Wednesday, January 22, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeআইএসএলআবার হার মহমেডানের, তিন ম্যাচ পর জয়ে ফিরল জামশেদপুর এফসি

আবার হার মহমেডানের, তিন ম্যাচ পর জয়ে ফিরল জামশেদপুর এফসি

অলস্পোর্ট ডেস্ক: ইস্পাতনগরীতে গিয়ে আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারল না মহমেডান এসসি। জামশেদপুর এফসি তিন ম্যাচে হারের মুখ দেখার পর জয়ে ফিরল কলকাতার সাদা-কালো বাহিনীকে ৩-১-এ হারিয়ে। চলতি লিগে এটি পাঁচ নম্বর জয় ভারতীয় কোচ খালেদ জামিলের প্রশিক্ষণাধীন দলের। এই জয়ের ফলে নয় ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তারা উঠে এল লিগ টেবলের সাত নম্বরে। তিন থেকে সাত নম্বরে থাকা প্রত্যেক দলেরই সংগ্রহ এখন ১৫ পয়েন্ট করে। নয় ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে মহমেডান রয়ে গেল ১২ নম্বরেই।

এ দিন প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র আট মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি গোল করে জামশেদপুর এফসি-কে জয়ের দিকে এগিয়ে দেন যথাক্রমে তরুণ ফরোয়ার্ড মহম্মদ সনন (৫৩ মিনিট) ও হাভিয়ে সিভেরিও (৬১)। ৭৯ মিনিটের মাথায় ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন তাদের নাইজেরিয়ান ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে মোহনবাগানকে সান্ত্বনা গোল এনে দেন মহম্মদ ইরশাদ। শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি থেকে ব্যবধান আরও কমানোর সুযোগ পেয়েছিলেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড কার্লোস ফ্রাঙ্কা। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। এই নিয়ে টানা পাঁচটি ম্যাচে জয়হীন থাকল মহমেডান এসসি।

এ দিন প্রথমার্ধে দুই দলই ঝুঁকিহীন ফুটবল খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে জামশেদপুরই আধিপত্য বিস্তার করে এবং ঘন ঘন আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। মহমেডানও এ দিন একাধিক আক্রমণ করলেও বরাবরের মতো বেশিরভাগ গোলের সুযোগই হাতছাড়া করে। ম্যাচে তাদেরই দখলে বেশিরভাগ বল থাকলেও আক্রমণে জামশেদপুরই ছিল এগিয়ে। সারা ম্যাচে তারা ১৭টির মধ্যে ন’টি শট গোলে রাখে তারা। মহমেডানের ১২টির মধ্যে পাঁচটি শট ছিল লক্ষ্যে।

এ দিন দলে দু’টি পরিবর্তন করে প্রথম এগারো নামান মহমেডান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ। লালরিনফেলার জায়গায় অমরজিৎ সিং কিয়াম ও মির্জালল কাসিমভের জায়গায় মকান চোঠে শুরু থেকে খেলেন। চেনা ৪-৩-৩ ছকেই দল সাজায় মহমেডান। অন্য দিকে জামশেদপুর প্রথম এগারোয় পাঁচটি পরিবর্তন করে খেলে এদিন।

ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহমেডানের বল পজেশন বেশি থাকলেও আক্রমণে জামশেদপুরের ধারই ছিল বেশি। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে মহম্মদ সনন ও হাভিয়ে হার্নান্ডেজের দূরপাল্লার শট সেভ করেন গোলকিপার ভাস্কর রায়। ২৩ মিনিটের মাথায় স্টিফেন এজের হেডও রুখে দেন ভাস্কর।

মহমেডান এসসি-র প্রথম গোলে শট ছিল ২৬ মিনিটের মাথায়, যখন বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন লালরেমসাঙ্গা। কিন্তু সেই শট আটকান গোলকিপার আলবিনো গোমস্। প্রথমার্ধে দুই দলেরই রক্ষণে যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যায়। কোনও পক্ষের মধ্যেই অল আউট আক্রমণে গিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়নি। প্রথম আধঘণ্টায় কোনও দলই প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে সহজ গোলের সুযোগ তৈরি করতে পারেনি।

কাসিমভের অনুপস্থিতির কারণে এ দিন মহমেডানের আক্রমণে তেমন ধার দেখা যায়নি। কার্লোস ফ্রাঙ্কা, সিজার মানজোকিদের গোলের ভাল পাসও বাড়াতে পারেননি কেউ। ড্রিঙ্কসের পরেই গৌরব বোরা মাথায় চোট পাওয়ায় মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁর জায়গায় নামেন ঘানাইয়ান ডিফেন্ডার জোসেফ আজেই। যিনি মহমেডানের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০ অক্টোবর, কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। চোটের জন্য দলের তিনটি ম্যাচে অনুপস্থিতি থাকার পর এ দিন নামেন।

তবে আজেই মাঠে আসার পরেই প্রথমার্ধের সহজতম সুযোগটি পায় জামশেদপুর। বাঁ দিক থেকে কর্নার কিকে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে বল পান স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড হাভিয়ে সিভেরিও, যিনি হেড করে বল পাঠান ছ’গজের বক্সের সামনে স্টিফেন এজের কাছে। প্রায় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গোলে শট নেন তিনি, কিন্তু তা বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। প্রথমার্ধের সাদামাটা, গোলহীন ফুটবলে দুই দলই দু’টি করে শট গোলে রাখে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আক্রমণে ওঠে মহমেডান। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পরপর দু’বার বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে গোলের সামনে মাপা ক্রস বাড়ান ফ্রাঙ্কা। কিন্তু কোনওবারই তাঁর ক্রস থেকে গোল করতে পারেননি তাঁর সতীর্থ মানজোকি ও আদিঙ্গা। ৫৫ মিনিটের মাথায় তাই ফের বক্সে ঢুকে নিজেই গোলের চেষ্টা করেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড। কিন্তু তিনি প্রবল বাধা পাওয়ায় গোলে শট নেওয়ার আগে ভারসাম্য হারান।

ফ্রাঙ্কার এই তৎপরতার মধ্যেই কাজের কাজটি করে নেয় জামশেদপুর এফসি। ৫৩ মিনিটের মাথায় অসাধারণ গোল করে দলকে এগিয়ে দেন মহম্মদ সনন। রেই তাচিকাওয়ার ফরোয়ার্ড পাস থেকে বল পান তিনি। বাঁদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি লম্বা শট নেন দ্বিতীয় পোস্টের দিকে এবং তা গোলের ডানদিকের কোণ দিয়ে ঢুকে পড়ে গোলে (১-০)। তাঁর সামনে জুডিকা থাকলেও তাঁকে আটকাতে পারেননি।

এই গোলের মিনিট পাঁচেক পরেই সমতা আনার সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান মকান চোঠে। মানজোকির হেড থেকে বল পেয়ে তিনি ছ’গজের বক্সের সামনে পৌঁছেও যান। কিন্তু গোলকিপার এগিয়ে আসায় বারের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দেন।

এতগুলি গোলের সুযোগ নষ্ট করার মাশুল ফের দিতে হয় মহমেডানকে, যখন কর্নার থেকে বক্সে আসা বল ফের গোলে পাঠিয়ে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেন হাভিয়ে সিভেরিও। ৬১ মিনিটের মাথায় কর্নার কিকে উড়ে আসা বলে গোলমুখী হেড করেন হার্নান্ডেজ, যা রোখেন ভাস্কর। কিন্তু তাঁর হাত থেকে ছিটকে আসা বল গোলে ঠেলে দেন সিভেরিও (২-০)।

দ্বিতীয় গোলের পরই আক্রমণের ঝড় তোলে জামশেদপুর এফসি। ৬৬ মিনিটের মাথায় কর্নারের পর ছ’গজের বক্সের মধ্যে থেকে গোলে বল ঠেলতে পারেননি স্টিফেন এজে। একের পর এক আক্রমণে তারা কোণঠাসা করে দেয় কলকাতার দলকে। ম্যাচের ৭৯ মিনিটের মাথায় ফের গোল করে জয় সুনিশ্চিত করেন এজে।

ডান দিক থেকে তাচিকাওয়ার কর্নার প্রথমে হেড করে দ্বিতীয় পোস্টের সামনে পাঠান পরিবর্ত হিসেবে নামা লাজার সিরকোভিচ। সেখান থেকে গোলের সামনে বল পাঠান আর এক পরিবর্ত শুভম সারেঙ্গি, যা এ বার গোলের সামনে থেকে জালে জড়াতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি এজে (৩-০)।

তৃতীয় গোলের সুযোগ অবশ্য এজের গোলের মিনিট দুয়েক আগেই পেয়ে যান সেমিনলেন দুঙ্গেল, যখন তিনি ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে পড়েন ভাস্করের সামনে। তিনি শট নিলেও তা দুর্দান্ত সেভ করেন মহমেডানের গোলকিপার।

তিন গোলে পিছিয়ে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না কলকাতার দলের। তবু ম্যাচের শেষ দিকে চেষ্টা চালিয়ে যান ফ্রাঙ্কা, মানজোকিরা। ৮৬ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে গোলে শট নেন ফ্রাঙ্কা, যা ব্লক করেন এক ডিফেন্ডার। পরের মিনিটেই বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় তারা এবং আদিঙ্গার নেওয়া মাপা ফ্রিকিক থেকেই ব্যবধান কমান মহম্মদ ইরশাদ। বলের গতি নিখুঁত অনুসরণ করে গোলের সামনে গিয়ে হেড করে বল গোলে প্রবেশ করান তিনি (৩-১)।

এর পরে প্রায় একই জায়গা থেকে আরও একটি ফ্রি কিক পায় মহমেডান। কিন্তু এ বার সফল হয়নি তারা। সংযুক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে মানজোকি পেনাল্টি আদায় করায় মহমেডান ব্যবধান আরও কমানোর সুযোগ পায়। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে সোজাসুজি স্পট কিক মারেন ফ্রাঙ্কা, যা আটকে দেন পেনাল্টি বিশেষজ্ঞ গোলকিপার আলবিনো। এই নিয়ে আইএসএলে ষষ্ঠ পেনাল্টি সেভ করেন তিনি, যা লিগে সর্বোচ্চ। এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মানজোকিও।

মহমেডান এসসি দল (৪-৩-৩): ভাস্কর রায় (গোল), জুডিকা, গৌরব বোরা (জোসেফ আজেই -৩৮), ফ্লোরেন্ট অগিয়ে (সামাদ আলি মল্লিক-৮৬), আদিঙ্গা, অমরজিৎ সিং কিয়াম (বিকাশ সিং-৬৪), মহম্মদ ইরশাদ, মকান চোঠে (ওয়াহেংবাম লুয়াং-৬৪), লালরেমসাঙ্গা ফানাই, সিজার মানজোকি, কার্লোস ফ্রাঙ্কা।

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments