সুচরিতা সেন চৌধুরী: লাইন্সম্যান সবে দু’মিনিটের অতিরিক্ত সময়ের বোর্ড হাতে দাঁড়িয়েছেন। আর ঠিক তখনই মুম্বই বক্সে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। বল নিয়ে প্রায় বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন দিমিত্রি পেত্রাতোস। তাঁকে ততক্ষণে ঘিরে ধরেছেন এফসি গোয়ার দুই ডিফেন্ডার। আর তাঁদের হাত থেকে বল ক্লিয়ার করতে গিয়েই পড়ে গেলেন দিমিত্রি। তখন বলে হাত লাগিয়ে ফেলেন তিনি। ততক্ষণে বল পেয়ে গিয়েছেন মনবীর সিং। সেই বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকেই গোলে শট নেন মনবীর। সেই বল গোলেও চলে যায়। উৎসবে মেতে ওঠে মোহনবাগান দল, গ্যালারি জুড়ে উচ্ছ্বাসের মধ্যেই প্রতিবাদ শুরু হয় এফসি গোয়া শিবির থেকে। রেফারি, লাইন্সম্যান আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন গোল বাতিলের। প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব না হলেও দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে যায় মোহনবাগান, তবে সেম সাইড গোলে। না সেম সাইড গোলে অবশ্য জিততে হয়নি, শেষ মুহূর্তে মান রেখেছেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট। শেষ লিগ ম্যাচ জিতেই লিগশিল্ড ট্রফি ঘরে তুলল মোহনবাগান। এদিন যুবভারতীর রঙ শুধুই সবুজ-মেরুন।
এই ম্য়াচ ছিল নিয়মরক্ষার। তা বলে মোহনবাগান সমর্থকদের আবেগে একটুও খামতি ছিল না। এদিন সব রাস্তাই গিয়ে মিশেছিল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। কলকাতায় আইএসএল ২০২৪-২৫ মরসুমের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান ও এফসি গোয়া। লিগ টেবলে পর পর দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই দল। যদিও পয়েন্টের নিরিখে পাঁচ পয়েন্টের পার্থক্য রয়েছে দুই দলের মধ্যে। আইএসএল-এর ইতিহাসে রেকর্ড ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। লিগশিল্ড জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে আগেই। শনিবার তারই উৎসবে মাততে গ্যালারি ভরিয়েছিলেন সর্মথকরা। এদিন দলে নিয়মিত খেলা ফুটবলারদের অনেকেই ছিলেন না। এই প্রথম মোহনবাগান গোলের নিচে বিশাল কাইথের বিশ্বস্ত হাত ছিল না। প্রথম মোহনবাগানের হয়ে আইএসএল খোলার সুযোগ পেলেন ধীরজ সিং।
লিগ টেবলের নিরিখে গুরুত্বহীন ম্যাচ হলেও যে উত্তেজনায় ফুটছিল দুই দলের ফুটবলাররা তা মাঝে মাঝেই টের পাওয়া গেল। গ্যালারি থেকে তখন শব্দব্রহ্ম। ‘মোহনবাগান, মোহনবাগান’ চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই চোট পেয়ে মাঠ ছাড়লেন আশিস রাই। তাঁর জায়গায় নামলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। তার পর এল সেই ক্ষণ। যখন এগিয়ে গেল মোহনবাগান। ম্যাচের বয়স তখন ৬৩ মিনিট। মাঝ মাঠ থেকে বল উড়িয়েছিলেন টম আলড্রেড। সেই বল গোয়া বক্সের মধ্যে হেড করে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেছিলেন বরিস সিং। বল লক্ষ্য করে ততক্ষণে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন গোলকিপার ঋত্বিক তিওয়ারি। বরিসের হেডে নামানো বল ফাঁকা গোলে গড়াতে গড়াতে ঢুকে পড়ে কোনও বাধা ছাড়াই। যদিও বল লক্ষ্য করে উঠে গিয়েছিলেন দিমিত্রি। কিন্তু তিনি বলে পা লাগানোর সুযোগ পাননি। বরিসের সেম সাইড গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান।
অফিসিয়াল হিসেব বলছে এদিন মোহনবাগানকে সমর্থন করতে গ্যালারি ভরিয়েছিলেন ৬১,৫৯১ সমর্থক। হাসি মুখেই ফিরলেন তাঁরা। এফসি গোয়া তেমনভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারল না। গোল লক্ষ্য করে পজিটিভ শট বলতে হাতে গোনা দুটো। প্রথমার্ধে একটি, দ্বিতীয়ার্ধে একটি। একদম শেষ মুহূর্তে একটি প্রচেষ্টা বাঁচালেন ধীরজ। জয় ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে মোহনবাগানের। তবে খেলায় এক মুহূর্তের জন্যও মোহনবাগানকে হাল ছাড়তে দেখা যায়নি। যার ফল পাঁচ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে ২-০ করেই জয় নিশ্চিত করল লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়নরা। তখন ৯৪ মিনিটের ম্যাচ চলছে। মাঝ মাঠে জেসন কামিন্সের থেকে বল কেড়ে নিয়েছিলেন প্রতিপক্ষ ফুটবলার কিন্তু দখলে রাখতে পারেননি। সেই বলই ধরে প্রতিপক্ষের গোলের উদ্দেশে দৌঁড় শুরু করেন গ্রেগ স্টুয়ার্ট, এবং শেষ করেন জালে বল জড়িয়ে। আর এখানেই শেষ হয়ে যায় আইএসএল ২০২৪-২৫ মরসুমের লিগ পর্বে কলকাতার ম্যাচ।
মোহনবাগান: ধীরজ সিং,আশিস রাই (দীপেন্দু বিশ্বাস), টম আলড্রেড, আলর্বাতো রডরিগেজ, আশিক কুরুনিয়ান, মনবীর সিং, আপুইয়া, অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রি পেত্রাতোস (জেসন কামিন্স), গ্রেট স্টুর্য়াট (সুহেল ভাট)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার