অলস্পোর্ট ডেস্ক: আইএসএল ২০২৩-২৪-এ বুধবার প্রথমার্ধটা ছিল সমানে সমানে। তার ফলে কেউই গোলের মুখ খুলতে পারেনি। খেলা ঘুরল দ্বিতীয়ার্ধে। সঙ্গে ম্যাচ ঘিরে তৈরি হল একাধিক নাটকীয় মুহূর্ত। এক কথায় ঘটনাবহুল ম্যাচ ছিল যুবভারতী ক্রিড়াঙ্গনে মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুরুর।
বিরতির পর খেলা শুরু হতেই একের পর এক নাটকীয় মুহূর্ত তৈরি হয় মাঠে। নাগাড়ে চারটি কর্নার পেলেও একটিও কাজে লাগাতে পারেনি মোহনবাগান এসজি। পরপর চারবারই পেট্রাটস কর্নার কিক নেন, কিন্তু তাঁর সতীর্থরা কেউই গোলের মুখ খুলতে পারেননি। বেঙ্গালুরুর দুই বিদেশি ফুল ব্যাক দামিয়ানোভিচ ও জোভানোভিচ এ দিন তাঁদের সেরা ফর্মে ছিলেন।
৪৯ মিনিটের মাথায় গোলমুখী পেট্রাটসকে বক্সের মধ্যে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন রোহিত। নিজের পায়েই পা জড়িয়ে পড়ে যান পেট্রাটস। তা সত্ত্বেও পেনাল্টির জোরালো আবেদন জানান সবুজ-মেরুন খেলোয়াড়রা। ফেটে পড়েন গ্যালারির সমর্থকেরাও। কিন্তু সঠিক কারণেই রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি। পরবর্তী মিনিটেই মোহনবাগান বক্সের বাইরে থেকে গোলে জোরালো শট নেন রোহিত, যা অসাধারণ দক্ষতায় রুখে দেন বিশাল। এটি ছিল বেঙ্গালুরুর চতুর্থ গোলে শট। তখনও একটিও শট গোলে রাখতে পারেনি হোম টিম।
বহু প্রতীক্ষিত গোলটি আসে ৬৮ মিনিটে এবং সেই ছিল তাদের প্রথম গোলে শট, যা নেন ম্যাচের সেরা হুগো বুমৌস। জোভানোভিচের হেডে ক্লিয়ার হওয়া বল পেয়ে বক্সের মাথা থেকে বাঁ দিকে বুমৌসকে দেন কামিংস। প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণ থেকে নেওয়া শটে জালে বল জড়িয়ে দেন ফরাসি তারকা (১-০)।
এই গোলের পরেই একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করে মোহনবাগান। মাঠে আসেন ব্রেন্ডান হ্যামিল, আরমান্দো সাদিকু ও গ্ল্যান মার্টিন্স। তুলে নেওয়া হয় বুমৌস, কামিংস ও আনোয়ারকে। বেঙ্গালুরু শিবশক্তি নারায়ণ ও রায়ান উইলিয়ামসকেও নামায় প্রায় একই সঙ্গে। কিন্তু এর পরেই যে ধাক্কাটা খায় তারা, তা সত্যিই প্রত্যাশিত ছিল না।
৭৫ মিনিটে সাদিকুকে অবৈধ ভাবে বাধা দেওয়ার জন্য ম্যাচের দ্বিতীয় হলুদ কার্ড তথা লাল কার্ড দেখেন সুরেশ সিং ওয়াংজাম। রেফারির এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁর সতীর্থরা। রিপ্লে-তে দেখা যায় ফাউল আসলে করেছিলেন রওশন সিং। তাঁর পাশেই ছিলেন সুরেশ। এর পর থেকে বেঙ্গালুরুকে দশ জনে খেলতে হয়। স্টপেজ টাইমে যে সংখ্যাটা দাঁড়ায় নয়ে।
এই ঘটনার পরেই কোলাসোকে তুলে আশিস রাইকে নামায় মোহনবাগান। সহালের জায়গায় নামেন কিয়ান নাসিরি। প্রতপক্ষের এক খেলোয়াড় কম থাকার সুযোগ নিয়ে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে কলকাতার দল। ৮৪ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে বাঁ দিক দিয়ে এগিয়ে দুই ডিফেন্ডারকে ধোঁকা দিয়ে কাট ইন করে বক্সের বাইরে থেকেই সোজা গোলে শট নেন সাদিকু, যা দ্বিতীয় পোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়।
আট মিনিটের বাড়তি সময়ে গোল শোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে বেঙ্গালুরু। এই সময়ে নাটক আরও জমে ওঠে। ৯১ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে ওঠা গতিময় পেট্রাটসকে বক্সের সামনে স্পষ্টতই ঠেলে ফেলে ফেলে দেন রওশন, যার ফলে তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দেন রেফারি। অর্থাৎ, শেষ সাত মিনিট বেঙ্গালুরুকে ন’জনে খেলতে হয়।
ওই সময় পেট্রাটস যে গতিতে ছিলেন, তাঁকে ঠেলে না ফেলে দিলে হয়তো দ্বিতীয় গোলটি পেয়ে যেত মোহনবাগান। ৯৭ মিনিটের মাথায় বাঁদিক দিয়ে উঠে বক্সে ঢুকে ফের শট নেন পেট্রাটস, এ বার বল বারের ওপর দিয়ে উড়ে যায়। বাড়তি সময়ের শেষ মিনিটেও তিনি সাইড নেটে বল মারেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট হন সাদিকুও। সব মিলিয়ে এ দিন ১৭ বার গোলের চেষ্টা করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। কিন্তু সফল হয় মাত্র একবারই।
মোহনবাগান এসজি দল: বিশাল কয়েথ (গোল), শুভাশিস বোস, হেক্টর ইউস্তে, আনোয়ার আলি (গ্ল্যান মার্টিন্স), অনিরুদ্ধ থাপা, লিস্টন কোলাসো (আশিস রাই), মনবীর সিং, হুগো বুমৌস (ব্রেন্ডান হ্যামিল), সহাল আব্দুল সামাদ (কিয়ান নাসিরি), জেসন কামিংস (আরমান্দো সাদিকু), দিমিত্রিয়স পেট্রাটস।