অলস্পোর্ট ডেস্ক: সারা ম্যাচে অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসা তিন পয়েন্ট খোয়াতে হল মহমেডান স্পোর্টিংকে। শনিবার কলকাতার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে প্রায় ৯০ মিনিট দাপুটে ফুটবল খেলে সদ্য ইন্ডিয়ান সুপার লিগের গ্রহে প্রবেশ করা কলকাতার সাদা-কালো বাহিনী। ৬৬ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে পাওয়া অ্যালেক্সি গোমেজের গোলে জয়ের দোরগোড়ায়ও পৌঁছে যায় তারা। কিন্তু গত ম্যাচের মতো প্রতিপক্ষের স্টপেজ টাইমের গোলে ১-১ ড্র করে তিন পয়েন্টের জায়গায় এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা।
ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড কার্লোস ফ্রাঙ্কা ও আর্জেন্টাইন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অ্যালেক্সি গোমেজের যুগলবন্দিতে এ দিন হিমশিম খেয়ে যায় জাতীয় কোচ মানোলো মার্কেজের দল এফসি গোয়া। তাদের মাঝমাঠ ও আক্রমণ বিভাগকে কার্যত অচল করে দিয়ে আক্রমণের ঝড় তোলেন দুই লাতিন ফুটবলার। পরিসংখ্যান বলছে, গোয়ার বক্সে এ দিন ৩১ বার বলে পা লাগায় মহমেডান। তাদের বক্সে গোয়ার ফুটবলারদের দশ বারের বেশি বলে পা লাগাতেই দেয়নি কলকাতার দল। ১৭টি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। ফ্রাঙ্কা ও গোমেজ তিনটি করে গোলের সুযোগ তৈরি করেন। মোট ন’টি শট নেন ফ্রাঙ্কা, যার মধ্যে চারটি ছিল লক্ষ্যে। গোমেজের চারটি শটের মধ্যে দু’টি ছিল বার ও পোস্টের মধ্যে।
সারা ম্যাচে যেখানে ২২টি শটের মধ্যে সাতটি গোলে রাখে কলকাতার দল, সেখানে গোয়ার মোট এগারোটি শটের মধ্যে চারটি ছিল লক্ষ্যে। তাও তাদের তিনটি শট লক্ষ্যে ছিল ম্যাচের শেষ কুড়ি মিনিটে। ম্যাচের বাকি সময়টা বেশিরভাগই নিজেদের গোল বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিলেন এফসি গোয়ার ফুটবলাররা। অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য সেরা ফুটবলারের খেতাব জিতে নেন ফ্রাঙ্কা। কিন্তু ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে মহমেডান কোচ আন্দ্রেই চেরনিশভ দুই লাতিন ফুটবলারকে তুলে নেওয়ার পরই এফসি গোয়ার পাল্টা আক্রমণে চাপে পড়ে মহমেডান এবং গোল খেয়ে প্রায় নিশ্চিত দুই পয়েন্ট হাতছাড়া করে।
গত ম্যাচের প্রথম এগারোয় একটি পরিবর্তন করে এ দিন দল নামায় মহমেডান এসসি। সেন্ট্রাল আফ্রিকার ফরোয়ার্ড সিজার মানজোকির জায়গায় খেলেন ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড কার্লোস ফ্রাঙ্কাকে। প্রথম দলে তিনটি পরিবর্তন আনে এফসি গোয়া।
ফ্রাঙ্কা প্রথম দলে আসায় মহমেডানকে গত ম্যাচের চেয়েও ভয়ঙ্কর লাগে। শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে তারা। ১৫ মিনিটের মধ্যই দু’টি গোলের সুযোগ পান ফ্রাঙ্কা। কিন্তু গোয়ার গোলকিপার কাট্টিমণির তৎপরতায় দু’বারই বেঁচে যায় মার্কেজের দল।
একেবারে শুরুর মিনিট পাঁচেক আক্রমণে ঝড় তুললেও ক্রমশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় মহমেডান। গত ম্যাচে সবচেয়ে ভাল পারফরম্যান্স দেখানো আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার অ্যালেক্সি গোমেজ, উজবেক মিডফিল্ডার মির্জালল কাসিমভ ও ফ্রাঙ্কার ত্রয়ী একাধিকবার গোয়ার রক্ষণকে বিপদে ফেলে। তাদের একাধিক আক্রমণ হয় ডানদিক দিয়ে। দুই ডিফেন্ডার জয় গুপ্তা ও নিম দোরজি তাদের সামলাতে হিমশিম খেয়ে যান।
ম্যাচের ২৫তম মিনিটে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন ফ্রাঙ্কা। ডানদিক দিয়ে বক্সে ঢুকে তিনি যে চিপ করেন, তা গোলকিপারের হাতে লেগে বারে ধাক্কা খায়। সামনে নিম থাকলেও তাঁকে আটকাতে পারেননি। ২৮ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে গোলে যে শট নেন ফ্রাঙ্কা, তাও আটকে দেন কাট্টিমণি।
প্রথমার্ধের শেষ দিকে চোট পান কাসিমভ। তার ঠিক আগেই বক্সের মধ্যে পিছন থেকে বাধা দিয়ে মহমেডান অধিনায়ক আদিঙ্গাকে ফেলে দেন উদান্ত সিং। পেনাল্টির আবেদন হলেও তা মঞ্জুর করেননি রেফারি। হতাশ এফসি গোয়ার ফুটবলাররা বারবার ফাউল করেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের। প্রথমার্ধেই মোট আটটি ফাউল করেন উদান্তরা। ম্যাচের শেষে ফাউলের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫। প্রথমার্ধের শেষ দিকে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া গোমেজের ডিরেক্ট ফ্রিকিক গোলে ঢোকার মুখে আটকান গোলকিপার।
প্রথমার্ধে মহমেডান এসসি যতগুলি শট গোলে রাখে (৪), এফসি গোয়ার মোট শটের সংখ্যাও (২) তত ছিল না। প্রথম ৪৫ মিনিটে মোট ১১টি শট নেন, ফ্রাঙ্কা, গোমেজরা। সাদিকুদের একটিমাত্র শট গোলে ছিল। এই পরিসংখ্যানেই মহমেডানের দাপটের ইঙ্গিতছিল স্পষ্ট।
দ্বিতীয়ার্ধেও ছবিটা পরিবর্তন হয়নি। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে পাওয়া যায় কলকাতার দলকে। ৪৯ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্রাঙ্কার গোলমুখী শট ফের সেভ করেন কাট্টিমণি। ৫২ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ওঠা মকান চোঠের ক্রসে গোলের সামনে থেকে ফ্রাঙ্কা বল ঠেললেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মহমেডানের আক্রমণের সামনে এফসি গোয়ার রক্ষণকে অসহায় লাগছিল।
প্রতিপক্ষের আক্রমণ আটকানোর জন্য বারবার প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের শারীরিক ভাবে বাধা দিচ্ছিলেন গোয়ার ডিফেন্ডাররা। ৬৫ মিনিটের মাথায় সেভাবেই নিজেদের বক্সের মধ্যে গোলমুখী ফ্রাঙ্কাকে টেনে ফেলে দেন অধিনায়ক ওদেই ওনাইন্দিয়া। রেফারি অবধারিত ভাবে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি অ্যালেক্সি গোমেজ (১-০)। এই গোলের পরেই ওদেইকে তুলে নেয় গোয়া, নামায় কার্ল ম্যাকহিউকে।
এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যবধান বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যায় মহমেডান। ৭২ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে গোল লাইনের সামনে যে সুযোগ পান ফ্রাঙ্কা, অবিশ্বাস্য ভাবে তা হাতছাড়া করেন তিনি। নীচু হয়ে আসা বল গোলকিপারের হাতে তুলে দেন। এর তিন মিনিট আগে অমরজিৎ সিং কিয়ামের জায়গায় আসা মিডফিল্ডার লালরিনফেলা বা মাফেলাও গোলের সামনে থেকে নেওয়া শট বাইরে পাঠান।
ম্যাচের বয়স ৭০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর থেকে নড়েচড়ে বসে এফসি গোয়া এবং তাদের আক্রমণের ধার ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। কিন্তু তাদের আক্রমণ মূলত বোরহা হেরেরা-কেন্দ্রিক ছিল। ৭৫ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে সোজা গোলে শট নেন বোরহা, যা অসাধারণ সেভ করেন মহমেডানের গোলকিপার পদম ছেত্রী। ৮৫ মিনিটের মাথায় সার্বিয়ান মিডিও দেজান দ্রাজিচ বক্সের মাথা থেকে গোলে জোরালো শট নেন। অসাধারণ সেভ করেন ছেত্রী।
নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার চার মিনিট আগে গোমেজ ও ফ্রাঙ্কাকে তুলে নেন মহমেডান কোচ চেরনিশভ। নামান মানজোকিকে, যাতে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বজায় রাখতে পারেন তাঁরা। গত ম্যাচে স্টপেজ টাইমেই গোল খেয়েছিল মহমেডান। সেই একই ভুল এই ম্যাচেও হয়।
ছ’মিনিটের স্টপেজ টাইমে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয় গোয়ার দল এবং স্টপেজ টাইমের চতুর্থ মিনিটের মাথায় সমতা এনে ফেলেন আরমান্দো সাদিকু। বাঁ দিকের উইং থেকে আকাশ সাঙ্গওয়ানের সেন্টার গোলের সামনে থেকে হেড করে তা জালে জড়িয়ে দেন সাদিকু (১-১)। তাঁর সামনে জোসেফ আজেই থাকলেও তিনি সাদিকুকে আটকাতে ব্যর্থ হন।
মহমেডান এসসি দল (৪-৩-৩): পদম ছেত্রী (গোল), জোডিংলিয়ানা রালতে আদিঙ্গা (অ), গৌরব বোরা, জোসেফ আজেই, জুডিকা, অ্যালেক্সি গোমেজ (আঙ্গুসানা-৮৭), মিরজালল কাসিমভ, অমরজিৎ সিং কিয়াম (লালরিনফেলা-৬৯), মাকান চোঠে (বিকাশ সিং-৫৯), কার্লোস ফ্রাঙ্কা (সিজার মানজোকি-৮৭), লালরেমসাঙ্গা ফানাই।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার