Wednesday, February 19, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলমোহনবাগানের বিরুদ্ধে লিগ পর্বে প্রথম হার এফসি গোয়ার

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লিগ পর্বে প্রথম হার এফসি গোয়ার

অলস্পোর্ট ডেস্ক: গত ম্যাচে জয়ের সরণিতে ফেরার পর সেই পথেই রয়ে গেল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। বুধবার ফতোরদার জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এফসি গোয়াকে ১-০-য় হারিয়ে তিন নম্বরে উঠে এল আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের দল। চলতি লিগে এই প্রথম কোনও ম্যাচ হারল গোয়ার দলটি এবং সেটি গতবারের কাপ চ্যাম্পিয়ন সবুজ-মেরুন বাহিনীর কাছে। ডিসেম্বরে এই এফসি গোয়ার কাছেই ঘরের মাঠে নাস্তানাবুদ হয়ে ১-৪-এ হেরেছিল তারা। এ বার গোয়ার মাঠে তাদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল কলকাতার দল।

বুধবার ফতোরদায় একেবারে মাপজোক করা পারফরম্যান্স দেখিয়ে প্রয়োজনীয় তিন পয়েন্ট তুলে নেয় মোহনবাগান। গোল পাওয়ার জন্য একটুও তাড়াহুড়ো করেনি তারা। শুরুর দিকে এফসি গোয়া তাদের চাপে রাখার চেষ্টা করলেও ক্রমশ খেলায় ফিরে আসে সবুজ-মেরুন বাহিনী এবং সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। সেই সুযোগ আসে ম্যাচের ৭৪ মিনিটের মাথায় এবং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধারণ এক গোল করেন অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। এ দিন মোহনবাগানের রক্ষণও তাদের ভূমিকা নিখুঁত ভাবে পালন করে।

বুধবারের এই জয়ের ফলে ১৩ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে উঠে এল বাগান। একই সংখ্যক ম্যাচে মাত্র দুই পয়েন্ট বেশি নিয়ে তাদের ওপরে এফসি গোয়া। শীর্ষস্থানীয় ওডিশা এফসি-র সংগ্রহ ৩১ পয়েন্ট। কিন্তু তাদের ম্যাচের সংখ্যা ১৫। ফলে দুই ও তিন নম্বর দল যে সের্খিও লোবেরার দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা শুরু করে দিয়েছে, তা বলাই যায়। যত এগোচ্ছে আইএসএল, শীর্ষে ওঠার দৌড় ততই জমে উঠছে।        

গত ম্যাচের দলে চারটি পরিবর্তন করে এ দিন দল নামায় মোহনবাগান এসজি। দীপক টাঙরি, দীপ্পেন্দু বিশ্বাস, আশিস রাই ও আরমান্দো সাদিকু প্রথম এগারোয় ছিলেন। জেসন কামিংস ও লিস্টন কোলাসোকে রিজার্ভ বেঞ্চে রাখা হয়। আগের দিনের মতোই তিন ব্যাক নিয়ে দল সাজায় তারা। অন্য দিকে, এফসি গোয়া গত ম্যাচের প্রথম দলে দুটি পরিবর্তন করে ৪-২-৩-১-এ দল সাজায়।

প্রথমার্ধে কোনও পক্ষই সে ভাবে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। এফসি গোয়ার আক্রমণের তীব্রতা বেশি থাকলেও বারবার ফাইনাল থার্ডে গিয়ে আটকা পড়ে যায় তারা। হোম টিমের সাতটি শটের মধ্যে তিনটি ছিল গোলে। সেখানে মোহনবাগানের তিনটির মধ্যে দুটি শট ছিল লক্ষ্যে।

শুরু থেকেই প্রতিপক্ষকে চাপে রাখে এফসি গোয়া। ১৩ মিনিটের মাথায় শততম আইএসএল ম্যাচ খেলা ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজের ক্রসে এক মাপা ভলিতে জালে বল জড়িয়ে দেন ওদেই ওনাইন্দিয়া। কিন্তু তার আগেই অফ সাইডের সঙ্কেত দিয়ে দেন সহকারী রেফারি। ৩৫ মিনিটের মাথায় বরিসের পাস থেকে বল পেয়ে বক্সের মধ্যে কার্লোস মার্তিনেজকে গোলের বল সাজিয়ে দেন নোয়া সাদাউই। কিন্তু নোয়ার শট পোস্ট ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। ৩৯ মিনিটের মাথায় ব্র্যান্ডনের গোলমুখী শট দুর্দান্ত ভাবে ব্লক করেন শুভাশিস। 

মোহনবাগানও এ দিন মাঝে মাঝে পাল্টা চাপ দেয়। ২১ মিনিটের মাথায় পেট্রাটসের হাওয়ায় ভাসানো বাঁক খাওয়া শট গোলে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে ডানদিকে কার্যত উড়ে গিয়ে দুর্দান্ত সেভ করেন গোলকিপার অর্শদীপ সিং। এই সময় থেকেই খেলায় ফেরা শুরু করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ২৯ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে মনবীর, পেট্রাটসের পা ঘুরে আসা বলে ঠিকমতো শট নিতে পারলে গোল পেতেন অনিরুদ্ধ থাপা। ৪২ মিনিটের মাথায় সহালের পাস থেকে বল পেয়ে গোলের উদ্দেশ্যে শট নেন আশিস রাই। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

প্রথমার্ধে দুই দলের পারফরম্যান্সকে পাশাপাশি রাখলে এফসি গোয়াকেই এগিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু নিজেদের গোলের সামনে মোহনবাগানের রক্ষণ দুর্ভেদ্য হয়ে ওঠায় গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগানের পারফরম্যান্সে আরও গতি ও ধার আসবে, এমনই আশা করা গেলেও শুরু থেকেই তা হয়নি।

বরং দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ঘন ঘন আক্রমণ করেন নোয়া, কার্লোসরা। ৫২ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে নোয়ার শট দুর্দান্ত সেভ করেন বিশাল কয়েথ। পরের মিনিটেই ফের তিনি ৩৫ গজ দূর থেকে শট নেন, যা গোলের বাইরে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পরিবর্ত বেঞ্চ থেকে নামেন জনি কাউকো। ৫৯ মিনিটে টাঙরির জায়গায় নামেন লিস্টন কোলাসো।  তুলে নেওয়া হয় ফের হলুদ কার্ড দেখা দীপক টাঙরিকেও। এই দুই ফুটবলার মাঠে নেমে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু প্রতিবারই গোয়ার ডিফেন্সে আটকা পড়ে যান তাঁরা। বিশেষ করে মোহনবাগানের প্রাক্তনী কার্ল ম্যাকহিউ এ দিন প্রায় পাঁচিলের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর প্রাক্তন ক্লাবের আক্রমণের সামনে।

৬৩ মিনিটের মাথায় ওদেইকে ডজ করে বক্সে ঢুকে পড়েন কাউকো। কিন্তু সেই ওদেইয়ের ট্যাকলেই বক্সের মধ্যে বলের নিয়ন্ত্রণ হারান তিনি। পরবর্তী মিনিটেই মাঝমাঠ থেকে প্রায় একা দৌড়ে প্রতিপক্ষের বক্সের মাথায় চলে আসেন কোলাসো। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই আটকে যান তিনি।

কলকাতার দলের ক্রমশ বাড়তে থাকা আক্রমণ সামলাতে যখন ব্যস্ত এফসি গোয়া, তখনই ৭৪ মিনিটের মাথায় বহু আকাঙ্খিত গোলটি করে ফেলেন দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। মাঝমাঠ থেকে লম্বা ফরোয়ার্ড পাসে প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে পাঠান কাউকো, যা ক্লিয়ার করতে বেরিয়ে আসেন গোলকিপার অর্শদীপ। কিন্তু তাঁর ক্লিয়ারেন্স প্রায় ছিনিয়ে নেন পেট্রাটস এবং সোজা গোলের দিকে ভলি মারেন। এই গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তখনও গোলে ফিরতে পারেননি অর্শদীপ, যার ফলে গোল পুরো ফাঁকা হয়ে যায়। পেট্রাটসের ভলি সেই ফাঁকা গোলেই ঢুকে পড়ে (১-০)।

এই গোলের পরের মিনিটেই ডানদিক দিয়ে ওঠা অস্ট্রেলীয় তারকা গোয়ার বক্সে ঢুকে একটি লব করেন, যা দূরের পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়। তবে রেফারি ততক্ষণে অফসাইডের বাঁশি বাজিয়ে দেন। গোল খাওয়ার পর এফসি গোয়া সমতা আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও তাদের কড়া পাহাড়ায় রাখেন সবুজ-মেরুন ডিফেন্ডাররা। প্রতিপক্ষের আক্রমণ মাঝমাঠ থেকেই প্রতিরোধ করা শুরু করে তারা।

এরই মধ্যে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান মনবীর সিং। বাঁ দিক দিয়ে উঠে বক্সে ঢুকে গোলের সামনে থেকে তিনি অদ্ভূত ভাবে নিজে গোলে শট না নিয়ে কাট ব্যাক করে বল দিতে যান বক্সের মাঝখানে থাকা অরক্ষিত পেট্রাটসকে। কিন্তু তাঁর পায়ে বল পৌঁছনোর আগেই তার দখল নিয়ে ফেলে প্রতিপক্ষ। ছ’মিনিটের বাড়তি সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও মোহনবাগানের দাপটই ছিল বেশি।

এই বাড়তি সময়ে বক্সের সামনে ফ্রি কিক আদায় করেন লিস্টন। তাঁর ফ্রি কিক থেকে বল গোলে ঢোকার ঠিক আগে তা আটকে দেন অর্শদীপ। তবে এই সময়ে কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি এফসি গোয়া।  

মোহনবাগান এসজি দল (৩-১-৪-২)বিশাল কয়েথ (গোল), দীপ্পেন্দু বিশ্বাস, হেক্টর ইউস্তে, শুভাশিস বোস, দীপক টাঙরি (অভিষেক সূর্যবংশী-৫৯), আশিস রাই, অনিরুদ্ধ থাপা (জনি কাউকো-৪৫), সহাল আব্দুল সামাদ (লালরিনলিয়ানা হ্নামতে-৭৩), মনবীর সিং, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস (কিয়ান নাসিরি-৯২), আরমান্দো সাদিকু (লিস্টন কোলাসো-৫৯)।

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments