সুচরিতা সেন চৌধুরী: ঘড়ির কাটা তখন ৭৩ মিনিটের ঘর পেরিয়ে কয়েক সেকেন্ডেই পৌঁছেছে। মাঝ মাঠ থেকে খেলাটা তৈরি হতে শুরু করেছে মোহনবাগানের দিকে। শুভাশিসের উঁচু করে তোলা বল মাঝ মাঠ থেকে এগিয়ে দিয়েছিলেন গ্রেগ। সেই বল ক্লিয়ার করতেই হেড করেছিলেন রাহুল ভেকে। কিন্তু সেই বল এসে পড়ে বক্সের বাইরের ডি-এর মধ্যে। সেখানেই অপেক্ষায় ছিলেন লিস্টন। এবার আর ভুল করেননি। চলতি বলেই তাঁর জোড়াল শট গুরপ্রীতকে পরাস্ত করে চলে যায় গোলে। জঘন্য ফুটবলে একটাই প্রাপ্তি, লিস্টনের গোল। যার সৌজন্যে এল তিন পয়েন্টও। ১৮ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে অনেকটাই স্বস্তি পেলেন মোলিনা।
আইএসএল ২০২৪-২৫ মরসুমের একদম শুরুতে দেখা হয়েছিল দুই দলের। তার আগে একটি ড্র ও একটি জয় নিয়ে বেঙ্গালুরুর ঘরের মাঠে সুনীল ছেত্রীদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। সেই ম্যাচে ০-৩ গোলে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল। তার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ তিন মাসেরও বেশি সময়। দারুণ পারফর্মেন্স করে লিগ টেবলের শীর্ষে জায়গা করে নিয়েছে মোহনবাগান। শুধু তাই নয়, গত ম্যাচে ভাল ফল না হলেও তাদের কেউ টলাতে পারেনি। ১৭ ম্যাচে ৩৭ পয়েন্ট নিয়ে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে লিগের ফিরতি ম্যাচে খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান। সমসংখ্যক ম্যাচে ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে এফসি গোয়া। আর ২৮ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে তখন বেঙ্গালুরু। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি তো বটেই।
এর আগে অ্যাওয়ে ম্যাচে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র মোহনবাগানকে বড় ধাক্কা দিয়েছে লিগ, শিল্ডের লক্ষ্যে। যে কারণে এই ম্যাচ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মোহনবাগানের খেলায় সেই চেনা ছন্দ যে উধাও গত কয়েক ম্যাচ থেকেই। জয় আসছে, আসছে পয়েন্টও কিন্তু খেলা দেখে মন ভরছে না সমর্থকদের। ঠিক যেভাবে সপ্তাহের প্রথম দিনও ঝিমিয়ে থাকল পুরো দল। এদিন প্রথম দলে ফিরলেন লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিং। আক্রমণে কোচ মোলিনা ভরসা রেখেছিলেন গ্রেগ আর ম্যাকলারেনের উপরই। কিন্তু হতাশই করলেন সবাই। প্রতিপক্ষের গোলের সামনে সেই লড়াই কোথায়? যা একটা চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে থাকা দলের মধ্যে দেখতে পাওয়ার কথা ছিল।
এদিন কার্ড সমস্যায় ছিলেন না আশিস রাই। প্রথম দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। দলে বদল এনে খেলায় যে কিছু বদলে এল তেমনটা নয়। প্রথমার্ধে যা আক্রমণ করল, সেটা বেঙ্গালরুর এফসিই। ২৮ মিনিট থেকে ৩৮ মিনিটের ১০ মিনিটের একটা স্পেল দেওয়া যেতে পারে মোহনবাগানকে, যখন বেঙ্গালুরু বক্সে কিছুটা নড়াচড়া করতে দেখা গেল মোহনবাগানকে। স্টুয়ার্ট, লিস্টন, মনবীররা গোলের মুখ খোলার চেষ্টা করলেন ঠিকই কিন্তু নিজেদের ভুলে ভরা ফুটবলের জন্যই তা সফল হল না। বরং নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করলেন বেঙ্গালুরুর সুনীল ছেত্রী। ১৮ মিনিটে সুনীলের শট অল্পের জন্য জালের গা ঘেঁষে বাইরে চলে যাওয়ার পর তাঁর চোখে, মুখে হতাশা ছিল দেখার মতো।
এর পরও সুযোগ এসে গিয়েছিল বেঙ্গালুরুর সামনে। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে মোহনবাগান বক্সের মধ্যে যেভাবে ভুল পাস করলেন আলড্রেড আর সেই সুযোগে সেখানে গোলের খোঁজে ঢুকে পড়া সুনীল ছেত্রী আরও একবার গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন মনবীরকে রীতিমতো কাঁধে নিয়ে। কিন্তু এবারও সেই শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হল। প্রথমার্ধ শেষ হল গোলশূন্যভাবেই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটাও ছিল একই রকম ম্যাড়ম্যাড়ে। তার মধ্যেই ফুল ফোঁটালেন লিস্টন কোলাসো। সব ম্যাচে তাঁর একাধিক মিস পাস থেকে গোলের সুযোগ নষ্টের সমালোচনার জবাব দিলেন তিনি অনবদ্য একটি গোল করে। দ্বিতীয়ার্ধে বলার মতো আর কিছুই ছিল না। গোল হজম করার পর, কিছুটা ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিল বেঙ্গালুরু কিন্তু মোহনবাগান রক্ষণ ম্যাচের ফল বদলাতে দেয়নি।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, দীপেন্দু বিশ্বাস, থমাস আলড্রেড, অ্যালবার্তো রডরিগেজ, শুভাশিস বোস, মনবীর সিং, আপুইয়া, দীপক টাংরি, লিস্টন কোলাসো (আশিক কুরুনিয়ান), গ্রেগ স্টুয়ার্ট (জেসন কামিন্স), জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রি পেত্রাতোস)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার