিপার। স্পেনের হয়ে ন’টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে মাঠে নেমেছেন। খেলোয়াড় জীবন শেষ হওয়ার পর চলতি শতকের শুরুর দিকে কোচিংয়ে আসেন তিনি।
কোচিং জীবন
স্পেনের খ্যাতনামা ক্লাব ভিয়ারিয়েলের ‘সি’ দলের কোচ হিসেবে তাঁর কোচিং কেরিয়ার শুরু হয়। তাঁর দল তখন স্প্যানিশ লিগের চতুর্থ ডিভিশনে খেলত। পরে বি দলের দায়িত্বও পান মলিনা এবং অল্প সময়ের জন্য সিনিয়র দলেরও কোচ ছিলেন তিনি। ২০১৬-য় তিনি চলে আসেন ভারতে ও দায়িত্ব নেন এটিকে-র। প্রথম বছরেই তাদের দ্বিতীয় আইএসএল খেতাবও জিততে সাহায্য করেন। এই সাফল্য অর্জন করেই তিনি বুঝিয়ে দেন নতুন ও অচেনা পরিবেশেও তিনি কত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে ও সাফল্য এনে দিতে পারেন। ইউরোপ ও ভারত ছাড়াও মলিনা কোচের দায়িত্ব সামলেছেন হংকং ও মেক্সিকোয়। সম্প্রতি তিনি স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টরের পদে ছিলেন। ২০২২-এ কাতার বিশ্বকাপের মাঝপথেই স্পেন বিদায় নেওয়ার পর তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।
কেমন স্টাইলের ফুটবল পছন্দ মলিনার?
পজেশন ভিত্তিক ফুটবলই বেশি পছন্দ করেন মলিনা। মাঝমাঠে নিজের দলের আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণই চান তিনি। হাবাসের যেমন প্রতি আক্রমণের কৌশলই বেশি পছন্দ ছিল, মলিনা সে রকম নন। তিনি বলের দখল বেশি রেখে ম্যাচে আধিপত্য বজায় রাখার ফুটবলেই বেশি আস্থা রাখেন।
দলকে বেশিরভাগ সময়েই ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেলাতেই ভালবাসেন তিনি। ফলে তাঁর দলের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারদের দক্ষতা ও পারফরম্যান্স যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সেই কারণেই মলিনার প্রশিক্ষণে সহাল আব্দুল সামাদ ও অনিরুদ্ধ থাপা-দের দায়িত্ব অনেক বেড়ে যেতে পারে। এই সিস্টেমে যেমন খেলায় গতি বজায় থাকে, তেমনই বিল্ড-আপের মাধ্যমে প্রচুর গোলের সুযোগ তৈরিও করা যায়।
মলিনার প্রশিক্ষণে মোহনবাগান এসজি-র খেলায় যে আরও মসৃণ গতি আসবে এমনই আশা করতে পারেন সমর্থকেরা। লিস্টন কোলাসো ও মনবীর সিংয়ের মতো গতিময় উইঙ্গার দলে থাকায় তাঁর এই স্টাইলে দলকে খেলাতে সুবিধাই হবে। দু’দিক দিয়ে সাঁড়াশি আক্রমণে তাঁরাই হয়ে উঠতে পারেন মলিনার জোড়া ফলা।
বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষকে সমানে চাপে রাখাই যেখানে মলিনার প্রধান উদ্দেশ্য, সেখানে তাঁর রক্ষণকেও শক্তিশালী, সঙ্ঘবদ্ধ ও ধারাবাহিক হতে হবে, যারা মাঝমাঠে ও আক্রমণে ভরসা জোগাতে পারবে। দলের রক্ষণ যদি ধারাবাহিক ভাবে সজাগ ও দুর্ভেদ্য থাকে, তা হলে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখা আরও সহজ হয়ে ওঠে। মলিনার পছন্দের স্টাইলে এটাই বৈশিষ্ট।
দল অনুয়ায়ী কৌশল
দলের শক্তি-দুর্বলতার সঙ্গে মানানসই কৌশলই অবলম্বন করেন মলিনা। কী ধরনের ফুটবলার তাঁর হাতে আছে, তাঁরা কোন কোন জায়গায় ভাল, তাঁদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, সে সব ভাল করে বুঝে নিয়ে তবেই কৌশল ঠিক করেন তিনি।
যখন এটিকে এফসি-র কোচ ছিলেন, তখন দুই স্ট্রাইকার হেল্দার পস্তিগা ও লেইন হিউমের মধ্যে একটা জুটি তৈরি করে দেন ও তাঁদের সাহায্য করার জন্য ছিলেন সমিঘ দৌতির মতো একজন দক্ষ ও গতিময় উইঙ্গার। মোহনবাগান এসজি-তে মলিনা পাবেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংস ও আরমান্দো সাদিকুর মতো ধারালো অ্যাটাকারদের, যাঁদের দিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কাজটা তিনি ভাল ভাবেই করতে পারবেন।
সুতরাং, গত চার মরশুমের মতো আগামী মরশুমেও মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট যে গতিময় এবং আকর্ষণীয় ফুটবল উপহার দেবে তাদের সমর্থকদের, এমনই আশা করা যেতে পারে। সে জন্য সবাই হোসে মলিনার দিকে তাকিয়ে থাকবে ঠিকই। তবে সবার আগে সবুজ-মেরুন বাহিনীতে কী রদবদল আসে, সেটাই দেখার।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটা