Friday, December 6, 2024
No menu items!
Google search engine
Homeআইএসএলঘরের মাঠে সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ ওড়িশা এফসি মেনে নিয়েই আত্মবিশ্বাসী মোহনবাগান

ঘরের মাঠে সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ ওড়িশা এফসি মেনে নিয়েই আত্মবিশ্বাসী মোহনবাগান

অলস্পোর্ট ডেস্ক: রবিবার সন্ধ্যায় যখন ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এসজি ও গত মরশুমের সেমিফাইনালিস্ট ওড়িশা এফসি, তখন এই দুই দলের দ্বৈরথ ছাড়াও আরও এক দ্বৈরথ দেখার আগ্রহ নিয়েও গ্যালারিতে হাজির হবে উৎসুক ফুটবলপ্রেমীরা। রয় কৃষ্ণা, হুগো বুমৌসকে কী ভাবে আটকাবে মোহনবাগান রক্ষণ, তা দেখার আগ্রহ নিয়ে গ্যালারিতে হাজির থাকবেন ফুটবলপ্রেমীরা।

একটা সময় তাঁরা ছিলেন মোহনবাগান জনতার চোখের মণি। বহু ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক ছিলেন তাঁরা। তবে রবিবার তাঁরা থাকবেন তাঁদের প্রতিপক্ষ শিবিরে। ফুটবল এমনই। এমন ঘটনা সারা বিশ্বের ফুটবলেই ঘটে থাকে প্রতি বছর। রবিবার এই ম্যাচে রয় আর হুগোকে আটকানোর জন্য কী করবেন বাগান গোলকিপার ও ডিফেন্ডাররা, তা জানার জন্য উৎসাহী মানুষের অভাব হবে না বোধহয়। অবশ্য প্রতিপক্ষে আরও এক প্রাক্তনী রয়েছেন, গোলকিপার অমরিন্দর সিং।

দু’জনে মিলে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে এক সময়ে নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। রয় তাদের হয়ে ২১টি গোল করেছেন, হুগোর আছে ১১টি গোল। শুধু যে গোল করেছেন, তা নয়, প্রচুর গোল করিয়েওছেন। হুগোর অ্যাসিস্টের সংখ্যা যেখানে ৯, সেখানে রয় ১২টি গোলে সাহায্য করেছেন। এমন নজির ইর্ষা করার মতোই।

কিন্তু এখন দু’জনেই বাগান ছেড়ে যোগ দিয়েছেন প্রতিবেশী রাজ্যের দল ওডিশা এফসি-তে। হুগো এ বছরই সের্খিও লোবেরার দলে সই করেছেন। রয়ের একাধিক মরশুম হয়ে গেল সেখানে। ওডিশার হয়ে নয় নয় করে ৩২টি ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে রয়ের। ১৬টি গোল করেছেন। হুগো খেলেছেন ছ’টি ম্যাচ। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ম্যাচ তাঁদের কাছে নিশ্চয়ই ‘স্পেশ্যাল’ হয়ে উঠবে। গতবার সেমিফাইনালে তাদের ছিটকে দিয়েই ফাইনালে উঠেছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। সেই হারের বদলাও নিশ্চয়ই নিতে চাইবেন লোবেরা।

এমনিতেই এই ম্যাচে তাঁদের জেতার তাগিদ মারাত্মক। গত দু’টি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি তারা। গত ম্যাচে ৪০ মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে নর্থইস্টের ৩-২ জয়ের পথ সুগম করেন আলাদ্দিন আজারেই। দ্বিতীয়ার্ধে হুগো বুমৌস ও দিয়েগো মরিসিও দু’টি গোল শোধ করলেও তা যথেষ্ট ছিল না। কারণ, ততক্ষণে নর্থইস্টকে আরও একটি গোল এনে দেন গিলেরমো ফার্নান্ডেজ।

তার আগে মুম্বইয়ে ২৩ মিনিটের মধ্যে ১-১ হয়ে গেলেও বাকি সময়ে দুই দলই তাদের গোলের মুখ কার্যত ‘সিল’ করে দেওয়ায় সেই দ্বৈরথ আর এর বেশি এগোতে পারেনি। মুম্বই সিটি এফসি ও ওডিশা এফসি তাদের রক্ষণ-দক্ষতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সেই ম্যাচে।

এ বার আইএসএলের শুরুটা ভাল করতে না পারলেও ক্রমশ ছন্দে ফিরছিল তারা। চেন্নাইন এফসি ও পাঞ্জাব এফসি-র কাছে হার দিয়ে মরশুম শুরুর পর তারা ঘরের মাঠে জয়ে ফেরে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে। কিন্তু গত ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করে। ইস্টবেঙ্গলকেও ২-১-এ হারায় তারা। কিন্তু গত দুই ম্যাচেই ফের ছন্দপতন ঘটেছে তাদের। রবিবার মোহনবাগানকে হারিয়ে ছন্দ ফেরানোই হতে চলেছে সের্খিও লোবেরার দলের একমাত্র লক্ষ্য। ফের দেখা যাবে দুই স্প্যানিশ মস্তিষ্কের লড়াই।

অন্যদিকে, পরপর দুই ডার্বিতে দাপুটে ফুটবল খেলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে ২-০-য় ও মহমেডান এসসি-কে ৩-০-য় হারায় মোহনবাগান এসজি। আধিপত্য বিস্তার করে জেতে হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধেও। দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, জেসন কামিংসকে প্রথম এগারোয় না রেখেও এই দুই ম্যাচে অসাধারণ জয় পায় মেরিনাররা। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের জুটি যে এ মরশুমে সুপারহিট হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত তাঁরা এই তিন ম্যাচেই রাখেন। রক্ষণে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও স্কটিশ টম অ্যালড্রেড একসঙ্গে খেলায় দলের রক্ষণ দুর্ভেদ্য হয়ে উঠেছে। ফলে প্রথম তিন ম্যাচে সাত গোল খাওয়ার পর তিন ম্যাচে নিজেদের গোল অক্ষত রেখে সাত গোল দেয় তারা।

লিগ টেবলে বেঙ্গালুরু এফসি যেখানে আট ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট পেয়ে এক নম্বরে রয়েছে, সেখানে কলকাতার দলের খাতায় ১৩ পয়েন্ট জমা হলেও বেঙ্গালুরুর চেয়ে দু’টি ম্যাচ কম খেলেছে তারা। শীর্ষে থাকা বেঙ্গালুরু এফসি পরপর দু’টি ম্যাচে জিততে না পারায় যে সুবিধা পেয়ে গিয়েছে মোহনবাগান, রবিবার না জিততে পারলে সেই সুবিধা কাজে লাগবে না তাদের। ওডিশাকে হারাতে পারলে যে লিগ টেবলের এক নম্বরের দোরগোড়ায় চলে যাবেন জেমি ম্যাকলারেনরা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

কিন্তু এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের শিবিরে দুঃসংবাদ, গ্রেগ স্টুয়ার্টের চোট। রবিবার সম্ভবত খেলতে পারবেন না। এ মরশুমে ছ’টি ম্যাচে দলের পাঁচটি গোলে অবদান আছে তাঁর। একটি গোল করেছেন, চারটি করিয়েছেন। ১৯টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। আক্রমণে এমন একজন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের অভাব পূরণ করা মোটেই সোজা নয়। হয়তো তাঁর জায়গায় দিমিত্রিয়স পেট্রাটস বা জেসন কামিংসদের মধ্যে কেউ একজন শুরু থেকে খেলবেন। কিন্তু স্টুয়ার্টের মতো কার্যকারিতা দিতে পারবেন কি না তাঁরা, সেটাই প্রশ্ন।

তবে দল হিসেবে ভাল খেলছে মোহনবাগান। রক্ষণ থেকে আক্রমণ, সবেতেই ক্রমশ উন্নতি করছে। তাই এই ম্যাচেও তারা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে, এমনই আশা রয়েছে সমর্থকদের। গত তিন ম্যাচে গোল না খাওয়া রক্ষণ তিন বিদেশী অ্যাটাকারকে আটকে দিতে পারলে অনেকটাই কাজ সারা হয়ে যাবে। রয়, বুমৌসরা যে ফর্মে এখন রয়েছেন, অতীতে তার চেয়ে অনেক ভাল ফর্মে দেখা গিয়েছে তাঁদের। সম্ভবত সেই ফর্মের অপেক্ষায় রয়েছেন কোচ লোবেরা।

এ বার বেশিরভাগ বিদেশী ফুটবলারকেই দলে রেখে দিয়েছে ওডিশা এফসি। রয়, কার্লোস দেলগাদো, আমেদ জাহু, মুর্তাদা ফল, দিয়েগো মরিসিও—সবাই রয়েছেন লোবেরার দলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন হুগো বুমৌস। এ মরশুমে লোবেরার দলে যোগ দিয়েছেন বাংলার ফরোয়ার্ড রহিম আলি, রোহিত কুমার ও রেইনিয়ে ফার্নান্ডেজ। অমেয় রানাওয়াডের চুক্তিও বাড়িয়েছে তারা। গত ম্যাচে রয় ও মরিসিওকে নিয়ে শুরু করার পর বিরতির পর তাঁদের সঙ্গে বুমৌসকে জুড়ে দেন লোবেরা। তিনি একটি গোলও করেন। মরিসিও-ও গোল করেন। তবে রয় কোনও গোল পাননি।

এ পর্যন্ত তিনটি গোল করেছেন রয়, মরিসিও চারটি। বুমৌস একটি গোল করেছেন ও মুর্তাদা ফল দু’টি। মোট সাত ম্যাচে ১২ গোল পেয়েছে ওডিশা, সেখানে একটি ম্যাচ কম খেলে ১২ গোল করেছে মোহনবাগান। ম্যাকলারেন, পেট্রাটস, কামিংসরা বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠবেন, না রয়-মরিসিও-বুমৌসরা, এটাই রবিবারের ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠতে পারে অনায়াসে।

পরিসংখ্যান যা বলছে

মোহনবাগানের বিরুদ্ধে আইএসএলের শেষ তিনটি হোম ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে কলিঙ্গবাহিনী। এর মধ্যে একটিতে জিতেছে তারা। বাকি দুটি ড্র করেছে। সের্খিও লোবেরার প্রশিক্ষণে ১৭টি হোম ম্যাচের মধ্যে ১৬টিতেই গোল পেয়েছে ওডিশা এফসি। শুধু এ বছর ফেব্রুয়ারিতে মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই গোলশূন্য ছিল তাদের ম্যাচ। তারপর থেকে ওডিশা এফসি আটটি হোম ম্যাচেই অন্তত দু’টি করে গোল করেছে।

তাদের শেষ তিনটি ম্যাচে একাধিক গোল করে এবং কোনও গোল না খেয়ে জয় পেয়েছে মোহনবাগান। চলতি লিগে সেট পিস থেকে সবচেয়ে বেশি (৭) গোল করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। এই তালিকায় তাদের পরেই আছে ওডিশা এফসি (৬)। গত তিনটি ম্যাচেই সেট পিস থেকে গোল পেয়েছে বাগান-বাহিনী।

সের্খিও লোবেরার প্রশিক্ষণে রবিবার শততম ম্যাচ খেলতে নামবেন আহমেদ জাহু। ওডিশার ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড দিয়েগো মরিসিও আইএসএলে শুধু মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই গোল করতে পারেননি। অন্য সব দলের বিরুদ্ধে গোল আছে তাঁর। কলিঙ্গবাহিনীর বিরুদ্ধে মোট আটটি গোলে অবদান আছে গ্রেগ স্টুয়ার্টের। তিনটি গোল করেছেন ও পাঁচটি অ্যাসিস্ট করেছেন। আইএসএলের একমাত্র হ্যাটট্রিকটি তিনি করেন ওডিশার বিরুদ্ধেই।

দ্বৈরথের ইতিহাস

ইন্ডিয়ান সুপার লিগের পরিসংখ্যান এগিয়ে রেখেছে মোহনবাগান-কেই। গত চার মরশুমে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ১১বার। তার মধ্যে পাঁচবার জিতেছে কলকাতার দল। পাঁচটিতে ড্র হয়। ওডিশা এফসি এখন অবধি আইএসএলে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে একটিমাত্র ম্যাচ জিতেছে। ২০২০-২১ মরশুমে প্রথমবারের মুখোমুখি গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়। দ্বিতীয় লেগও ড্র হয় ১-১-এ। ২০২১-২২ মরশুমে দু’বারই জেতে তৎকালীন এটিকে মোহনবাগান। প্রথমবার ১-০-য় ও দ্বিতীয়বার ৪-১-এ। ২২-২৩ মরশুমে প্রথম মুখোমুখিতে গোলশূন্য ড্র হয়। দ্বিতীয়বার ২-০-য় জেতে এটিকে মোহনবাগান। নক আউটে প্রথমার্ধে হুগো বুমৌস ও দ্বিতীয়ার্ধে পেট্রাটসের গোলে ম্যাচ জিতে নেয় তারা। গত মরশুমে প্রথম লেগে ২-২ ড্র হয়। দ্বিতীয় ম্যাচ গোলশূন্য হয়। সেমিফাইনালের প্রথম লেগে ওডিশা একমাত্র জয়টি পায় ২-১-এ। দ্বিতীয় লেগে মোহনবাগান ২-০-য় জিতে ফাইনালে ওঠে।

ম্যাচ- ওডিশা এফসি বনাম মোহনবাগান এসজি

ভেনু- কলিঙ্গ স্টেডিয়াম, ভুবনেশ্বর

সময়- ১০ নভেম্বর, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০

সরাসরি সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং

স্পোর্টস ১৮-৩- বাংলা, স্পোর্টস ১৮ খেল ও স্পোর্টস ১৮-২- হিন্দি, স্পোর্টস ১৮-১ এসডি ও এইচডি- ইংলিশ; জিও সিনেমা– বাংলা, হিন্দি, ইংলিশ, মালয়ালাম

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments