সুচরিতা সেন চৌধুরী: আইএসএল ২০২৪-২৫-এর এই শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় খেলতে নেমেছিল কলকাতার তিন দলই। মোহনবাগান ও মহমেডান যখন একে অপরের মুখোমুখি হল কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ততক্ষণে তাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছে জমশেদপুরে ইস্টবেঙ্গলের হারের খবর। তার পরই ছিল এই আইএসএল মরসুমের প্রথম কলকাতা ডার্বি। মোহনবাগান-মহমেডান মুখোমুখি হওয়ার আগে এই ম্যাচে খাতায়-কলমে এগিয়ে ছিল মহমেডানই। পয়েন্ট আর হার-জিতের নিরিখে যদিও একই জায়গায় দাঁড়িয়েছিল দুই দল। কিন্তু খেলা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সব হিসেব যেন মুহূর্তে বদলে দিল মোহনবাগান। যে হোসে মোলিনার দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠছিল এদিন যেন তাঁর প্রথম এগারোয় বদলই দলের খেলায় বদল এনে দিল। ম্যাচ শেষে ৩-০ গোলের চওড়া হাসি নিয়েই বাড়ির পথ ধরলেন সমর্থকরা।
এদিন জেসন কামিন্স, দিমিত্রি পেত্রাতোসকে বেঞ্চে রেখে প্রথম দল সাজালেন মোলিনা। প্রথম দলে জায়গা পেলেন জেমি ম্যকলারেন। কোচের ভরসার মানও রাখলেন তিনি। দলের হয়ে মাত্র আট মিনিটেই গোলের মুখ খুলে ফেললেন। লিস্টন কোলাসোর কর্নার থেকে বক্সের মধ্যেই হেড করেছিলেন গ্রেগ স্টিওয়ার্ট। সেই বল জটলার মধ্যে থেকে হেডে মহমেডান গোলে পাঠালেন জেমি ম্যাকলারেন। শুরুতেই এগিয়ে গিয়ে খেলার রাশ পুরোটাই দখলে নিয়ে নিল মোহনবাগান। তার পরটা মোহনবাগানময়। মাথা তুলে দাঁড়াতে পারল না মহমেডান। যার ফল প্রথমার্ধে একবারও বল ধরতে হল না মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইথকে।
যে মহমেডান আইএসএল-এ আবির্ভাবেই স্বপ্ন দেখাচ্ছিল তারা এদিন ম্যাচ থেকেই হারিয়ে গেল। কিন্তু কেন? প্রাথমিকভাবে যেটা ম্যাচের আগের দিন মহমেডান কোচের সামনে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, সেটা হল মাঠ। এতদিন তারা খেলেছেন কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে। সে তুলনায় যুবভারতী অনেক বড় মাঠ। যে মাঠে খেলে অভ্যস্ত মোহনবাগান, সেখানেই অনেকটা পিছিয়ে পড়ল মহমেডান। দলের ভারসাম্যটাই নষ্ট হয়ে গেল। পুরো ম্যাচে প্রায় সবাই মিলে রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকল। তবে গোলের ব্যবধান বাড়ানো আটকানো গেল না। প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গেল মোহনবাগান।
প্রথম গোল ম্যাকলারেনের হলে দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোল করলেন স্টিওয়ার্ট ও শুভাশিস। এই মরসুমেই আইএসএল-এ দুই গোল করে ফেললেন দলের রক্ষণের ভরসা, অধিনায়ক শুভাশিস বসু। স্টিওয়ার্টের ফ্রি-কিক থেকে বক্সের মধ্যেই জটলার ভিতর থেকে শুভাশিসের হেড চলে যায় গোলে। ম্যাচের বয়স তখন ৩১ মিনিট। তার পর মাত্র পাঁচ মিনিটই কেটেছিল, তৃতীয় গোল করে ফেলে মোহনবাগান। এবার গোলের কারিগর গ্রেগ স্টিওয়ার্ট। শুভশিসের পাস থেকে মহমেডান রক্ষণের গৌরব বোরাকে কাটিয়ে গোল নিশ্চিত করেন তিনি। শুভাশিস আর গ্রেগ একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠলেন এই ম্যাচে।
তবে এখানে এটাও মনে রাখতে হবে, যতগুলো গোল করলেন মোহনবাগান ফুটবলাররা ততগুলোই নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্টও করলেন। সেই তালিকায় যেমন থাকবেন এক গোল করা গ্রেগ, তেমনই থাকবেন মনবীর, লিস্টনরা। এই ম্যাচে এই গোল মিস সমস্যায় না ফেললেও যে কোনও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে এটাই হিতে বিপরিত হতে পারে। তবে বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ০-৩ গোলে হারের পর এই জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের বিদায়ের পর হোসে মোলিনাকে নিয়েও যে বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল তাতেও সাময়িক দাঁড়ি পড়বে। সঙ্গে ডার্বির আগের ডার্বি জিতে অনেকটাই মানসিকভাবে এগিয়ে থাকবে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। সেখানে ডার্বির আগে হেরেই শহরে ফিরছে ইস্টবেঙ্গল।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, থমাস অ্যালড্রেড, শুভাশিস বোস, আলবার্তো রডরিগেজ, আশিস রাই, অনিরুদ্ধ থাপা (দীপক টাংরি), মনবীর সিং (সুহেল ভাট), লিস্টন কোলাসো, আপুইয়া, জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রি পেত্রাতোস), গ্রেগ স্টিওয়ার্ট (আশিক কুরুনিয়ান)
মহমেডান: পদম ছেত্রী, গৌরব বোরা, জোডিংলিয়ানা, জোসেফ আদজেই, ভানলাল জুডিকা (সামাদ আলি মল্লিক), লালরেমসাঙ্গা (মানজোকি), মাকান উইঙ্কল (বিকাশ সিং), অমরজিত সিং (লালরিনফেলা), মিরজালোল কাসিমোভ (আঙ্গুসানা লুয়াং), অ্যালেক্সিস গোমে, কার্লোস হেনরিক
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার