সুচরিতা সেন চৌধুরী: ৪১ মিনিটে প্রথম আক্রমণ আর ৪৪ মিনিটেই গোল। তার আগে পর্যন্ত ম্যাচটা পুরোপুরি ছিল মুম্বই সিটি এফসির দখলে। শেষটাও লেখা হল মুম্বইয়ের নামেই। ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া ম্যাচ ১-৩ গোলে হেরে ট্রফি হাতছাড়া করল মোহনবাগান। আইএসএল ২০২৩-২৪-এর ফাইনালে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও মুম্বই সিটি এফসি। যে ম্যাচের আবহ তৈরি হচ্ছিল মুম্বইয়ের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হওয়ার পর থেকেই। সমর্থকদের আবেগ, টিকিটের হাহাকার, ৬২ হাজারের গ্যালারির একরাশ প্রত্যাশা সব শেষ ৯০ মিনিটে। নেপথ্যে কি হাসছেন হুয়ান ফেরান্দো?
এমনিতে মোহনবাগান-মুম্বই মানে এক কথায় ভারতের এল ক্লাসিকো। লিগ শিল্ডের লড়াইয়ে বাজিমাত করেছিল মোহনবাগান, এই যুবভারতীতেই। আরও একবার ট্রফির লড়াই, একই মরসুমে দুই দলের মধ্যে। কিন্তু শেষ হাসি হাসল মুম্বই সিটি এফসি। মোহনবাগানের ঘর থেকে ট্রফি ছিনিয়ে নিয়ে গেল মুম্বই। তার পরও ‘মোহনবাগান মোহনবাগান’ ধ্বনিতে মাঠ ছাড়লেন সমর্থকরা। এটাই আসলে ফুটবলের আবেগ।
হাবাস তাঁর চেনা ছক ৩-৫-২-এই এদিন ভরসা রেখেছিলেন। প্রথমার্ধের ৪০ মিনিট পর্যন্ত মোহনবাগান রক্ষণকে ব্যস্ত রাখলেন ছাংতে, বিক্রমপ্রতাপরা। পর পর আক্রমণে তখন মোহনবাগান গ্যালারিতে রীতিমতো আতঙ্ক। প্রথমার্ধের হিসেব বলছে ক্রসবার আর পোস্ট বাধা না হলে নিশ্চিত দু’গোলে এগিয়ে যেতে পারত মুম্বই। মুম্বইয়ের এগিয়ে যাওয়ার পথে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াল গোলের মুখই।
৩২ মিনিটে ছাংতের ফ্রিকিক ক্রসবারে লেগে বেরিয়ে যায়। বল লক্ষ্য করে ঝাঁপিয়েছিলেন মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ। কিন্তু তিনি হাত লাগাতে পারেননি বলে। তার ঠিক দু’মিনিটের মধ্যেই কর্ণার থেকে উড়ে আসা বল বাঁচিয়ে দেন বিশাল। ৩৮ মিনিটে আবারও মুম্বই ও গোলের মাঝখানে প্রাচীর তৈরি করে পোস্ট। এবার বিক্রমপ্রতাপের পাস থেকে ছাংতের শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়। এখান থেকেই আক্রমণে ফেরার চেষ্টা করে মোহনবাগান। যার ফল ৪১ মিনিটে লিস্টন কোলাসোর শট বাঁচিয়ে দিন লাচেনপা।
গোলের সুযোগ তৈরি করে আত্মবিশ্বাসটা পেয়ে যায় হাবাসের ছেলেরা। দু্’মিনিটের মধ্যেই গোলের মুখ খুলে ফেলে মোহনবাগান। সেই দিমিত্রি-কামিংস জুটি। এ যেন আগের গোলের অ্যাকশন রিপ্লে দেখল যুবভারতী। ৪৪ মিনিটে দিমিত্রি পেত্রাতোসের নিশ্চিত গোলের শট ফিস্ট করে কোনও রকমে বাঁচিয়ে দেন মুম্বই গোলকিপার টেম্পা লাচেনপা। বল লক্ষ্য করে ততক্ষণে বক্সে পৌঁছে গিয়েছেন জেসন কামিংস। লাচেনপর হাত থেকে ছিটকে আসা বলতে ফিরতি শটে গোলে পাঠিয়ে দলকে প্রথমার্ধের শেষে এগিয়ে দেন তিনি। এক কথায় পুরো প্রথমার্ধ মুম্বই খেলার পর শেষ মিনিটে বাজিমাত মোহনবাগানের।
১-০ গোলে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ খেলতে নামে মোহনবাগান। আর শুরুতেই সমতায় ফেরে মুম্বই সিটি এফসি। এই মাঠে, এই দলের কাছেই লিগ-শিল্ড হাতছাড়া করার পর আইএসএল ট্রফি নিয়ে ফিরতে মরিয়া ছিল মুম্বই। যার ফল ৫২ মিনিটেই গোল করে সমতায় ফিরল মুম্বই সিটি এফসি। মুম্বইয়ের এই গোলের পিছনে অবশ্য ভূমিকা রেখে গেল মোহনবাগান রক্ষণ। মাঝমাঠ থেকে উড়ে আসা বল বক্সের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিলেন দিয়াজ। তখন তাঁর ঠিক পিছনে আনোয়ার কিন্তু বল আটকাতে গোল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন বিশাল। সেই সুযোগে বিশালের পায়ের ফাঁক দিয়েই গোলে শট নেন দিয়াজ। বল আটকাতে ঝাঁপিয়েছিলেন মনবীর সিং। কিন্তু নাগাল পাননি। ততক্ষণে একটা নির্বিষ বল নিজের মতো গড়াতে গড়াতে ঢুকে গেল মোহনবাগান গোলে। শেষবেলায় একটা চেষ্টা করেছিলেন ইউয়েস্তে ঠিকই কিন্তু তিনিও বলের সঙ্গে ঢুকে পড়লেন গোলে।
সমতায় ফিরে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াল মুম্বই। আবারও সেই প্রথমার্ধের ঝলক, আবারও পর পর আক্রমণে মোহনবাগান রক্ষণকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করে মুম্বই আক্রমণ। যার ফল ৮১ মিনিটে এগিয়ে যায় মুম্বই। এবারও দায়ী সেই মোহনবাগান রক্ষণ। মোহনবাগান বক্সের মধ্যে নিজেদের মধ্যে বল নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন মুম্বই ফুটবলাররা। বিনিত থেকে বিক্রম হয়ে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ছাংতে। সেখান থেকে ইয়াকুবের ফাইনাল পাস ধরে বিপিনের মোহনবাগান গোলে শট। এবারও মোহনবাগান রক্ষণকে নির্ভুল বলা যাবে না। আর ৯ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ে শেষ কাজটি করে গেলেন ইয়াকুব।। পিটার ক্রাতকির দুই পরিবর্তন বিপিন আর ইয়াকুবের আগমনেই ধসে পড়ল বাগান ডিফেন্স। হাবাসের তিন রক্ষণের নিয়ম যে সব সময় কাজে লাগবে না তা প্রমাণ হয়ে গেল।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আনোয়ার আলি, হেক্টর ইউয়েস্তে, শুভাশিস বোস, মনবীর সিং, জনি কাউকো, অনিরুদ্ধ থাপা (সহাল আবদু সামাদ), দীপক টাংরি (কিয়ান নিসিরি), লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রি পেত্রাতোস, জেসন কামিংস
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার