সুচরিতা সেন চৌধুরী: ন’য়ের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ে আরও বেশি লড়াকু ফুটবল দেখার প্রত্যাশা ছিল মোহনবাগানের তরফে। কিন্তু শুরুর কয়েক মিনিটের আক্রমণাত্মক ফুটবল কিছুক্ষণের মধ্যেই হারিয়ে গেল। প্রথমার্ধটা বেশ ম্যাড়ম্যাড়ে। ১০ মিনিটেই গ্রেগের গোলমুখি শট মাথার উপর দিয়ে দারুণ দক্ষতায় বাঁচিয়ে দেন পঞ্জাব এফসি গোলকিপার রবি কুমার। তার পর পুরো প্রথমার্ধে বলার মতো আর কিছুই নেই। যা ঘটল পুরোটাই দ্বিতীয়ার্ধে। এক কথায় ঘটনা বহুল দ্বিতীয়ার্ধ। গোল এল মোহনবাগানের ঘরে, নিশ্চিত গোলের সুযোগ অল্পের জন্য হাতছাড়া করল পঞ্জাব এফসি। তার পর থেকেই ম্যাচটা চলে গেল মোহনবাগানের দখলে। ম্যাচের সব গোলই এল দ্বিতীয়ার্ধে। ৩-০ গোলে জিতে প্লে-অফে শিলমোহর মোহনবাগানের।
প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ করার পর দ্বিতীয়ার্ধে ড্রেসিংরুম থেকে কোচের ভোকাল টনিক নিয়েই নেমেছিলেন প্লেয়াররা। যে কারণে প্রথমার্ধের খেলাটা দ্বিতীয়ার্ধে বদলে ফেলল মোহনবাগান। যার ফল ৫৭ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। তার আগেই অবশ্য এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল পঞ্জাব এফসি। ভিদালের পাস থেকে পেত্রসের নিশ্চিত গোলমুখি শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে গেল বাইরে। এর পর থেকে খেলাটা দখলে নিয়ে নিল হোম টিম মোহনবাগান।
৫৫ মিনিটে পঞ্জাবের নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্টের দু’মিনিটের মধ্যেই মোহনবাগানকে এগিয়ে দিলেন জেমি ম্যাকলারেন। দীপেন্দু বিশ্বাসের মাপা পাস বক্সের মধ্যে অসাধারণ রিসিভেই লেখা ছিল গোলের ঠিকানা। সেই বল সময় নিয়েই গোলে শট নিয়েছিলেন সবুজ-মেরুনের এই বিদেশি। যা আটকাতে পারেননি মোহনবাগানের একাধিক গোলের সুযোগ আটকে দেওয়া রবি কুমার। ৬০ মিনিটে তেমনই দীপক টাংরির একটি গোলমুখি শট অসাধারণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে বাঁচিয়ে দিলেন তিনি। তবে তার পরই আবার ব্যবধান বাড়িয়ে নিল মোহনবাগান। এবার গোলের কারিগর লিস্টন কোলাসো।
যা নিয়ে সাময়িক সংশয় তৈরি হল ঠিকই। প্রশ্ন উঠল “গোল কার?”। গ্রেগ স্টুয়ার্টের অভিব্যক্তি আর গোলের সামনে তাঁর উপস্থিতি সাময়িকভাবে মনে হয়েছিল গোল করেছেন তিনিই। কিন্তু আদতে তেমনটা নয়। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাস খেলার পর বাঁ দিক থেকে বক্সের মধ্যে বল রেখেছিলেন লিস্টন কোলাসো। তখন গোলের সামনেই দাঁড়িয়ে গ্রেগ। বল বাঁক খেয়ে চলে যায় গোলে। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল মাঝে একটা হালকা টাচ রয়েছে গ্রেগের। গ্রেগকেও দেখা যায় নিজের বুক চাপড়াতে চাপড়াতে সাইডলাইনের দিকে ছুটে যেতে। তখন কিছুটা অবাক হয়ে থমকে যান লিস্টন। অভিব্যক্তিতে ছিল প্রশ্ন “গোল কার?”। গ্রেগের গোল ভেবে তাঁর মাথায় হাতও বুলিয়ে দেন লিস্টন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জানা যায় গোল লিস্টনেরই।
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের ঠিক শেষ মুহূর্তে নিজের দ্বিতীয় ও দলের তৃতীয় গোলটি করে গেলেন জেমি ম্যাকলারেন। প্রতিপক্ষের মিডফিল্ডার আশিস প্রধানের ব্যাক পাস ধরে বক্সের মধ্যে ছোট্ট টোকায় ম্যাকলারেনকে দিয়েছিলেন জেসন কামিন্স। গোল করতে ভুল করেননি ম্যাকলারেন। ২০ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে লিগ-শিল্ডের খুব কাছে পৌঁছে গেল মোহনবাগান। হাতে রয়েছে আর চারটি ম্যাচ। সেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে মোহনবাগানকে পেতে হবে আর মাত্র ছয় পয়েন্ট। তাহলেই কেল্লাফতে। ম্যাজিক ফিগার ৫২ পয়েন্টে পৌঁছতে মোহনবাগানের জন্য দুটো জয়ই যথেষ্ট।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, শুভাশিস বোস, দীপেন্দু বিশ্বাস, আলবার্তো গ্রেগ, আশিস রাই (আশিক কুরুনিয়ান), মনবীর সিং, সাহাল আবদুল সামাদ (অভিষেক সূর্যবংশী), দীপক টাংরি, লিস্টন কোলাসো, গ্রেগ স্টুয়ার্ট (জেসন কামিন্স), জেমি ম্যাকলারেন

কেরিয়ারে ৫০টি ক্লিনশিট করে ফেলেছেন মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ। বুধবার ম্যাচের আগে তাঁকে সংবর্ধিত করা হল। তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হল ৫০ লেখা জার্সি। এদিনও পঞ্জাবের বিরুদ্ধে ক্লিনশিট রাখলেন এই মুহূর্তে দেশের সেরা গোলকিপার।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার