মোহনবাগান ২ (দিমিত্রি পেত্রাতোস, অনিরুদ্ধ থাপা)
বেঙ্গালুরু ২ (সুনীল ছেত্রী, ভিনিথ ভেঙ্কটেশ)
টাইব্রেকার:
মোহনবাগান ৪ (জেসন কামিন্স, মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রি পেত্রাতোস, গ্রেগ স্টিওয়ার্ট -মিস)
বেঙ্গালুরু ৩ (এডগার অ্যান্তোনিও, রাহুল ভেকে, পেড্রো লুইস, হোলিচরণ নার্জারি-মিস, আলেকজান্ডার জোয়ানোভিচ-মিস)
সুচরিতা সেন চৌধুরী: ডার্বির স্বাদ সেমিফাইনালে মিটল মোহনবাগান জনতার। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে একযোগে হয়তো প্রতিবাদ করা হল না কিন্তু ম্যাচ শেষে যে টিফো নেমে এল সেখানে কিন্তু থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। যেখানে লেখা ছিল “হাতে হাত রেখে এ লড়াই, আমাদের বোনের বিচার চাই।” আর সেই টিফোতে মোহনবাগানের সঙ্গে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গলকেও। আগে টিফোতে ‘না’ ঘোষণা করার পর ম্যাচ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে উচ্চ আদালত রায় দেয় টিফো নিয়ে মাঠে ঢুকতে কোনও বাধা নেই। আর বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ ২০২৪-এর ফাইনালে পৌঁছতেই গ্যালারি থেকে “জাস্টিস ফর আরজি কর” ধ্বনী উঠল। হাজার ২০-এর মোহনবাগান গ্যালারি এদিন যেন ছিল প্রতিবাদের মঞ্চে তিন প্রধানের মুখপাত্র।
এবার ফিরে আসি ম্যাচে। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে শেষ করে টাইব্রেকারে নিয়ে যায় মোহনবাগান।এবং শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ২-২ (৪-৩) গোলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে নর্থইস্ট ইউনাইটেডের মুখোমুখি মোহনবাগান। এবারও গোলের নিচে অপ্রতিরোধ্য হযে ওঠেন বিশাই কাইথ।
মঙ্গলবার প্রথমার্ধ ছিল বেঙ্গালুরুরই। গোল হজমের পর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিল মোহনবাগান কিন্তু প্রথমার্ধ পিছিয়ে থেকেই শেষ করে। এদিন শুরুতেই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল বেঙ্গালুরু। ম্যাচের বয়স তখন ১২ মিনিট। বেঙ্গালুরুর আলেকজান্ডার ফাঁকায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন মোহনবাগান বক্সে। শেষ মুহূর্তে আলবার্তো ক্লিয়ার করলেও সেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন সুনীল ছেত্রী। কিন্তু ফাঁকা গোলে বল রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। তবে পেনাল্টি থেকে গোল করে সেই ভুল শুধরে নিলেন তিনি।
৪১ মিনিটে বক্সের মধ্যে ভিনিথকে ফাউল করে বেঙ্গালুরুকে পেনাল্টি পাইয়ে দিয়েছিলেন লিস্টন কোলাসো। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি সুনীল। যদিও পুরো ম্যাচে বেশ অফকালারই দেখাল তাঁকে। বরং নজর কাড়লেন বেঙ্গালুরুর জুনিয়র দল থেকে উঠে আসা ভিনিথ বেঙ্কটেশ। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে যেমন পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন তেমমনই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল করতে দলের হয়ে ব্যবধানও বাড়ালেন এই ছেলে।
তার আগে অবশ্য প্রথমার্ধের শেষে গোল হজম করে কিছুটা লড়াইয়ে ফিরে আসার অদম্য চেষ্টা চালিয়েছিল মোহনবাগান। কখনও পোস্ট তো কখনও গুরপ্রীত সিং সান্ধু মোহনবাগান আর গোলের মাঝে দেওয়াল তৈরি করল। ম্যাচের ৪৫ মিনিটে প্রথমে লিস্টন কোলাসোর শট পোস্টে লেগে গুরপ্রীতের গায়ে লেগে বাইরে গেলে কর্নার পায় মোহনবাগান। দিমিত্রির কর্নার থেকে কামিন্সের শট আবার পোস্টে লেগে বাইরে যায়। দ্বিতীয়ার্ধে আবারও আলবার্তোর হেড পোস্টে লেগে ফেরে।
এর মধ্যেই দ্বিতীয় গোল তুলে নেয় বেঙ্গালুরু। মোহনবাগানের একটা ছোট্ট ভুল ব্যাকপাস থেকে ভিনিথের ফিনিশ। গোল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন বিশাল কাইথ। এর পরও সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। ঠিক যতটা এদিন সবুজ-মেরুনের রক্ষণের ফাঁকফোকরগুলো বেরিয়ে এল ততটাই দেখা গেল ফিনিশারের অভাব। কোয়ার্টার ফাইনালে পঞ্জাব এফসিকে হারাতে সাডেন ডেথ পর্যন্ত যেতে হয়েছিল মোহনবাগানকে।
এদিন দুরন্ত কামব্যাক করেও নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ করা সম্ভব হল না। ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া দলটা ৮৪ মিনিটে ২-২ করে ফেলল। ৬৭ মিনিটে মনবীরকে ফাউল করে মোহনবাগানকে পেনাল্টি পাইয়ে দিলেন পূজারী। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি দিমিত্রি পেত্রাতোস। এর পর ৮৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে অনিরুদ্ধ থাপার দুরন্ত দূরপাল্লার শট, যার নাগাল পেলেন না গুরপ্রীত। কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জটলার মধ্যে থেকে ক্লিয়ার হয়ে পৌঁছে গিয়েছিল থাপার কাছে। সেই চলতি বলেই তাঁর জোড়াল শট চলে যায় গোলে। এদিন এই মরসুমে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলেন থাপা। আর ম্যাচ পৌঁছে গেল টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে আবারও বাজিমাত মোহনবাগানের।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আলবার্তো রডরিগেজ, থমাস আলড্রেড (আশিস রাই), শুভাশিস বসু (দীপেন্দু বিশ্বাস), মনবীর সিং, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আব্দুল সামাদ (গ্রেগ স্টিওয়াার্ট), লালেংমাউইযা রালতে (অভিষেক সূর্যবংশী), লিস্টন কোলাসো, জেসন কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোস
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার