Thursday, December 5, 2024
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলসুনীল ছেত্রী আর সচিন তেন্ডুলকরের মিল কোথায় বলুন তো

সুনীল ছেত্রী আর সচিন তেন্ডুলকরের মিল কোথায় বলুন তো

অলস্পোর্ট ডেস্ক: জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে, সে আলাদা করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই ঠিকই। তবে ভারতীয় ফুটবল কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী ও ক্রিকেটের কিংবদন্তি সচিন তেন্ডুলকর মধ্যে এই একটা ব্যাপারে মিল রয়েছে। দু’জনেরই আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল পাকিস্তানের মাটিতে, সে দেশের বিরুদ্ধে।  

বছরটা ছিল ২০০৫। জুন মাস। কোচ সুখবিন্দর সিংয়ের তত্ত্বাবধানে ভারতীয় ফুটবল দল গেল পাকিস্তানে। কিন্তু দলের সেরা তারকা সেই সফরে গরহাজির। তিনি বাইচুং ভুটিয়া। কোচ সুখবিন্দরের মাথায় তখন একটাই দুশ্চিন্তা, গোল করবে কে? সুখবিন্দর নিজেই স্বীকার করেন সে কথা। বলেছিলেন, “বাইচুংয়ের অনুপস্থিতি আমার কাছে দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছিল। আমরা পাকিস্তান সফরে গিয়েছি। বুঝতেই পারছেন কতটা চাপের মধ্যে ছিলাম। পাকিস্তানে গিয়ে হেরে চলে এলে তার চেয়ে খারাপ ব্যাপার আর কিছুই হতে পারে না। এমন একজন খেলোয়াড় দরকার ছিল, যার গোল করার ক্ষমতা, সাহস এবং গতি, এগুলো সবই আছে”। সুনীল ছেত্রীর মধ্যেই সেই ফুটবলারকে খুঁজে পেয়েছিলেন পঞ্জাবের কোচ। 

তার দু’বছর আগে অনূর্ধ্ব ২০ ভারতীয় দলের হয়ে প্রথম খেলেন সুনীল। জেসিটি-তে সুখবিন্দরের অধীনে খেলেওছিলেন তিনি। তাঁর ওপরই ভরসা রাখতে হয় সুখিকে। কিন্তু তাঁকে নিয়ে সন্দেহ ছিল ভারতীয় কোচের মনে। “ছোটখাটো চেহারা ছেলেটার। বড় চেহারার ডিফেন্ডারদের সঙ্গে কি পেরে উঠবে? এই প্রশ্ন আমার মাথাতেও এসেছিল। তার ওপর ছেলেটার একটা চোটও ছিল”, ওয়েবসাইট ফার্স্টপোস্টকে দেওয়া এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সুখবিন্দর। 

কিন্তু আর কোনও দ্বিধা না করে পরের দিন, ১২ জুন, কোয়েটার আয়ূব স্টেডিয়ামে সুনীল ছেত্রীকে নামিয়েই দেন সুখি। ম্যাচের ৬৫ মিনিটে যা করলেন সুনীল, তার আশা করেছিলেন বটে, কিন্তু ভাবতে পারেননি। প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে বল পেয়েই গোলকিপারের পাশ দিয়ে সোজা জালে জড়িয়ে দেন। পরমুহূর্তেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দল। কিন্তু সেই উল্লাসে সুনীলকে যোগ দিতে দেননি তাঁর সতীর্থরা। কেন? কারণ, তিনি গোল করেই ছুটে গিয়েছিলেন এক হতাশ পাকিস্তানি সমর্থকের কাছে। সেই ‘অপরাধ’-এরই শাস্তি ছিল সেটা। পরে অবশ্য জানা যায় সতীর্থরা মজা করেই এমন কাণ্ড করেছিল সুনীলের সঙ্গে। 

সেই ম্যাচ নিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সুনীল বলেছিলেন, “এখনও ভারতের হয়ে প্রথম ম্যাচটা মনে আছে আমার। পাকিস্তানে গিয়েছিলাম আমরা। সেই দলে আমি আর নবিদা (সৌয়দ রহিম নবি) ছিলাম সবচেয়ে জুনিয়র, একেবারে অনভিজ্ঞ। আমরা জানতাম আমাদের সুযোগ দেওয়া হবে না। তাই বেশ হাল্কা মেজাজেই ছিলাম। কিন্তু সুখি স্যার আমাদের দু’জনকেই খেলিয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচেই গোল দিয়ে সেলিব্রেট করতে সোজা চলে যাই একজন পাকিস্তানি সমর্থকের কাছে”। ২০১৮-য় ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে ভারতের হয়ে শততম ম্যাচ খেলার সময় সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই স্মৃতি রোমন্থন করেন সুনীল। 

পাকিস্তানে সেই ম্যাচে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন সন্মুগম ভেঙ্কটেশ। তিনি সুনীল ছেত্রীর অভিষেকের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, “শুরু থেকেই ওর ধারনাটা খুব স্পষ্ট ছিল। ও কী করতে চায়, তা খুব ভাল বুঝত। অনুশীলনে ওকে দেখে আমার মনে হত, বোধহয় বাইচুং ও বিজয়নের উত্তরসূরী আমরা পেয়ে গিয়েছি। কিন্তু কখনও ওর সামনে এ কথা বলিনি, যাতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী না হয়ে ওঠে”। 

পাকিস্তানে ভারতের জার্সি গায়ে সেই প্রথম ম্যাচের পরে কেটে গিয়েছে ঠিক ১৮ বছর আট দিন। এখন তিনি ভারতীয় ফুটবলের সেরা তারকা এবং অধিনায়ক। বিশ্বের বর্তমান সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলদাতাদের অন্যতম। ভারতের হয়ে একশো গোলের মাইলস্টোন ছুঁতে যাঁর আর ১৩ গোল প্রয়োজন। আবার তিনি মুখোমুখি হতে চলেছেন সেই পাকিস্তানের। যাঁদের বিরুদ্ধে গোলের খাতা খুলেছিলেন ভারতীয় ফুটবল কিংবদন্তি। 

তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, যাদের বিরুদ্ধে জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল করার পর দেশের হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার সন্মান অর্জন করেছেন সুনীল, সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সারা ফুটবলজীবনে আর একটিও গোল নেই তাঁর! অভিষেক সফরে তিনটি ম্যাচের পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আরও তিনটি ম্যাচ খেলেছেন সুনীল। প্রথমটি, ২০০৮-এর ৫ জুন, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে যে ম্যাচে ভারত ২-১-এ জিতলেও সুনীল কোনও গোল পাননি। দ্বিতীয়টি, ২০১১-র ২৩ মার্চ, এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের বাছাই পর্বে। সেই ম্যাচেও ভারত ৩-১-এ জেতে। তৃতীয়টি, ২০১৩-র ১ সেপ্টেম্বর, ফের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। এ বারও ভারত ১-০-য় জেতে। কিন্তু সুনীলের গোল ছাড়াই। 

এখন যে রকম ধারাবাহিক ফর্মে রয়েছেন ভারতের সেরা ফুটবল তারকা, তাতে এ বার নিশ্চয়ই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অন্তত একটি গোল তিনি করবেন। কে বলতে পারে এটাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর শেষ ম্যাচ কি না? তাই যদি হয়, তা হলে প্রথম ম্যাচের মতো শেষ ম্যাচেও একটি গোল করাই উচিত সুনীলের। তাঁর ভক্তরা সেই আশা নিয়েই স্টেডিয়ামে যাবেন অথবা টিভি, মোবাইল, কম্পিউটরের সামনে বসবেন।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments