সুচরিতা সেন চৌধুরী: ছুটি কাটিয়ে ফিরে শুরুটা ভালই করে দিল মোহনবাগান। ঘরের মাঠে হেডকোচহীন জামশেদপুরের বিরুদ্ধে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ম্যাচের দখল নিজেদের কাছেই রাখলেন মোহনবাগান প্লেয়াররা। ম্যাচের আগের দিন পুরো দলকে দেখে বোঝাই যাচ্ছিল বেশ ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে। তার প্রতিফলন দেখা গেল ম্যাচেও। যার ফল ম্যাচ শুরুর ১৫ মিনিটের মধ্যেই গোল করে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আরও এক। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ খেলতে নেমে আরও একটি গোল করে লিগ শীর্ষে জায়গা করে নিল মোহনবাগান।
শুরু থেকেই এই ম্যাচ ঘিরে ছিল উত্তেজনা, যতই দু’য়ের বিরুদ্ধে সাতের লড়াই হোক না কেন। হলুদ কার্ড, হালকা উত্তেজনায় মাঝে মাঝে থমকালো খেলার গতি। তার মধ্যেই আক্রমণ চালিয়ে গেলেন দিমিত্রি, আলড্রেডরা। প্রথম গোলের মুখ খুলল ম্যাচের ১৫ মিনিটে। যখন দিমিত্রির কর্ণার বক্সের ভিতরে জটলার মধ্যে থেকে বাইরে পাঠিয়েছিল জামশেদপুর প্লেয়ার। কিন্তু সেই বল আবার বক্সের মধ্যে ফেরত পাঠান দীপক টাংরি। জামশেদপুর প্লেয়ারের গায়ে লেগে অনেকটা উঠে যাওয়া বলে রডরিগেজের হেড থেকে আলড্রেডের হাফ ভলি সোজা চলে যায় গোলে। এগিয়ে যায় মোহনবাগান।
মোহনবাগান গোল করে এগিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই জামশেদপুরের হয়ে হার্নান্ডেজের শট অল্পের জন্য বাইরে যায়। একাধিকবার বাগান গোলের নিচে প্রতিবারের মতো দেওয়াল তৈরি করলেন বিশাল কাইথ। না হলে বিপদ হতেই পারত। তার মধ্যেই ২৪ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করল মোহনবাগান। বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন দিমিত্রি। কিন্তু গোলকিপার অ্যালবিনো গোমস ফিস্ট করে তা বাঁচিয়ে দেন। ফিরতি বলে ম্যাকলারেনের শট গোলের গা ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এর পরও বেশ কয়েকবার জামশেদপুর বক্সে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোল এল অতিরিক্ত সময়ে।
তখন প্রথমার্ধের তিন মিনিটের অতিরিক্ত সময় চলছে। সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি দেখছেন রেফারি। আর মাত্র বাকি এক মিনিট। ঠিক তখনই নিজের জীবনের মনে হয় সেরা গোলটি করে ফেললেন লিস্টন কোলাসো। পুরো প্রথমার্ধে একাধিকবার বল নিয়ে গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন কিন্তু শটে কোনও পরিকল্পনা ছিল না। শেষ পর্যন্ত সব ভুল শুধরে যে গোলটি করলেন তা দেখার মতো। দীপক টাংরির থেকে উড়ে আসা বল বক্সের বাইরে ধরে একাই প্রতিপক্ষের তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলকিপারকে পরাস্ত করলেন লিস্টন কোলাসো। তার পরও দ্বিতীয়ার্ধে যেভাবে ফাঁকা গোল পেয়েও পোস্টে মারলেন সেটা ভাবাবে কোচকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জামশেদপুর বেশ কয়েকবার সুযোগ তৈরি করতে সক্ষম হলেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি। একবারই এই পুরো ম্যাচে ভুল করে ফেলেছিলেন বিশাল। জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু জামশেদপুর তা কাজে লাগাতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধে গোলের সংখ্যা বাড়িয়ে নিল মোহনবাগান। ৭৪ মিনিটে দীপক টাংরির থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মধ্যে ধরেছিলেন মনবীর সিং। তাঁকে দেখে জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন গোলকিপার। সেই সুযোগেই পিছন থেকে উঠে আসা ম্যাকলারেনকে ছোট্ট টোকায় বল ঠেলে দেন মনবীর। ভুল করেননি ম্যাকলারেন।
এদিন পুরো ম্যাচে নজর কাড়লেন দীপক টাংরি। গ্রেগ, রাইয়ের অবর্তমানে দীপেন্দু, টাংরিরা দায়িত্ব নিয়েই সামলালেন। ৩-০ গোলে জামশেদপুরকে হারিয়ে আট ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শীর্ষে এখন মোহনবাগান। একই পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় বেঙ্গালুরু।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, শুভাশিস বোস, থমাস আলড্রেড, আলবার্তো রডরিগেজ, দীপেন্দু বিশ্বাস, লিস্টন কোলাসো (সাহাল আব্দুল সামাদ), দীপক টাংরি (অভিষেক সূর্যবংশী), আপুইয়া (অনিরুদ্ধ থাপা), মনবীর সিং(আশিক কুরুনিয়ান), দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেমি ম্যাকলারেন (জেসন কামিন্স)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার