অলস্পোর্ট ডেস্ক: আইএসএল ডার্বির ইতিহাসে দ্রুততম গোল দিয়েই লড়াইটা শুরু করে দিলেন জেমি ম্যাকলারেন। আর তার ঠিক কয়েক মিনিট পরেই ফাঁকা গোলেও বল ঠেলতে ব্যর্থ হলেন ক্লেটন সিলভা। শনিবার আইএসএল খেলতে নেমেছিল কলকাতার তিন দলই। প্রথম ম্যাচে মহমেডান অঘটন ঘটানোর পর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। লিগ টেবলের ১৩ নম্বরে থাকা একটা দল যদি দু’নম্বরে থাকা দলকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে ১১-র সঙ্গে একের লড়াইয়েই বা সেটা হবে না কেন? কিন্তু না, দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে আর কোনও অঘটন ঘটল না। মোহনবাগানের কাছে ০-১ গোলে হেরেই এবারের মতো আইএসএল ডার্বি শেষ করল ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান এই ডার্বি জিতে বেঙ্গালুরুর থেকে আট পয়েন্ট এগিয়ে শীর্ষস্থান আরও পোক্ত করল।
এদিকে ইস্টবেঙ্গলে নেইয়ের তালিকাটা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও আনোয়ার আলিকে ডার্বিতে খেলানো গেল না। নতুন বিদেশি রিচার্ড সেলিসকে বিমান থেকে নামিয়েই রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে দেওয়ার যে পরিকল্পনা ছিল সেটাও হল না বিমান দেড়িতে পৌঁছনোয়। অগত্যা আঙুল গুনে যাদের পেলেন অস্কার ব্রুজোঁ তাঁদের নিয়েই দল সাজাতে বাধ্য হলেন। পুরো ফিট না হওয়া সৌভিককেও নামিয়ে দিতে হল মাঝমাঠে। এদিকে মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনার হাতে অনেক বিকল্প। অনিরুদ্ধ থাপা না থাকায় সাহাল, আপুইয়াকে জুড়ে দিলেন সঙ্গে বদল আনলেন আক্রমণেও। গ্রেগকে বসিয়ে জেমি-জেসন জুটিতেই ভরসা রাখলেন। প্রথম দলে রাখলেন না দিমিত্রিকেও।
প্রথম দলে সুযোগ পেয়েই অবশ্য কোচের ভরসার মান রাখলেন জেমি ম্যাকলারেন।এক মিনিট ৩৮ সেকেন্ডে আশিস রাইয়ের থেকে পাওয়া একটা থ্রু বল ধরে রীতিমতো হেক্টর ইউয়েস্তেকে কাঁধে নিয়েই গিলকে পরাস্ত করলেন তিনি। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের অপদার্থতা আরও একবার প্রকট হয়ে উঠল। শুরুতেই এগিয়ে গিয়ে আক্রমণে ঝাাঁঝ বাড়াল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলের কাছে সুযোগ যে এল না তা নয়। দুই মিনিটে গোল হজম করে সাত মিনিটেই যে সুযোগ চলে এসেছিল তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন ক্লেটন সিলভা। বক্সের মধ্যে বল পেয়েও কানেক্ট করতে পারলেন না। ২০ মিনিটে প্রায় গোল করেই ফেলেছিলেন মনবীর সিং। কোনও মতে বাঁচালেন গিল। তবে আধঘণ্টারও বেশি সময় ১০ জনের ইস্টবেঙ্গলেকে পেয়েও গোলের ব্যবধান বাড়াতে পারল না মোহনবাগান।
ফাঁকা গ্যালারিতেও উত্তেজনার পারদ চড়ছিল গুয়াহাটি স্টেডিয়ামে। ঝামেলায় জড়ালেন সৌভিক-ম্যাকলারেন। যদিও রেফারির হস্তক্ষেপে তা বেশি দূর গড়ায়নি। ৩৭ মিনিটে জিকসনের থেকে মাপা পাস ধরে যেভাবে বক্সের পৌঁছে গিয়েছিলেন ডেভিড তাতে গোল হতেই পারত কিন্তু মোহনবাগানের গোলের নিচে এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম সেরা গোলকিপার বিশাল কাইথ রয়েছে। তার আগেই ৩১ মিনিটে বক্সের ডান দিকে থেকে পাওয়া ক্লেটনের ফ্রিকিক এতটাই অপরিকল্পিত ছিল যে তা থেকে গোল হওয়ার কোনও সম্ভাবনা ছিল না, হয়ওনি। এদিকে এত না থাকার মধ্যে হলুদ কার্ড দেখে পরের ম্যাচে না খেলার ছাড়পত্র জোগার করে নিলেন সৌভিক চক্রবর্তী।
প্রথমার্ধের শেষে বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করেও ছাড় পেয়ে গেল মোহনবাগান। আপুইয়ার হাতে তো বল লেগেইছিল, পাশাপাশি শুভাশিসের হাতে লাগারও একটা ইঙ্গিত ছিল কিন্তু রেফারি ভেঙ্কটেশ যেন কিছুই দেখতে পেলেন না। ০-১ গোলে পিছিয়ে থাকা একটা দলকে নিশ্চিত পেনাল্টি থেকে বঞ্চিত করলেন তিনি। এখানেই শেষ নয় ৬৪ মিনিটে সৌভিককে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে পাঠালেন তিনি। বক্সের বাইরে লিস্টন কোলাসোকে ফাউল করেছিলেন সৌভিক। আরও একটু সতর্ক হতে হত সৌভিককে। এক মরসুমে সাতটি লালকার্ড দেখার রেকর্ড করে ফেলল ইস্টবেঙ্গল।
সৌভিক উঠে যেতেই ডেভিডকে তুলে মহেশকে নামিয় মাঝে মাঠের হাল ধরতে চাইলেন অস্কার। সঙ্গে হিজাজিকে তুলে নামিয়ে দিলেন নন্ধা কুমারকে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়াতে। অস্কার ব্রুজোঁ পজিটিভিটি এটাই, ১০ জনে হয়ে গিয়েও দলকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলালেন। ১০ জনে হয়ে গিয়েও একাধিকবার বল পজিশনে পিছনে ফেলল মোহনবাগানকে। কার্লেস কুয়াদ্রাত জমানায় যে সাফল্য পেয়েছিল এই ইস্টবেঙ্গল তা অস্কার ব্রুজোঁ জমানায় এখনও অধরা। আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গলের আর কিছু হওয়ার নেই। পরে থাকল সুপার কাপ। কুয়াদ্রাতের মতো অস্কারও কি পারবেন সেটা দিতে? তাহলেও তাঁর চাকরি থাকবে তেমনটা বলা যায় না।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, টম আলড্রেড, শুভাশিস বোস, অ্যালবার্তো রডরিগেজ, আশিস রাই, মনবীর সিং, সাহাল আব্দুল সামাদ (দীপক টাংরি), আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো (সুহেল আহমেদ ভাট), জেমি ম্যাকরালেন (দিমিত্রি পেত্রাতোস), জেসন কামিন্স (গ্রেগ স্টুয়ার্ট)
ইস্টবেঙ্গল: প্রভসুখন সিং গিল, লাল চুংনুঙ্গা, হিজাজি মেহের (নন্ধা কুমার), হেক্টর ইউয়েস্তে, নিশু কুমার, জিকসন সিং, সৌভিক চক্রবর্তী, পিভি বিষ্ণু, দিমিত্রিয়স দয়ামান্তাকোস, ক্লেটন সিলভা, ডেভিড (নাওরেম মহেশ সিং)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার