সুচরিতা সেন চৌধুরী: শুরুতে যে ভাবে পর পর আক্রমণে মোহনবাগান রক্ষণকে ছাড়খাড় করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন কেরালার ফরোয়ার্ডরা তাতে যেন খেলার গতিটাই হারিয়ে ফেলেছিল মোহনবাগান। এতদিন টানা যে ফুটবল খেলে এসেছে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড, শনিবার তার ছিটেফোঁটাও দেখা গেল না। বরং বেশ ছন্নছাড়া ফুটবল আর পরিকল্পনার অভাবে ভুগল গোটা দল। মুহূর্তে যেন আগের দিনের ফুরফুরে ভাব উধাও হয়ে গেল কোচ হোসে মোলিনার মুখ থেকে। চূড়ান্ত হতাশার বহিঃপ্রকাশও করে ফেললেন যখন সমতায় ফিরল কেরালা ব্লাস্টার্স। কিন্তু ক্রমশ নাটকীয় মোর নিল মোহনবাগান বনাম কেরালা ম্যাচ। ৯০ মিনিটের সব হিসেব বদলে গেল অতিরিক্ত সময়ের পাঁচ মিনিটে। ৩-২ গোলে জিতেই মাঠ ছাড়ল মোহনবাগান। টানা অষ্টম ম্যাচে অপরাজিত থেকেই ২৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান বহাল রাখল কলকাতার দল। এক ম্যাচ বেশি খেলে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় বেঙ্গালুরু। এদিনই প্রথম ম্যাচে গোয়ার সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করলেন সুনীল ছেত্রীরা।
প্রথমার্ধেই এগিয়ে গিয়েছিল মোহনবাগান। ম্যাচের বয়স তখন ৩২ মিনিট। বাঁ দিক থেকে শুভাশিস বোস একদম ডানদিকে বল বাড়িয়েছিলেন আশিস রাইকে। বক্সের বাইরে থেকেই গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন আশিস। শরীর দিয়ে কোনও রকমে সেই বল আটকে দেন কেরালা গোলকিপার সচিন সুরেশ, কিন্তু সেই বল নিজের দখলে রাখতে পারেননি তিনি। ছিটকে আসা বলে জোড়াল শটে গোল করে মোহনবাগানকে এগিয়ে দেন জেমি ম্যাকলারেন। কেন কামিন্সের বদলে জেমি কোচের প্রথম পছন্দ সেটা তিনি প্রমাণ করছেন নিয়মিত।
গোল করে এগিয়ে যাওয়ার আগে অবশ্য বেশ কিছু কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল মোহনবাগান বক্সে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে একা হাতেই সেই সময় দলের দূর্গ রক্ষা করেন মোহনবাগান গোলকিপার বিশাল কাইথ। ম্যাচ শুরুর এক মিনিটের মধ্যেই কেরালার বিদেশি ফরোয়ার্ডের নিশ্চিত গোলমুখি শট মাথার উপর দিয়ে যেভাবে বাইরে পাঠালেন সেটা বিশাল না থাকলে হয়তো সমস্যায় পড়তে হত। এখানেই শেষ নয়, চার মিনিটে যেন সেই মুহূর্তেরই অ্যাকশন রিপ্লে দেখা গেল। শুধু কারিগরটি বদলে গেলেন। এবার ছিলেন জিমিনেজ নুনেজ। প্রথমার্ধের পাঁচ মিনিটের মধ্যেই জোড়া গোলে এগিয়ে যেতে পারত কেরালা ব্লাস্টার্স কিন্তু মোহনবাগান প্রথমার্ধ শেষে করে ১-০ গোলে এগিয়েই।
টানা তিন ম্যাচে ক্লিনশিট রাখার পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে ছিল মোহনবাগান ব্রিগেড কিন্তু সেই মতো পারফর্মেন্স দেখা গেল না। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে এগিয়ে থেকেই নেমেছিল দল। কিন্তু যে গোলকিপার শুরুতে নিশ্চিত গোল বাঁচালেন সেই বিশাল কাইথের ভুলেই এগিয়ে গেল কেরালা ব্লাস্টার্স। প্রথমার্ধের শেষে যে সুবর্ণ সুযোগটা নষ্ট করেছিলেন জেমিনেজ নুনেজ তা শুধরে নিলেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ব্যাক পাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে কঠিন জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা শুভাশিসের পায়ে বল জমা দেন বিশাল। সেই বল প্রতিপক্ষ আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি শুভাশিস। বরং জমা দেন নুনেজের পায়ে। ভুল করেননি তিনি।
১-১ গোলে সমতায় ফেরার পর খেলায় গতি বাড়ায় কেরালা। যার ফল আবারও ভুল সেই বিশালেরই। দানিশের ফ্রিকিক আটকে দিলেও নিজের দখলে রাখতে পারেননি। তাঁরই হাত থেকে ছিটকে আসা বল যেন প্লেটে সাজানো অবস্থায় বক্সের মধ্যে পেয়ে যান মিলোস দ্রিনিসিস। সেখান থেকে গোল করতে না পারাটাই অপরাধ। তবে তিনি ভুল করেননি। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় কেরালা। এর পরই শেষ চেষ্টা করতে এক সঙ্গে আশিক কুরুনিয়ান ও জেসন কামিন্সকে নামিয়ে আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ানোর চেষ্টা করেন মোলিনা। যাতে তিনি সফল। ৮৬ মিনিটে সেই আশিকের পা থেকেই দিমিত্রি হয়ে ছোট বক্সের মধ্যে থেকে কামিন্সের ছোট্ট টোকায় সমতায় ফিরল মোহনবাগান।
তবে শেষটা লেখা থাকল আলবার্তো রডরিগেজের নামেই। জয়ের গোলটি এল তাঁরই পা থেকে। তখন পাঁচ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছে। ঘড়ির কাটা ৯৫ মিনিট ছুঁই ছুঁই। আর তখনই বদলে গেল সব হিসেব। ধরেই নেওয়া হয়েছিল ম্যাচ ড্র হচ্ছে। কেরালা বক্সে তখন রীতিমতো উত্তেজনা। আর সেই উত্তেজনার মধ্যে থেকেই প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে রডরিগেজের চকিতে শট বাঁচানোর সুযোগ পায়নি কেরালা। গোলের মুখে একটা ডিফ্লেকশন হলেও এই গোল অবশ্যই রডরিগেজের। এই জয় মোহনবাগান সমর্থকদের।
মোহনবাগান: বিশাল কাইথ, আশিস রাই, থমাস আলড্রেড (জেসন কামিন্স), আলবার্তো রডরিগেড, শুভাশিস বোস, আপুইয়া, সাহাল আব্দুল সামাদ (অনিরুদ্ধ থাপা), মনবীর সিং (সুহেল ভাট), লিস্টন কোলাসো (আশিক কুরুনিয়ান), দিমিত্রিয়স পেত্রাতস, জেমি ম্যাকলারেন
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার