অলস্পোর্ট ডেস্ক: দু’সপ্তাহ আগে ঘরের মাঠে ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে হারিয়েছিল বেঙ্গালুরু এফসি। সে দিন এক গোলে জিতেছিল তারা। কিন্তু শনিবার ঘরের মাঠে তারা কলকাতার আর এক প্রধান এবং খাতায়-কলমে আরও শক্তিশালী দল মোহনবাগান এসজি-কে হারাল ৩-০-য়। মাঝখানে হায়দরাবাদ এফসি-কেও তারা হারিয়েছিল তিন গোলে। বোঝাই যাচ্ছে, সুনীল ছেত্রীর দল দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে। লিগের শুরুতেই টানা তিন ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রাখল তারা। এত ভাল সূচনা আইএসএলে আর কখনও করেনি তারা।
গত আইএসএলে ঘরের মাঠে মোহনবাগানের কাছে চার গোলে হেরেছিল নীল-বাহিনী। এ দিন রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সেই হারের বদলা নিল তারা। ন’মিনিটের মাথায় স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড এডগার মেনডেজের গোল দিয়ে এই জয়যাত্রা শুরু করে গতবারে লিগ তালিকায় থাকা দশ নম্বরে থাকা দলটি। ২০ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান সুরেশ ওয়াংজাম। বিরতির পর পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে টানা তৃতীয় জয় এনে দেন সুনীল ছেত্রী। এই গোলটি করে আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় এক নম্বরে চলে আসেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
শনিবারের এই জয়ের ফলে বেঙ্গালুরু এফসি লিগ টেবলের শীর্যস্থান দখল করে নিল। গোল পার্থক্যে পাঞ্জাব এফসি-কে (৪) পিছনে ফেলে দিয়ে এক নম্বরে চলে আসে তারা (৭)। অন্যদিকে, মরশুমের প্রথম হারের ফলে চার পয়েন্ট নিয়ে ছ’নম্বরে নেমে এল গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়নরা। আইএসএলে এটিই সবচেয়ে খারাপ সূচনা তাদের। এর আগে ২১-২২ ও ২২-২৩ মরশুমে তারা প্রথম তিন ম্যাচ থেকে ছ’পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। এ বারের পারফরম্যান্স তার চেয়েও খারাপ।
অ্যাওয়ে ম্যাচ বলেই হয়তো এ দিন চার ব্যাকে খেলা শুরু করে মোহনবাগান। জেসন কামিংস ও অভিষেক সূর্যবংশীকে প্রথম এগারোয় ফিরিয়ে আনেন তাদের কোচ হোসে মোলিনা। কিন্তু রক্ষণে লোক বাড়ানো সত্ত্বেও প্রথম কুড়ি মিনিটের মধ্যে দু-দু’টি গোল খেয়ে যায় তারা।
শুরু থেকেই তাদের প্রবল চাপে ফেলা বেঙ্গালুরু এফসি নবম মিনিটেই প্রতিপক্ষ রক্ষণের খেলোয়াড়দের বোঝাপড়ার অভাবকে কাজে লাগিয়ে প্রথম গোল পেয়ে যায়। কর্নার থেকে বল পেয়ে হেড করে দ্বিতীয় পোস্টের দিক থেকে সামনে মেনডেজের কাছে বল পাঠান নিখিল পূজারী। প্রায় ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গোলে শট নেন মেনডেজ। তাঁকে মার্ক করলেও ব্যর্থ হন কামিংস। দীপ্পেন্দু, স্টুয়ার্টদের সামনে দিয়েই বল গোলে ঢুকে যায় (১-০)।
এমনিতেই এ দিন শুরু থেকে চেনা ছন্দে ছিল না সবুজ-মেরুন বাহিনী। তার ওপর বেঙ্গালুরু এফসি যে ভাবে চাপে ফেলে তাদের, তাতে আরও আগোছালো হয়ে যায় তারা। বিশেষত ডিফেন্সকে বেশ ছন্নছাড়া লাগে। এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করে নীল-বাহিনী।
ব্যবধান বাড়াতে অবশ্য বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাদের। ২০ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটি করেন সুরেশ ওয়াংজাম। ডানদিক দিয়ে ওঠা মেনডেজ বক্সের মধ্যে ক্রস পাঠান সুনীল ছেত্রীকে। অ্যালড্রেড তাঁকে বাধা দেওয়ায় সুনীলের গোড়ালিতে লেগে বল ছিটকে পিছন দিকে আসে। সেই এলাকায় মোহনবাগানের কেউই কেউই ছিলেন না। পিছন থেকে তীব্র গতিতে ছুটে এসে আকস্মিক গোলে শট নেন সুরেশ, যা বিশাল কয়েথের পক্ষে আটকানো কঠিন ছিল (২-০)।
এর পরে আরও গোলের চেষ্টা চালিয়ে যায় বেঙ্গালুরু। সুনীলের জোরালো শট আটকান বিশাল। রোশন নাওরেমকে গোলের সুযোগ তৈরি করে দেন মেনডেজ। এই সময়ে চোট পান বাগান ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেড। বেঙ্গালুরুর দাপটে কার্যত কোণঠাসা হয়ে যায় মোহনবাগান। আলবার্তো নগুয়েরার গোলমুখী শট আটকে বেঙ্গালুরুকে প্রায় অবধারিত গোল পেতে দেননি বিশাল। সুরেশের শটেও গোল হতে দেননি অ্যালড্রেড।
মাঝে মাঝে আক্রমণে উঠলেও মোহনাবাগান অ্যাটাকাররা তেমন সংগঠিত ছিলেন না বলেই তাদের আটকাতে অসুবিধা হয়নি রাহুল ভেকে, আলেকজান্দার জোভানোভিচ, নিখিল পূজারী, নাওরেম রোশনদের। প্রতিপক্ষের এলাকায় পেট্রাটস, কামিংস, মনবীর, স্টুায়ার্টদের দেখে মনে হয়, তাদের মধ্যে যোগাযোগের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রথমার্ধে বেঙ্গালুরু যেখানে গোলে সাতটি শট মারে, সেখানে মোহনবাগান চারটির বেশি শট গোলে রাখতে পারেনি। বল পজেশনেও অনেক এগিয়ে (৬০-৪০) ছিলেন সুনীল ছেত্রীরা।
অভিষেকের জায়গায় সহাল আব্দুল সামাদকে নামিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে কলকাতার দল। কিন্তু তিনি দশ মিনিটও থাকতে পারেননি মাঠে। তার মধ্যেই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়ায় মাঠ ছাড়তে হয় সহালকে। তাঁর জায়গায় নামেন লিস্টন কোলাসো। একই সঙ্গে অনিরুদ্ধ থাপাও মাঠে নামেন।
এর মধ্যে ৫০ মিনিটের মাথায় অবশ্য ম্যাচের তৃতীয় গোলটি পেয়ে যায় বেঙ্গালুরু। পেনাল্টি থেকে গোল করে আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় সবার ওপরে জায়গা করে নেন সুনীল ছেত্রী। বক্সের মধ্যে গোলমুখী এডগার মেনডেজের জার্সি টেনে ধরে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেন দীপ্পেন্দু। অবধারিত ভাবে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি এবং বিশালকে অনায়াসে পরাস্ত করেন সুনীল (৩-০)। এর পরে দীপ্পেন্দুকে তুলে থাপাকে নামান কোচ।
৬৪ গোল করে আপাতত আইএসএলের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সুনীল। এতদিন বার্থোলোমিউ ওগবেচের (৬৩) সঙ্গে শীর্ষে ছিলেন তিনি। ৫৬ গোল করে তিন নম্বরে রয়েছেন রয় কৃষ্ণা। সেরা পাঁচে দ্বিতীয় ভারতীয় লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে। যিনি ৪০ গোল করেছেন। এ দিন সুনীলের খেলায় তাঁর পুরনো খেলার ঝলক দেখা যায়। একটি গোল করেন, একটি করানও। সব মিলিয়ে দু’টি শট নেন তিনি, দু’টিই ছিল লক্ষ্যে। প্রতিপক্ষের বক্সে পাঁচবার বলে পা লাগান তিনি। দু’টি গোলের সুযোগও তৈরি করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জোড়া আক্রমণে গোলের সুযোগ পেলেও ব্যর্থ হন কামিংস। বক্সের বাঁ দিক থেকে পেট্রাটসের পাসে ব্যাক হিল করে তাঁর গোলের চেষ্টা সফল হলে এক অনবদ্য গোল দেখা যেত। কিন্তু গোলকিপার গুরপ্রীত সিং সান্ধু তা রুখে দেন। টানা তিন ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রেখে অভিজ্ঞতার মূল্য কতটা তা বোঝালেন গুরপ্রীত।
এ দিনও ছন্দে ফিরতে পারেননি পেট্রাটস। না গোল করতে পেরেছেন, না করাতে পেরেছেন। চারটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও তার কোনওটিই সফল হয়নি। তিনটি শট নেন তিনি, যার মধ্যে দু’টি ছিল গোলে। প্রতিপক্ষের বক্সে বলে পা লাগান মাত্র চারবার। দশটি ক্রসও দেন। কিন্তু ৬৫ মিনিটের মাথায় তাঁকে তুলে নেন কোচ। নামান জেমি ম্যাকলারেনকে, যিনি গত ম্যাচে মিনিট পনেরোর বেশি খেলতে পারেননি।
কোলাসো, ম্যাকলারেন মাঠে এলেও দলের আক্রমণের তীব্রতা তেমন বাড়েনি। গোটা দলটার মধ্যেই যেন উদ্দমের অভাব দেখায় দেয়। ৭৮ মিনিটের মাথায় কামিংসকেও তুলে নিয়ে সুহেল ভাটকে নামান মোলিনা। তখনই কার্যত হার মেনে নেয় মোহনবাগান। কারণ, তখন থেকেই নিজেদের গোল এলাকায় দেওয়াল তুলে দেয় বেঙ্গালুরু এফসি।
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় মেনডেজ মাঠ ছাড়ার পর নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে তাদের মাত্র দুই বিদেশী মাঠে ছিলেন। সুনীলের জায়গায় নামেন অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার চিঙলেনসানা সিং। ফলে তাদের দুর্ভেদ্য রক্ষণে আর ফাটল ধরাতে পারেননি ম্যাকলারেনরা। ক্রমশ খেলা থেকে হারিয়ে যায় তারা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসে বেঙ্গালুরু। স্টপেজ টাইমের শুরুতে চতুর্থ গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান শিবশক্তি নারায়ণন। কিন্তু গোলের সামনে থেকে নেওয়া তাঁর শট আটকে দেন বিশাল।
মোহনবাগান এসজি দল (৪-৪-২): বিশাল কয়েথ (গোল), আশিস রাই, টম অ্যালড্রেড, দীপ্পেন্দু বিশ্বাস (অনিরুদ্ধ থাপা-৫৬), শুভাশিস বোস, মনবীর সিং, আপুইয়া, অভিষেক সূর্যবংশী (সহাল আব্দুল সামাদ-৪৫, লিস্টন কোলাসো-৫৬), গ্রেগ স্টুয়ার্ট, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস (জেমি ম্যাকলারেন-৬৬), জেসন কামিংস (সুহেল ভাট-৭৯)।
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার