সুচরিতা সেন চৌধুরী: এক কথায় চূড়ান্ত অপরিকল্পনা। যার নজির প্রায় প্রতিদিনই রাখছেন হোসে মোলিনা। ছন্নছাড়া ফুটবল। রক্ষণ তো ভয়ঙ্কর ছিলই এদিন সঙ্গে দোসর মাঝমাঠ। যা নিয়ে প্রথমার্ধে রীতিমতো ছেলেখেলা করল নর্থইস্ট। সোমবার আইএসএএল ২০২৪-২৫-এর দ্বিতীয় ম্যাচেই মোহনবাগানকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির। যে নর্থইস্টের বিরুদ্ধে এই যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনেই ডুরান্ড কাপ ফাইনালে হারের মুখ দেখতে হয়েছিল সবুজ-মেরুনকে। এক কথায় যেখানে ডুরান্ড শেষ করেছিল হুয়ান পেড্রোর ছেলেরা সেখান থেকেই যেন আইএসএল শুরু করে দিয়েছে এবার। দারুণ ছন্দে জিতিন, আলাদিনরা। সেখানে এদিন তারকাখচিত মোহনবাগানকে লড়াইয়ে ফেরালেন দুই বঙ্গসন্তান। খেলা শেষে ৩-২ গোলে জয়ের হাসি নিয়েই বাড়ি ফিরলেন সমর্থকরা।
এদিন ম্যাচ শুরুর ২ মিনিটের মধ্যেই নিশ্চিত গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ডুরান্ড চ্যাম্পিয়নরা। জিতিনের পাস থেকে নিকসনের গোলমুখি শট অল্পের জন্য পোস্টে লেগে ফিরে আসে। পোস্ট বাধা না হলে তখনই এগিয়ে যেতে পারত নর্থইস্ট। তবে গোল পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। মাত্র দু’মিনিটের মধ্যেই অবশ্য গোলের মুখ খুলে ফেলে নর্থইস্ট। দলের মধ্যের অসাধারণ বোঝাপড়ার ফল এই গোল।ম্যাচের বয়স সবে তখন চার মিনিট। আলাদিনের পাস থেকে মহম্মদ আলি বেমামেরের বক্সের বাইরে থেকে জোড়াল শটে দুরন্ত ফিনিশ। শুরুতেই ১-০ গোলে এগিয়ে যায় নর্থইস্ট।
তবে ১-০ গোলের ব্যবধান বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তারা। ১০ মিনিটে সমতায় ফেরে মোহনবাগান। পেত্রাতোসের ফ্রিকিক থেকে দীপেন্দু বিশ্বাসের হেড চলে যায় প্রতিপক্ষের গোলে। সমতায় ফেরে মোহনবাগান। তবে খেলার লাগাম তখনও ধরে রেখেছিল নর্থইস্ট। দীর্ঘ ১০ বছর কোনও বড় ট্রফি জয়ের স্বাদ দলটাকে এক কথায় বদলে দিয়েছে। এক কথায় দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দিচ্ছে দলটা। যার নজির দেখা গেল তাদের দ্বিতীয় গোলেই। যেভাবে কাউন্টার আক্রমণে উঠে মোহনবাগান রক্ষণকে ছিটকে দিয়ে গোল করে গেল নর্থইস্ট তাতে দুই দলের প্রস্তুতির পার্থক্য প্রকট হয়ে গেল ভীষনভাবে।
২৪ মিনিটে প্রায় মোহনবাগান বক্স থেকে বল নিয়ে নিজেদের বক্সে পৌঁছে যান জিতিন। মাঝে আলাদিনের সঙ্গে লং পাস খেলে শেষ পর্যন্ত আলাদিনের পায়েই বল জমা করেন জিতিন। এবং সেই বলেই আলাদিনের জোড়াল শট বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করতে পারেননি মোহনবাগান রক্ষণ। যদিও রক্ষণ সামলাতে না পারলেও গোল করে দলকে সমতায় ফেরালেন সেই ডিফেন্ডারই। প্রথম গোল দীপেন্দুর হলে দ্বিতীয় গোল শুভাশিসের। যে গোল বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।
৬১ মিনিটে বক্সের বাঁদিক থেকে গ্রেগের লম্বা শট বাঁচিয়ে দিলেও গ্রিপ করতে পারেননি গুরমিত। কিন্তু বল ছিল তাঁরই দখল। মাঝে দিমিত্রি চেষ্টা করেছিলেন বল গোলে ঢোকানোর কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন। সেই সুযোগে পিছন থেকে এসে প্রায় গুরমিত্র কোল থেকে বল জালে জড়ান শুভাশিস। নর্থইস্ট কোচ, প্লেয়াররা গোল নিয়ে প্রতিবাদ করলেও রেফরি গোল দেন। ২-২ গোলে সমতায় ফেরে মোহনবাগান। নর্থইস্টে কোচের পরিবর্তনে একটা ছোট্ট ভুল হয়ে গেল এর পরই। মোহনবাগান বক্সে পুরো ম্যাচে আতঙ্ক তৈরি করা আলাদিনকে তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত করে দিলেন তিনি।
সঙ্গে মোহনবাগানের হয়ে শেষ কাজটি অবশ্য করে দেন জেসন কামিংস। ৮৬ মিনিটে সাহালের পাস থেকে কামিংসের ফিনিশে আইএসএল-এর প্রথম জয় পেল ঠিকই কিন্তু এই জয় নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। জয়ে ফিরল মোহনবাগান তবে ভাল ফুটবলে কবে ফিরবে সেটাই প্রশ্ন। যেভাবে আশিস রাই, লিস্টন কোলাসো, আপুইয়ারা খেই হারালেন তাতে এখনও অনেক কাজ বাকি মোলিনার। জয়ে বয়ে যাওয়ার সময় নেই এই মোহনবাগানের হাতে।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, শুভাশিস বোস, দীপেন্দু বিশ্বাস, আশিস রাই, থমাস আলড্রেড, লিস্টন কোলাসো, অনিরুদ্ধ থাপা (সাহাল আব্দুল সামাদ), আপুইযা, মনবীর সিং (জেসন কামিংস), গ্রেগ স্টুয়ার্ট (দীপক টাংরি), দিমিত্রিয়স পেত্রাতোস (জেমি ম্যাকলারেন)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার