সুচরিতা সেন চৌধুরী: এক কথায় মিনি ডার্বি। একটা সময় কলকাতা ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান ম্যাচের আবহ না হলেও এতটাও পিছিয়ে থাকত না মহমেডানের সঙ্গে কলকাতার বাকি দুই দলের ম্যাচ। তবে পরিস্থিতি বদলেছে। এবারই প্রথম আইএসএল খেলছে সাদা-কালো ব্রিগেড। মরসুমের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে দেশের সর্বোচ্চ লিগ। সেই পরিস্থিতিতে মহমেডান বনাম মোহনবাগান যখন ফিরতি লেগের ম্যাচ খেলতে নামল তখন একদল টেবলের শীর্ষে আর অন্য দল একদম শেষে দাঁড়িয়ে। লড়াই যে অসম হবে তা জানাই ছিল। তার মধ্যে মহমেডান ক্লাবের অন্তর্দন্দ্ব তো রয়েছেই। যার ফল প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। যদিও শেষ করল ৪-০ গোলে।
মহমেডান বনাম মোহনবাগান ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ঘটনাবহুল। মোহনবাগানের তিন গোল তো ছিলই সঙ্গে যুক্ত হল লাল কার্ড। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে আলড্রেডকে অন্যায়ভাবে মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন কাশিমোভ। তার আগেই অবশ্য তিন গোল করে ফেলেছে মোহনবাগান। যার দুটো গোলই এল দলের রক্ষণের অন্যতম ভরসা অধিনায়ক শুভাশিস বোসের পা থেকে। এই নিয়ে ছয় গোল হয়ে গেল তাঁর। অনেক স্ট্রাইকারের থেকে বেশি। ম্যাচের ১২ মিনিটেই লিস্টনের কর্নার থেকে মনবীরের মাথা হয়ে, কামিন্স, ম্যাকলারেনের পা হয়ে শুভাশিসকে ফাইনাল পাসটি বাড়িয়েছিলেন আর এক ডিফেন্ডার দীপেন্দু বিশ্বাস। গোল করতে ভুল করেননি শুভাশিস।
এর পর ২০ মিনিটে ২-০ করেন মনবীর সিং। কামিন্সের কর্নার থেকে সরাসরি হেডে বল জড়ান মহমেডান জালে। ৪৩ মিনিটে সেই কামিন্সেরই ফ্রিকিক থেকে ম্যাকলারেনের ছোট্ট টোকা বক্সের মধ্যেই পেয়ে গিয়েছিলেন শুভাশিস। আবারও গোল করতে ভুল করেননি তিনি। প্রথমার্ধে ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর অতিরিক্ত সময়ে প্রথম গোলের সুযোগ তৈরি করে মহমেডান। কাশিমোভের কর্নার থেকে মনবীরের হেড মাথার উপর দিয়ে বিশাল কাইথ না বাঁচালে ব্যবধান কমাতে পারত মহমেডান। কিন্তু তেমনটা হল না। ০-৩ গোলে পিছিয়ে থেকেই দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে হারের ব্যবধান আরও বাড়াল মহমেডান এসসি।
৫৩ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোল করে দলকে ৪-০ গোলের ব্যবধানে নিয়ে যান মনবীর সিং। এখান থেকে মহমেডানের আর ফেরার কোনও জায়গাই ছিল না। ৮১ মিনিটে দিমিত্রির শট ক্রসবারে না লাগলে এদিন মোহনবাগান ৫-০ গোলে জয়ের স্বাদ পেতেই পারত। এমনিতে শুরু থেকে শেষ, কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি মহমেডান। যতই ক্লাব কর্তৃপক্ষ বলুক সব ঠিক আছে কিন্তু ক্লাবের ডামাডোলের প্রভাবে যে জর্জরিত মহমেডান দল তা তাদের খেলাতেই স্পষ্ট। কোচ চেরনিশভ ইতিমধ্যেই দেশে ফিরে গিয়েছেন। স্পনসররা যতই বলুক তিনি ফিরবেন, তবে তা নিযে সন্দেহ রয়েছেই। প্লেয়াররাও টাকা না পেয়ে খেলছেন। সব মিলে এই ফলাফল লিগ শীর্ষে থাকা দলের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক নয়।
১৯ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শীর্ষে থাকাটা আরও জোরদার করল মোহনবাগান। আর ১৮ ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে আরও তলিয়ে গেল মহমেডান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা গোয়া অবশ্য দুই ম্যাচ কম খেলে ৩৩ পয়েন্টে রয়েছে। ৩১ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে থাকা জামশেদপুরও মোহনবাগানের থেকে দুই ম্যাচ কম খেলেছে। তবে যা পরিস্থিতি তাতে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে মোহনবাগান।
মহমেডান: পদম ছেত্রী, ভানলাল জুডিকা, মহম্মদ ইরশাদ (লালরিনফেল), জো জোহেরলিয়ানা, সাজাদ হুসেন, ফ্লোরেন্স ওজির, মিরজালোল কাসিমোভ, অ্যালেক্সিস গোমেজ (মার্ক আন্দ্রে), মনবীর সিং (অমরজিত সিং), লালরেমসাঙ্গা (অ্যাডিসন সিং), কার্লোস ফ্রাঙ্কা
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ,আশিস রাই, থমাস আলড্রেড, দীপেন্দু বিশ্বাস (সৌরভ ভানোয়াল), শুভাশিস বোস, মনবীর সিং (দিমিত্রি পেত্রাতোস), সাহাল আব্দুল সামাদ (অভিষেক সূর্যবংশী), আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো (আশিক কুরুনিয়ান), জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিন্স (গ্রেগ সটুয়ার্ট)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার