অলস্পোর্ট ডেস্ক: যে দাপট দেখিয়ে পর পর জিতে এক ধাক্কায় চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে উঠে এসেছে খালিদ জামিলের জামশেদপুর এফসি তাতে তাদের নিয়ে যে বাড়তি ভাবনা থাকবে মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্টের সেটাই স্বাভাবিক। যা জামশেদপুরে আইএসএল ২০২৪-২৫-এর ফিরতি ডার্বি জয়ের পরের ম্যাচ খেলতে নামার আগে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনা। এই ম্যাচ খেলতে নামার আগে যখন দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের থেকে আট পয়েন্ট এগিয়ে ছিল মোহনবাগান তেমনই সেই আট পয়েন্ট পিছনেই ঘাঁড়ে নিঃশ্বাস ফেলছিল জামশেদপুর এফসি। কারণ এই ম্যাচের আগে পর্যন্ত লিগ টেবলের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দল ছিল একই পয়েন্টে। যে কারণে এফসি গোয়া, বেঙ্গালুরু এফসির মতো জামশেদপুরও তাদের নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে মোহনবাগানকে। এই ম্যাচের পর সেই ভাবনা আরও বাড়ল তো বটেই। তবে শুক্রবার জামশেদপুরের মাঠে শুরু থেকেই যে দাপট দেখাল মোহনবাগান তাতে বড় ব্যবধানে জিতে কলকাতায় ফিরতে পারত, কিন্তু তেমনটা হল না। কলকাতা দলের ইতিহাস বজায় থাকল, ডার্বি জয়ের পরের ম্যাচ জেতা হল না মোহনবাগানের। ১-১ গোলে ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে হচ্ছে কলকাতার দলকে।
এদিন শুরু থেকেই পর পর আক্রমণে জামশেদপুর রক্ষণকে রীতিমতো চাপে রেখেছিল মোহনবাগান আক্রমণ।১৯ মিনিটে লিস্টন কোলাসো যে গোল মিস করলেন সেটা তাঁর ফিনিশিং ক্ষমতা নিয়ে আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল। যেভাবে গোলকিপারকে একা সামনে পেয়েও একহাত দূর থেকে বল গোলে রাখতে পারলেন না। প্রথমার্ধের শেষেও গোল নষ্টের তালিকায় নাম লেখালেন লিস্টন। দ্বিতীয়ার্ধে তাঁর নিশ্চিত গোলের শট মাথার উপর দিয়ে বাইরে পাঠালেন জামশেদপুর গোলকিপার অ্যালবিনো গোমস। তবে তাঁর সহজ সুযোগ নষ্টকে ভুলিয়ে দিল শুভাশিস বসুর ২৫ মিনিটের গোল। কর্নার থেকে বক্সের মধ্য়ে বল রেখেছিলেন জেসন কামিন্স। সেই বল হেড করে নামিয়ে দেন টম আলড্রেড। আর সেই বলই জটলার মধ্যে থেকে ব্যাক হিলে প্রতিপক্ষের জালে পাঠান মোহনাবাগান অধিনায়ক ও রক্ষণের ভরসা শুভাশিস। এই নিয়ে তাঁর চারটি গোল হয়ে গেল এই মরসুমে।
জামশেদপুর বেশিরভাগ ম্যাচেই দ্বিতীয়ার্ধে অনেকবেশি ভাল খেলে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর নজির রেখেছে। এদিনও সেটাই দেখা গেল। প্রথমার্ধ ০-১ গোলে পিছিয়ে থেকেই শেষ করেছিল খালিদ জামিলের দল। দ্বিতীয়ার্ধে সফলতম ভারতীয় কোচের ভোকাল টনিক নিয়েই মাঠে নামলেন সিভেরিও, প্রতীকরা। যা তাঁদের খেলায় স্পষ্ট ধরা পড়ল। প্রথমার্ধের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ল হোম টিমের। তবে প্রতিপক্ষের মাঠে গ্যালারি থেকে অনেকবেশি শোনা গেল ‘মোহনবাগান মোহনবাগান’ ধ্বনি। আর সেটাই আক্রমণে আবার ফেরাল মোহনবাগানকে। যা থেকে অবশ্য আর গোল এল না। যদিও ততক্ষণে সমতায় ফিরেছে জামশেদপুর। এই গোলের পিছনে ভূমিকা থেকে যাবে মোহনবাগান রক্ষণের।
৬০ মিনিটে যেভাবে প্রায় নিজের বক্স থেকে সোলো রানে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়লেন জামশেদপুরের ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে তাতে থমকে গেল মোহনবাগানের পুরো দল। মাঝ, মাঠ রক্ষণ হয়ে গোলকিপার, সবাইকে একাই পরাস্ত করলেন তিনি এবং সমতায় ফিরল জামশেদপুর। অসাধারণ দক্ষতায় রক্ষণ সামলানোর পাশাপাশি গোল করে ম্যাচের সেরাও এজে। জামশেদপুর থেকে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফিরতে চেয়েছিল মোহনবাগান। চ্যাম্পিয়নশিপের লক্ষ্যে এই পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাও মন্দের ভাল এক পয়েন্ট নিয়ে ফিরছে দল। এক সঙ্গে তিন দল ঘাঁড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে মোহনবাগানের। সেই অবস্থায় পয়েন্ট টেবলে ব্যবধান বাড়িয়ে রাখাটা জরুরি ছিল গতবারের শিল্ড জয়ীদের জন্য।
এর সঙ্গে মোহনবাগান কোচকে ভাবতে হবে দলের ফুটবল নিয়েও। জয় আসছে, পয়েন্ট আসছে ঠিকই কিন্তু খেলায় সেই অসাধারণত্ব নেই যা লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা দলের থাকা উচিত ছিল। এবং জয় আসছে এক, দুই গোলের ব্যবধানে। সব মিলে কিছুটা ভাগ্যও সহায় হচ্ছে তাদের, সব সময় সেটা হবে না। হাতে আর মাত্র আট ম্যাচ রয়েছে চ্যাম্পিয়নশিপের স্বপ্ন দেখা এই দলের সামনে। ১৬ ম্যাচে ৩৬ পয়েন্ট নিয়েই শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মোহনবাগান। অন্যদিকে ১৫ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে জামশেদপুর এফসি। এই ম্যাচ শেষে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দলের থেকে আট পয়েন্টের ব্যবধান ধরে রাখল মোহনবাগান।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, শুভাশিস বোস, টম আলড্রেড, আলবার্তো রডরিগেজ (গ্রেগ স্টুয়ার্ট), দীপক টাংরি, আশিস রাই, লিস্টন কোলাসো, আপুইয়া, মনবীর সিং, জেসন কামিন্স, জেমি ম্যাকলারেন (দিমিত্রি পেত্রাতোস)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার