সুচরিতা সেন চৌধুরী: ম্যাচ শেষের আগে গ্যালারি জুড়ে জ্বলে উঠল শহুরে জোনাকি। মোহনবাগান গ্যালারির মনে তখন হাজার ওয়াটের আলো। দল জিতছে। দল শীর্ষে। আরও একবার লিগ, শিল্ড জয়ের হাতছানি। দলের কর্ণধার এই ম্যাচের জন্য টিকিট ফ্রি করে দিয়েছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন বছরে উৎসবের আবহ সবুজ-মেরুন পরিবারে। ১৪ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও পোক্ত করল দল। হায়দরাবাদ ১৪ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ১২ নম্বরেই থেকে গেল। ম্যাচের ফল মোহনবাগান ৩, হায়দরাবাদ ০।
শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনা। আর তার মধ্যেই ২-০ গোলে এগিয়ে গেল মোহনবাগান। বৃহস্পতিবার কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হায়দরাবাদ এফসির বিরুদ্ধে আইএসএল ২০২৪-২৫-এর ম্যাচ খেলতে নেমেছিল লিগ টেবলের শীর্ষে থাকা মোহনবাগান। প্রতিপক্ষ হায়দরাবাদ লিগ টেবলের শেষের দিক থেকে দ্বিতীয়। কয়েকদিন আগেই দলের খারাপ পারফর্মেন্সের জন্য ছাঁটাই করা হয়েছে গত বছর থেকে দলের দায়িত্বে থাকা হেড কোচ থাংবোই সিংতোকে। তার পরই ঘরের মাঠে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় শামিল চেমবখতকে। তাঁর কোচিংয়ে শেষ মুহূর্তের গোলে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের স্বপ্ন হায়দরাবাদের মাঠেই ছেড়ে আসতে হয়েছিল। এক পয়েন্ট পেয়েছিল দল। এবার আর এক কলকাতার দলের মুখোমুখি তারা। যদিও শুরুতেই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান।
ম্যাচ শুরুর ৯ মিনিটেই এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। তবে সেম সাইড গোলে। বাঁ দিক থেকে বক্সের মধ্যে ক্রস রেখেছিলেন লিস্টন কোলাসো। সেখানেই উপস্থিত ছিলেন সাহাল আব্দুল সামাদ। তাঁর শট কোনও রকমে বাঁচিয়ে দেন প্রতিপক্ষ গোলকিপার অর্শদীপ। কিন্ত নিজের দখলে রাখতে পারেননি। সেই বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে হেডে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন ডিফেন্ডার স্টিফান সাপিস। নিজেদের ভুলে পিছিয়ে পড়াটা মানসিক ধাক্কা তো বটেই পিছিয়ে থাকা একটা দলের জন্য। কিন্তু পরের মুহূর্তেই আক্রমণে উঠে মোহনবাগান বক্সে কিছুটা চাঞ্চল্য তৈরি করে হায়দরাবাদ। বেশ কয়েকবার কাউন্টার অ্যাটাকে উঠে মোহনবাগানকে পরীক্ষার মুখে ফেলে হায়দরাবাদ। তবে গোলের নিচে বিশাল কাইথ একাই সামলে দেন সে সব আক্রমণ।
প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। ম্যাচের বয়স তখন ৪২ মিনিট। একটি লং বল ধরে বক্সের মধ্যে ক্রস রেখেছিলেন লিস্টন কোলাসো। গোল পোস্টের গণ্ডি ছেড়ে সেই বল বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই শুয়ে পড়ে টম আলড্রেডের হেড চলে যায় গোলে। কিন্তু লাইন্সম্যান সেই গোল বাতিল করে দেন। এর পরই শুরু হয় আলোচনা। মোহনবাগান প্লেয়াররা গোলের দাবি জানাতে থাকেন, অন্যদিকে হায়দরাবাদ প্লেয়াররা হ্যান্ডবলের দাবি করেন। শেষ পর্যন্ত রেফারি, লাইন্সম্যানের আলোচনা শেষে গোল দেওয়া হয় মোহনবাগানের পক্ষে। তার আগে গোলকিপারকে একা পেয়েও জেমি ম্যাকলারেন যেভাবে পোস্টে মারলেন তা হতাশার কারণ হতে পারত। সঙ্গে কোচকে চিন্তায় রাখবে লিস্টের স্বার্থপর ফুটবল।
২-০ গোলে প্রথমার্ধে এগিয়ে থাকা দল দ্বিতীয়ার্ধে অনেকবেশি উন্নত ফুটবল খেলল। প্রথমার্ধের তুলনায় তো বটেই, গত দুই ম্যাচের তুলনায়ও ভাল ফুটবল খেলল মোহনবাগান। যেমনটা কোচ হোসে মোলিনা সব সময়ই বলে থাকেন, “প্রতিদিন উন্নতির সুযোগ থাকে, সেটাই আমরা করে যাই।” যা মোহনবাগানের খেলায় প্রতিদিনই লক্ষ্য করা যাায়। দুটো ম্যাচ খারাপ গেলেই আবার ভাল ফুটবল খেলে ঘুরে দাঁড়ায় দল। দ্বিতীয়ার্ধের গোলটা তারই প্রতিফলন। ৫১ মিনিটে সাহাল, কামিন্স, আলড্রেড হয় আবার যখন বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গেলেন কামিন্স তখন গোল করতে ভুল করেননি তিনি। ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় মোহনবাগান।
এদিন মোহনবাগানের ডানপ্রান্ত পুরো ফ্লপ। যা আক্রমণ হল তা সবই ডানদিক দিয়ে। লিস্টন কোলাসো একাধিক গোলের বল তৈরি করলেন ঠিকই কিন্তু যে বল নিয়ে নিজে গোল করার চেষ্টা করলেন তা সফল হল না। মিস কম হল না। আরও অনেকবেশি গোলে জিততে পারত মোহনবাগান। তবে মনে থাকবে জয়টাই।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আশিস রাই (মনবীর সিং), থমাস আলড্রেড, আলবার্তো রডরিগেজ, শুভাশিস বোস, লিস্টন কোলাসো (সৌরভ ভানওয়াল), অনিরুদ্ধ থাপা (অভিষেক সূর্যবংশী, সাহাল আব্দুল সামাদ (সুহেল ভাট), দীপক টাংরি, জেসন কামিন্স (গ্রেগ স্টুয়ার্ট), জেমি ম্যাকলারেন
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার