Tuesday, December 3, 2024
No menu items!
Google search engine
Homeআইএসএলহায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জোড়া গোলে জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক মোহনবাগানের

হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জোড়া গোলে জিতে জয়ের হ্যাটট্রিক মোহনবাগানের

অলস্পোর্ট ডেস্ক: দিন দশেক আগে যে মেজাজে কলকাতা ডার্বি জিতেছিল তারা, সেই মেজাজ ধরে রাখতে না পারলেও বুধবার হায়দরাবাদ এফসি-কে ২-০-য় হারিয়ে চলতি আইএসএলে প্রথম জয়ের হ্যাটট্রিকটি করে ফেলল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। চার দিন আগেই কলকাতায় মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে চার গোলে জয় পাওয়া হায়দরাবাদ এ দিন কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেও মোহনবাগান আক্রমণকে রোখার মতো রক্ষণ তাদের ছিল না।

ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এ দিন শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিল গতবারের লিগশিল্ডজয়ীরা। ম্যাচের ৩৭ মিনিটের মাথায় মনবীর সিং ও ৫৫ মিনিটের মাথায় অধিনায়ক শুভাশিস বোসের গোলে চলতি লিগের চার নম্বর জয়টি অর্জন করে নেয় তারা। শেষ তিন ম্যাচে সাত গোল দিয়ে একটিও গোল খায়নি তারা। আইএসএলের ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার নিজেদের গোল অক্ষত রেখে জয়ের হ্যাটট্রিক করল সবুজ-মেরুন বাহিনী। ফলে ছয় ম্যাচে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ তালিকার দু’নম্বরে উঠে এল তারা। শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি-র চেয়ে মাত্র তিন পয়েন্ট পিছনে তারা।

এ দিন সেরা ছন্দে না থেকেও হায়দরাবাদকে হারানোর জন্য যথেষ্ট ভাল পারফরম্যান্স দেখায় তারা। সারা ম্যাচে যেখানে চারটি শট গোলে রাখে কলকাতার দল, সেখানে একটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি নিজামের শহরের দল। মোহনবাগান যেখানে ন’টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, হায়দরাবাদ ছ’টি গোলের সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু একটিও গোলে পরিণত করতে পারেনি। গত ম্যাচে ভাল খেলা দুই বিদেশী অ্যালান পলিস্তা ও আন্দ্রে আলবা এ দিন ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। বরং ভারতীয় ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবি অনেক বেশি তৎপর ছিলেন।

এ দিন লিস্টন কোলাসোর জায়গায় সহাল আব্দুল সামাদ ও আপুইয়ার জায়গায় দীপক টাঙরিকে রেখে ৪-৪-১-১-এ দল সাজায় মোহনবাগান এসজি। হায়দরাবাদ প্রথম এগারোয় কোনও পরিবর্তন করেনি। শুরুর দিকে হায়দরাবাদ নিজেদের মাঠে দাপট দেখানোর চেষ্টা করলেও ক্রমশ খেলায় ফেরে মোহনবাগান এবং তারা গোল করার চেষ্টা শুরু করে। তবে দুই দলেরই রক্ষণের তৎপরতার জন্য প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও দলই প্রতিপক্ষের গোলে সে ভাবে হানা দিতে পারেনি।

গত ম্যাচে মহমেডান এসি-কে চার গোলে হারানোর পর যে আত্মবিশ্বাস পায় হায়দরাবাদ এফসি, তার ছাপ এদিন শুরুর দিকে তাদের পারফরম্যান্সে দেখা গেলেও পরে ক্রমশ হারিয়ে যায়। ক্রমশ আক্রমণের তীব্রতা বাড়ায় মোহনবাগান ও গোলের চেষ্টা শুরু করে। ১৯ ও ২২ মিনিটের মাথায় যথাক্রমে মনবীর, ম্যাকলারেন ও সহাল গোলের সুযোগ পেয়েও সফল হননি।

এর আগে দুই ডার্বিতে মোহনবাগানকে যতটা আগ্রাসী ফুটবল খেলতে দেখা গিয়েছিল, এ দিন অতটা আগ্রাসী ছিল না তারা। হয়তো দশদিনের বিশ্রামের কারণে কিছুটা জড়তা দেখা যায় তাদের মধ্যে। এই জড়তা কাটাতে অনেক সময় নেয় তারা।

তাদের এই জড়তার সুযোগ নিয়ে হায়দরাবাদ আক্রমণে শান দেয়। বিশেষ করে তাদের ফরোয়ার্ড আব্দুল রাবি একাধিকবার ডানদিক দিয়ে বিপজ্জনক আক্রমনে ওঠেন। তাঁকে আটকাতে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন দুই বাগান-ডিফেন্ডার আলবার্তো ও শুভাশিস।

ড্রিঙ্কস ব্রেকের পর আক্রমণে আরও ধার বাড়ায় সবুজ-মেরুন বাহিনী এবং ৩৭ মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যান মনবীর। সেন্টার লাইনের পিছন থেকে তাঁকে ফরোয়ার্ড পাস বাড়ান থাপা। মাঝমাঠেই মনবীরকে আটকাতে চেষ্টা করেন সার্বিয়ান ডিফেন্ডার স্তেফান সাপিচ। কিন্তু তিনি ব্যর্থ হওয়ায় বল নিয়ে অনেকটা দৌড়ে বক্সে ঢুকে গোলকিপারকে এড়িয়ে গোলে বল ঠেলে দেন মনবীর (১-০)। বক্সে অ্যালেক্স সাজি তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করেও পারেননি। আইএসএলে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে এটি পঞ্চম গোল মনবীরের।

বিরতির আগে স্টুয়ার্টের পাস থেকে বক্সের মধ্যে গোলের সুযোগ পেয়ে যান সহাল। কিন্তু তাঁর কোণাকুনি শট লাগে সাইড নেটে। বাড়তি সময়ে আশিস রাইও বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। সাপিচ চেষ্টা করেও আটকাতে পারেননি তাঁকে। কিন্তু গোলকিপার বিয়াকা জঙতে এগিয়ে এসে তাঁর পা থেকে বল ছিনিয়ে নেন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে হায়দরাবাদ। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যেই রাবি ও আলবা গোলে শট নেন। রাবির শট সেভ করেন বিশাল, আলবার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে মিনিট পাঁচেক পর থেকে ফের মোহনবাগান ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে শুরু করে। ৫০ মিনিটের মাথায় সহালের শট বারের সামান্য ওপর দিয়ে চলে যায়।

সহাল সুযোগ হাতছাড়া করলেও পাঁচ মিনিট পরে স্টুয়ার্টের অনবদ্য ফ্রি কিক থেকে গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করেননি শুভাশিস। বক্সের বাইরে ডানদিক থেকে নেওয়া ফ্রি কিক দূরের পোস্টের সামনে পৌঁছলে অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে তা হেড করে জালে জড়িয়ে দেন শুভাশিস (২-০)। এই নিয়ে চলতি লিগে চতুর্থ অ্যাসিস্ট করলেন স্টুয়ার্ট, যা শুধু চলতি লিগে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় তাঁকে সবার ওপরে পৌঁছে দিল না, আইএসএলের ইতিহাসেও সবচেয়ে বেশি (২৫) অ্যাসিস্টের তালিকায় সবার ওপরে বহাল রাখল তাঁকে।

এই গোলের পরেই ব্যবধান কমানোর দুর্দান্ত সুযোগ পেয়ে যান পলিস্তা। প্রতিপক্ষের তিন ফুটবলারকে ড্রিবল করে ছিটকে দিয়ে বক্সে ঢুকে কোণাকুনি শটে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে গোলের উদ্দেশে বল ঠেললেও তা পোস্টের সামান্য বাইরে চলে যায়।

ম্যাচের বয়স ৬৫ মিনিট পেরোতেই লিস্টন কোলাসো ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটসকে নামায় মোহনবাগান। তুলে নেয় সহাল ও ম্যাকলারেনকে। ৭০ মিনিটের মাথায় ডানদিক দিয়ে উঠে বক্সের মধ্যে পেট্রাটসের উদ্দেশে এক মাপা ক্রস বাড়ান কোলাসো। কিন্তু বলে পৌঁছতে দেরি করে ফেলেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড। ৭৪ মিনিটের মাথায় কোলাসোর দূরপাল্লার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

এই সময় থেকেই ক্রমশ খেলায় ফেরার চেষ্টা শুরু করে হায়দরাবাদ এফসি। প্রথমার্ধে তারা কোনও শট গোলে রাখতে না পারলেও দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম আধ ঘণ্টার মধ্যে তারা একাধিক আক্রমণ করে। তাদের একটি শট লক্ষ্যেও ছিল। কিন্তু ৭৫ মিনিটের মাথায় রাবি মাঠ ছাড়ায় কিছুটা হলেও ছন্দপতন হয় হায়দরাবাদের।

গোলের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্দেশে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার ছ’মিনিট আগে স্টুয়ার্টকে তুলে জেসন কামিংসকে নামান বাগান-কোচ হোসে মোলিনা। থাপার জায়গায় অভিষেককেও নামানো হয়। এর পরই পেট্রাটসের ক্রসে হেড করে গোলের দিকে বল ঠেলেন আলবার্তো রড্রিগজে। কিন্তু তা অনবদ্য সেভ করেন গোলকিপার জঙতে।

এই ঘটনার দু’মিনিট পরেই গোলের সামনে থেকে করা মনবীরের হেডও বানচাল হয়ে যায়। ম্যাচের শেষ দিকে একাধিকবার প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে গোল করার বা করানোর চেষ্টা করেন পেট্রাটস। কিন্তু ডিফেন্ডাররা তাঁকে কড়া পাহাড়ায় রাখেন এবং পেট্রাটসের পায়ে অনেকক্ষণ বল রাখার প্রবণতা তাঁদের কাজ আরও সহজ করে দেয়। ফলে শেষ পর্যন্ত মরশুমের দ্বিতীয় গোলটি পাওয়া হয়নি তাঁর।

মোহনবাগান এসজি দল (৪-৪-১-১): বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই, আলবার্তো রড্রিগেজ, টম অ্যালড্রেড, শুভাশিস বোস (দীপেন্দু বিশ্বাস-৯০), গ্রেগ স্টুয়ার্ট (জেসন কামিংস-৮৪), অনিরুদ্ধ থাপা (অভিষেক সূর্যবংশী-৮৪), সহাল আব্দুল সামাদ (লিস্টন কোলাসো-৬৫), দীপক টাঙরি, জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রিয়স পেট্রাটস-৬৫), মনবীর সিং ।

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments