Sunday, November 16, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলমানোলো স্যার, নাচতে না জানলে ভারতীয় ফুটবল দলের উঠোন বাঁকাই লাগে

মানোলো স্যার, নাচতে না জানলে ভারতীয় ফুটবল দলের উঠোন বাঁকাই লাগে

মুনাল চট্টোপাধ্যায়:‌ হতভাগ্য ভারতীয় ফুটবল!‌ তাদের কপালে মানোলো মারকোয়োজের মতো একজন পার্টটাইম কোচ জুটেছিল। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ের মতো, তিনি এতদিন পরে বুঝলেন, সাফল্য পাওয়ার মতো দল তাঁর হাতে ছিল না। মানোলো স্যার, নাচতে না জানলে, ভারতীয় ফুটবল দলের উঠোন বাঁকাই লাগে। দেড় বছর ধরে ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে থেকে নিজের জীবনপঞ্জীতে একটা বাড়তি প্রাপ্তি জুড়ে নিয়ে সুনীলদের ডুবিয়ে ফিরে গেছেন এফসি গোয়ার নিশ্চিত আশ্রয়ে। যেখানে হার জিত , সাফল্য ব্যর্থতা বিশেষ কোনও দাগ কাটে না। আইএসএল এমন একটা লিগ যেখানে এখনও ফেডারেশন অবনমন চালুই করতে পারেনি এফএসডিএলের ওপর জোর খাটিয়ে।

জাতীয় সিনিয়র দলের দায়িত্ব নেওআর পর থেকে ৮ ম্যাচ খেলে ১টার বেশিতে জয় ছিল মানোলো মারকোয়েজের। তাও সেটা আবার আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে দুর্বল মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। কেউ যদি দু’‌নৌকায় পা দিয়ে চলে, তাহলে তো ডুবতেই হবে। এখানে মানোলো যত না ডুবেছেন, তার থেকে বেশি ডুবিয়েছেন ভারতীয় দলকে। এশিয়ান কাপে কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র করার পর থেকেই নানা অজুহাত দেওয়া শুরু হয়েছিল মানোলোর। বলেছিলেন, এটাই ভারতীয় ফুটবলের আসল চেহারা। এর থেকে ভাল কিছু হওয়ার নয়। তাই যদি হয়, তাহলে দায়িত্ব নিতে কে জোর করেছিল?‌ তখনই তো জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করা উচিত হয়নি তাঁর।

তা না করে ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার লোভে দায়িত্ব নিয়ে ফেললেন। তারপর কিছুদিনের মধ্যে ফোকাস হারিয়ে ফেললেন আইএসএলে এফসি গোয়ার কোচের দায়িত্ব সমানভাবে সামলাতে গিয়ে। কিন্তু তাল রাখতে না পারলে যা হয়। ভারতীয় দল ডুবল। আরও কাল হল, এফসি গোয়া সুপার কাপ চ্যাম্পিয়ন হতে। মানোলোর মাথায় ঢুকে গেল, এফসি গোয়ার কোচ হিসেবে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টায়ার টু-‌র প্লেঅফ খেললে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে আরও চেনানো যাবে। হয়ত পরের মরশুমে বিদেশের কোনও ক্লাবে যাওয়ার রাস্তাও প্রশস্ত হবে।

আর সেটা মাথায় রেখেই ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে হংকং ম্যাচ খেলতে যাওয়ার আগে থেকেই বলা শুরু করলেন, ফল যাই হোক, তিনি আর ভারতের কোচ থাকছেন না। তাঁকে যেন ফেডারেশন অব্যহতি দেয়। যুদ্ধে যাওয়ার আগে কোনও সেনাপতি যদি নিজেই তাঁর অস্ত্র নামিয়ে রাখেন, তাহলে তাঁর সৈন্যরা যুদ্ধ করার ফোকাস ও মনোবল যে হারাবে, সেটাই স্বাভাবিক। ফল, হংকং ম্যাচে হার, এশিয়ান কাপের মূল পর্বে ভারতের যাওয়া শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব মনে হচ্ছে।

হংকং ম্যাচে ভারতীয় দলকে ডুবিয়ে যথারীতি রণে ভঙ্গ দিলেন মানোলো। ফেডারশনের সঙ্গে সমঝোতায় এসে চুক্তি ছিন্ন করে এফসি গোয়ার কোচের ভুমিকায় ফিরে গেছেন। তারপরই নিজের ব্যর্থতার দায় ঢাকতে বলছেন, তিনি সঠিক গ্রুপ হাতে পাননি। ফুটবলারদের মাঝে জাতীয় দলে খেলার জন্য যে গর্ব থাকা উচিত ছিল, মাঠে নেমে নিজেদের উজাড় করে দেওয়া প্রচেষ্টা দেখানো দরকার ছিল, তাঁদের মধ্যে সেটা দেখেননি। নাচতে না জানলে, মানোলো স্যার, উঠোন বাঁকাই হয়।

সুনীল ছেত্রীকে অবসর ভাঙিয়ে এনে শুধু যে ভারতীয় ফুটবল দলের আইকনের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন তাই নয়, ভারতীয় ফুটবলকেই কয়েক কদম পিছিয়ে দিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের ওপর ভারসা না রাখতে পেরে। সেই অক্ষমতা ঢাকতে মানোলোর যুক্তি, ‘‌সুনীলকে ডাকা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না। আইএসএলে সুনীলের গোল করার ক্ষমতা ও খিদে ভারতীয় দলে ফিরিয়েছিলাম। সুনীল যদি বাংলাদেশ ম্যাচে গোল পেত, তাহলে সকলে বলত সঠিক সিদ্ধান্ত। পারেনি বলেই সুনীলকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এত কথা হচ্ছে। এখনও মনে করি, ভারতীয় স্ট্রাইকিং লাইনে সুনীলের কোনও বিকল্প নেই।’‌ এই তো মানোলোর আত্মবিশ্বাস, দেড়বছর সময় পেয়েও, ভারতীয় দলে একজন গোল করার লোক তৈরি করে নিতে পারেননি। স্রেফ নিজেদের ভাঁড়ে মা ভবানী হওয়াতে এফসি গোয়ার টাকায় মানোলোর মতো একজনকে জাতীয় দলের কোচ হিসেবে গিলেছিল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। তার খেসারত দিতে হল।

কল্যান চৌবের সভপতি থাকার জমানায় ফেডারেশন নিজেকে দিনের পর দিন হাস্যকর পর্যায়ে নিজে গেছে। জাতীয় কোচ নির্বাচনে অযোগ্যতার খেসারত দিয়ে সুনীলদের ২০২৭ সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলা অনিশ্চিত করে তুলেছে। অক্টোবরে সিঙ্গাপুরের কাছে হার মানে ভারতীয় দলের আশা কার্যত শেষ। তারপর আইএসএল সময়মতো আয়োজনে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় ক্লাব ফুটবলকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

তার থেকেও বড় থাপ্পর খেয়েছে আন্তর্জাতিক ফুটবল আইনের দরবারে। কোর্ট অফ আর্ব্রিটেশন অফ স্পোর্টস(‌ক্যাস)‌ এআইএফএফের চার্চিলকে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণার পর ঘটা করে ট্রফি দেওয়ার সিদ্ধান্ত উল্টে দিয়ে ইন্টার কাশীর পক্ষে রায় দিয়ে ট্রফি তাদের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এতে অপমানিত বোধ করেছেন কল্যানের লিগ আপিল ও শৃঙ্খলাকারী কমিটির দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান ও সদস্যার। তাঁরা তো কোনওরক রাখঢাক না করেই কল্যানের দিকে আঙুল তুলে বলেছেন, তাঁর অবিবেচক ভাবনা চিন্তার জন্যই ফেডারেশনকে অপদস্থ হতে হল। শুধু সিদ্ধান্তের বদল ঘটাতেই হল তাই নয়, আর্থিক খেলারত দিতে হচ্ছে ক্যাসের রায়ে।

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments