সুচরিতা সেন চৌধুরী: ৩০ মিনিটে তিন গোল। দ্বিতীয়ার্ধে আরও একটি। পুরো ম্যাচে হল চার গোল। তার মধ্যে তিনটি মোহনবাগানের। দ্বিতীয়ার্ধে আট মিনিটের অতিরিক্ত সময় শেষে যখন লম্বা বাঁশি বেজে উঠল তখন উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভাঙল সমর্থকদের। দল পৌঁছে গিয়েছে ডুরান্ড কাপ ২০২৩-এর সেমিফাইনালে। যেখানে প্রতিপক্ষ এফসি গোয়া। ম্যাচ শেষে মাঠের মধ্যেই মুম্বই কোচের সঙ্গে আড্ডা জুড়ে দিলেন দিমিত্রি, কামিন্সরা। ফুটবলের মাহাত্ম এখানেই। এটাই আসল স্পোর্টসম্যান স্পিরিট। যেটা গত ৯০ মিনিটে কিন্তু টের পাওয়া যায়নি।
ডুরান্ড কাপ ২০২৩-এর কোয়ার্টার ফাইনালে মোহনবাগান বনাম মুম্বই সিটি ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল টানটান উত্তেজনায় ঠাসা। দ্বিতীয়ার্ধেও তার রেশ থেকে গেল। হবে নাই বা কেন মোহনবাগানের চিরকাল শক্ত গাঁট এই মুম্বই। আগের দিনই অধিনায়ক শুভাশিস বোস বলে দিয়েছিলেন, তাঁর অধিনায়কত্বেই ইতিহাসটা বদলাতে চান তিনি। যেমন বলা তেমনই কাজ। ম্যাচের শুরুতেই পেনাল্টি থেকে এগিয়ে গেলেও দ্রুতই সমতায় ফিরল মুম্বই সিটি এফসি। কিন্তু ঘরের মাঠের শব্দব্রহ্মের মধ্যেই আবার ব্যবধান বাড়ায় মোহনবাগান। প্রথমটি পেনাল্টি হলে দ্বিতীয়টি মনবীর সিংয়ের অনবদ্য হেড। এই জয়ের আশাতেই এদিন গ্যালারি ভরিয়েছিলেন প্রায় হাজার ২৫ মোহনবাগান সমর্থক।
প্রথমার্ধের সাত মিনিটেই পেনাল্টি হাসিল করে নিয়েছিলেন জেসন কামিন্স। আশিক কুরুনিয়ানের থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে পড়েছিলেন কামিন্স। কিন্তু তাঁর পা থেকে বল কাড়তে গিয়ে ফাউল করে ফেলেন মুম্বই গোলকিপার ফুরবা টেমপা। পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি কামিন্স। গোল হজম করে আক্রমণে তেজ বাড়ায় মুম্বই। ম্যাচের ২৮ মিনিটে সেই অতি প্রত্যাশিত গোলও চলে আসে মুম্বইয়ের পক্ষে। বক্সের বাইরে থেকে আলবার্তো নোগুয়েরা বক্সের বাঁ দিকে জেমস স্টিওয়ার্টকে পাস দিয়ে নিজে পৌঁছে গিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে একদম গোলের সামনে। স্টিওয়ার্ট আবার পাস দেন নোগুয়েরাকে কিন্তু তাঁকে তখন ঘিরে মোহনবাগান ডিফেন্ডাররা তাই আর ঝুঁকি না নিয়ে বল ঠেলে দেন পেরেইরা দিয়াজকে। অনিরুদ্ধ থাপাকে ঘারে নিয়েই জালে বল জড়ান তিনি।
এক মিনিটের মধ্যেই অবশ্য গোলের ব্যবধান আবার বাড়িয়ে নেয় মোহনবাগান। এবার সামাদের কর্নারে বক্সের মধ্যের জটলা থেকেই লাফিয়ে হেড করেছিলেন কেউ সেই বল বক্সের ডানদিকে পেয়ে গিয়েছিলেন হুগো বুমৌস। ডানদিক থেকে বুমৌসের মাপা সেন্টারে মনবীরের অনবদ্য হেড আটকানোর জন্য ঝাঁপালেও তার নাগাল পায়নি মুম্বই গোলরক্ষক। মোহনবাগান প্রথমার্ধ শেষ করে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে।
এদিন বসুন্ধরার বিরুদ্ধে জয়ী দলে দুটো পরিবর্তন করেছিলেন মোহনবাগান কোচ হুগো বুমৌস। লিস্টন কোলাসো ও আশিস রাইকে বেঞ্চে রেখে প্রথম দলে নামিয়ে দিয়েছিলেন আশিক কুরিয়ান ও হুগো বুমৌসকে। এদিন পুরো মাঠ জুড়ে খেললেন এই দুই ফুটবলার। পাশাপাশি যোগ্য সঙ্গত মনবীর সিংয়ের।
দ্বিতীয়ার্ধে দু’পক্ষের সামনেই ছিল কড়া চ্যালেঞ্জ। মোহনবাগানের লক্ষ্য ছিল ব্যবধান ধরে রাখা। আর মুম্বইয়ের লক্ষ্য অবশ্য সমতায় ফিরে ব্যবধান বাড়ানো। তার মধ্যেই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বক্সের মধ্যে থেকে সহজ সুযোগ নষ্ট করে বসলেন সাদিকু। কিন্তু সেটা আর কেউ মনে রাখবে না। কারণ হুগো, মনবীর, আশিক আর আনোয়ারের চতুর্ভুজে যে গোল এল তা মোহনবাগানকে ৩-১ করতে সাহায্য করল। ম্যাচের ৬৩ মিনিটে হুগো বুমৌসের কর্নার থেকে মনবীর বল পেয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর গায়ে লেগেছিলেন প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার। তাই একটু সময় নিলেন তিনি। সেখান থেকে পিছন দিকে তিনি বল ঠেলে দেন। সেই বল ধরে বক্সের ভিতর মাপা ক্রস রাখেন আশিক কুরুনিয়ান। ততক্ষণে রক্ষণ ছেড়ে বক্সের মধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন এএফসি কাপ ম্যাচে জোড়া গোল করা আনোয়ার আলি। হেডে অসাধারণ ফিনিশ করে তাঁর স্কোরিং দক্ষতা আবার প্রমাণ করলেন তিনি।
ম্যাচের সময় যত গড়াল ততই গ্যালারি থেকে ‘মোহনবাগান মোহনবাগান’ চিৎকার বাড়ল। আট ম্যাচ পর গাঁট ছাড়িয়ে জয়ের মুখ দেখল দল। ইতিহাস বলছে এর আগে আটবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। পাঁচবার জিতেছে মুম্বই আর তিনবার ড্র। নবম ম্যাচে এসে জয়ের মুখ দেখল মোহনবাগান। অন্যদিকে এই জয় মোহনবাগানের জন্য খুলে দিল ডুরান্ড সেমিফাইনালের রাস্তা। যা ফাঁক ফোকর ছিল তা অনেকটাই সামলে নিয়েছেন হুয়ান ফেরান্দো। এদিন মোহনবাগানের খেলায় দলের উন্নতির ছাপ স্পষ্ট।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আনোয়ার আলি, হেক্টর ইয়ুস্তে, শুভাশিস বোস, মনবীর সিং, অনিরুদ্ধ থাপা, সাহাল আব্দুল সামাদ (গ্লেন মার্টিন্স), আশিক কুরুনিয়ান, হুগো বুমৌস (কিয়ান নাসিরি), জেসন কামিন্স (লিস্টন কোলাসো), আর্মান্দো সাদিকু (দিমিত্রি পেত্রাতোস)।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার