সুচরিতা সেন চৌধুরী ○ ভুবনেশ্বর: ডুরান্ড কাপ জিতে যেখানে শেষ করেছিল মোহনবাগান সেখান থেকেই এএফসি কাপ গ্রুপ পর্বের খেলা শুরু দিল হুয়ান ফেরান্দোর ছেলেরা। আগের থেকে অনেক বেশি তৈরি, অনেকটাই দলগত ফুটবলের ফলে ওড়িশা এফসির বিরুদ্ধে ৪-০ গোলে জয়।
আগের রাত থেকেই ভুবনেশ্বর জুড়ে প্রবল বৃষ্টি। সকালে সাময়িক আকাশ পরিষ্কার হলেও দুপুর গড়াতেই আকাশ কালো করে ফিরে এল সেই বৃষ্টি। যা চলল ম্যাচ শুরুর আগে পর্যন্ত। ভেজা মাঠেই কিছুটা মন্থর গতিতে শুরু হল এএফসি কাপে ওড়িশা এফসি বনাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ম্যাচ। ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের গ্যালারির একটা অংশের দখল কিন্তু নিয়েছিলেন মোহনবাগান সমর্থকরা। অন্যদিকে মাঝে মাঝেই ওড়িশা, ওড়িশার হুঙ্কার উঠল। অ্যাওয়ে ম্যাচ হলে কী হবে কম যান না সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকেও উড়ল ‘সবুজমেরুন গর্ব’, ‘রক্তে আমার মোহনবাগানের’ ব্যানার। সমানে সমানে হুঙ্কার উঠল মোহনবাগানের নামেও।
তবে প্রথমার্ধের খেলায় কারও সেই ধার দেখা গেল না। একে অপরকে মেপে নিতে গিয়ে শেষ মুহূর্তে জোড়া হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হল ওড়িশা এফসির সব থেকে শক্তিশালী ডিফেন্ডার সেরিন ফলকে। প্রথমার্ধেই ১০ জনে হয়ে গেল সার্জিও লোবেরার দল। এদিন শুরুটা মোহনবাগান করলেও কিছু পর থেকে খেলার রাশ নিজেদের দখলে নিতে শুরু করে হোম টিম। কিন্তু কেউই সেরকম পজিটিভ আক্রমণ তুলে আনতে পারেননি। আক্রমণ হলেও তা ফিনিশ করার জন্য বক্সের মধ্যে কাউকে পাওয়া যায়নি।
লাল কার্ডের ঠিক আগে নিশ্চিত একটাই গোলের সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল ওড়িশা এফসি কিন্তু অল্পের জন্য সেই হেজ বাইরে চলে যায়। আর প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে প্রতিপক্ষ বক্সের মধ্য একদম একা গোলকিপারকে পেয়েও গোলে বল রাখতে ব্যর্থ মোহনবাগানের সাহাল আব্দুল সামাদ। সেই সামাদই দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে গোল করে ভুল শুধরে নিলেন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরুই হল বৃষ্টি নিয়ে। তখনও গুছিয়ে বসতে পারেনি বিরতি নিয়ে ফেরা গ্যালারি। তার মধ্যেই হুগো বুমৌসের থেকে বক্সের মধ্যে বল পেয়ে সামাদ ডানদিকের উপরের কর্নার দিয়ে বল জালে জরিয়ে দেন। প্রথমার্ধ শেষ হয়েছিল গোলশূন্যভাবে, দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই এগিয়ে গেল মোহনবাগান। অ্যাওয়ে ম্যাচে এগিয়ে গিয়ে অনেকবেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাল মোহনবাগানকে। যার ফল ৬৭ মিনিটে গোল করে ব্যবধান বাড়ালেন দিমিত্রি পেত্রাতোস।
বক্সের মধ্যে সাহাল আব্দুল সামাদের গোলমুখি শট বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ওড়িশা গোলকিপার অমরিন্দর সিং। কিন্তু বল নিজের দখলে রাখতে পারেননি। তাঁর হাত থেকে ছিটকে আসা বলে দিমিত্রির শট আর আটকাতে পারেননি অমরিন্দর। এর পরটা আর ওড়িশার কিছু করার ছিল না। পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ততক্ষণে বেরিয়ে গিয়েছে হোম টিমের হাত থেকে। যার পুরোপুরি সুযোগ নিল অ্যাওয়ে টিম। ১০ জনের ওড়িশার দুর্বলতার সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগাল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।
তৃতীয় গোলটি এল লিস্টন কোলাসোর মাথা্ থেকে। হুগো বুমৌস থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন মনবীর সিং। তাঁর শট হেডে ওড়িশা গোলে পাঠালেন সদ্য পরিবর্ত হিসেবে নামা লিস্টন কোলাসো। এদিন দুটো গোলের পিছনে ভূমিকা রেখে গেলেন মনবীর। ততক্ষণে রীতিমতো ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে ওড়িশা রক্ষণ। গোলের নিচে অসহায় দেখাল মোহনবাগানের প্রাক্তন গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংকে। তার মধ্যেই দলের চতুর্থ আর নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে ফেললেন দিমিত্রি।
দিমিত্রিকে বল নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে গোল ছেড়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন অমরিন্দর। কিন্তু অমরিন্দরের প্রচেষ্টাকে বুদ্ধি দিয়ে মাত দিলেন দিমিত্র। আলতো টোকায় অমরিন্দরের মাথার উপর দিয়েই বল পাঠালেন গোলে। মোহনবাগানের গোলগুলি এল ৪৬, ৬৭, ৭৯ ও ৮২ মিনিটে। প্রথমার্ধের অনেকটা সময় সমানে সমানে খেললেও দ্বিতীয়ার্ধে হারিয়ে গেল ওড়িশা এফসি। এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ জয় দিয়েই শুরু করল মোহনবাগান।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আনোয়ার আলি, ব্রেন্ডন হামিল, শুভাশিস বোস (গ্লেন মার্টিন্স), হেক্টর ইউয়েস্তে, অনিরুদ্ধ থাপা, হুগো বুমৌস (কিয়ান নাসিরি), সাহাল আব্দুল সামাদ (লিস্টন কোলাসো), আর্মান্দো সাদিকু (জেসন কামিন্স), মনবীর সিং (আশিস রাই)।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার