অলস্পোর্ট ডেস্ক: শনিবার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে নামার আগে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গত মরশুমের দলেও ছিলেন যে সব খেলোয়াড়রা, তাদের নিশ্চয়ই মনে পড়বে গত এপ্রিলের সেই ম্যাচের কথা। সে দিন এই কান্তিরাভায় আইএসএলের ইতিহাসে তাদের সবচেয়ে বড় জয়টি অর্জন করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। সে দিন রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৪-০-য় হারিয়ে দেয় মোহনবাগান।
প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়ে থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে মাত্র ন’মিনিটের মধ্যে তিন-তিনটি গোল করে লিগ শিল্ডের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল গতবারের শিল্ড চ্যাম্পিয়নরা। স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে গোল করার পর ম্যাচের ৫১ থেকে ৫৯ মিনিটের মধ্যে পরপর তিন গোল করে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন যথাক্রমে মনবীর সিং, অনিরুদ্ধ থাপা ও আরমান্দো সাদিকু। এক গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৪০ মিনিটের মাথায় পাওয়া পেনাল্টি মিস করেন বেঙ্গালুরু এফসি-র অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী। সেই ভুলের বড় মাশুল দিতে হয়েছিল সুনীলের দলকে।
সেই ম্যাচে খেলা বিশাল কয়েথ, শুভাশিস বোস, মনবীর, অভিষেক সূর্যবংশী, অনিরুদ্ধ থাপা, আশিস রাই, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, দীপ্পেন্দু বিশ্বাস, জেসন কামিংসরা এ বারের দলেও আছেন। হয়তো শনিবার মাঠেও নামবেন। এপ্রিলের সেই ম্যাচের ফল কি তাঁদের এই ম্যাচেও তাতিয়ে তুলবে? তুলতেই পারে। কিন্তু এ বার বেঙ্গালুরু এফসি একেবারে অন্য মেজাজে লিগ শুরু করেছে।
গত বার দশ নম্বরে থাকা নীল-বাহিনী এ বার প্রথম দুই ম্যাচেই জয় পেয়ে শুরুটা দারুন ভাবে করেছে। ইস্টবেঙ্গল এফসি-কে হারানোর পর হায়দরাবাদ এফসি-কেও হারিয়ে লিগ টেবলের ওপরের তিন দলের মধ্যে রয়েছে তারা। দুই ম্যাচেই ক্লিন শিট বজায় রাখে বেঙ্গালুরু এফসি। ঘরের মাঠে টানা দুই ম্যাচে জেতার পর এ বার তাদের তৃতীয় ম্যাচও ঘরের মাঠে। মুখোমুখি গতবারের লিগশিল্ড চ্যাম্পিয়ন মোহনবাগান এসজি, যারা গত ম্যাচে জিতে প্রথম ছয়ে জায়গা করে নিলেও বেঙ্গালুরুর মতো সফল দলকে হারিয়ে নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণ করতে হবে।
প্রথম ম্যাচে কঠিন প্রতিপক্ষ মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে শেষ মিনিট পর্যন্ত ২-১ গোলে এগিয়ে থাকা সত্ত্বেও সিরিয়ান ডিফেন্ডার থায়ের ক্রুমার গোল তাদের জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দেয়। প্রায় মুঠোয় আসা তিন পয়েন্ট খুইয়ে এক পয়েন্টের সান্ত্বনা পুরস্কার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় হোসে ফ্রান্সিসকো মোলিনার দলকে। গত সোমবার দু’বার পিছিয়ে গিয়েও দু’বারই সমতা আনার পর শেষ পর্যন্ত নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র হাত থেকে জয় ছিনিয়ে নেয় মোহনবাগান। ঘরের মাঠে এই পারফরম্যান্স কোচ, সমর্থকদের খুশি করলেও সবুজ-মেরুন বাহিনীর আসল সমস্যা কিন্তু কিছুতেই মিটছে না। গত দুই ম্যাচে চার গোল খেয়েছে তারা, যা মোটেই ভাল ভাবে নেননি কোচ মোলিনা। প্রতি ম্যাচে একাধিক গোল খাওয়া তার মোটেই পছন্দ নয়।
শনিবারের ম্যাচে সেই রোগ সারিয়ে মাঠে নামার চ্যালেঞ্জ বাগান-বাহিনীর সামনে। এ মরশুম শুরুর আগে ঢেলে দল সাজিয়েছে মোহনবাগান। অস্ট্রেলিয়ান ফরোয়ার্ড জুটি দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও জেসন কামিংসের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার আর এক নামী ফরোয়ার্ড জেমি ম্যাকলারেন এবং স্কটিশ মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। দ্বিতীয়জন ভাল ফর্মে থাকলেও সদ্য চোট সারিয়ে ফেরা ম্যাকলারেন গত ম্যাচে মিনিট পনেরোর বেশি খেলতে পারেননি। এই ম্যাচেও তিনি পুরো খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
মরশুমের শুরুতে পেট্রাটস ও কামিংসের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার স্তর ছুঁতে না পারলেও গত ম্যাচে গোল করে কামিংস বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্রমশ ফর্মে ফিরছেন। এ বার পেট্রাটসের ছন্দে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন সমর্থকেরা। রক্ষণে স্প্যানিশ সেন্টার ব্যাক আলবার্তো রড্রিগেজ ও অভিজ্ঞ স্কটিশ ডিফেন্ডার টম অ্যালড্রেড থাকলেও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে চোট পেয়ে সেই যে মাঠ ছাড়েন রড্রিগেজ, তার পরে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচেও মাঠে ফিরতে পারেননি। এই ম্যাচেও তিনি অনিশ্চিত।
দেশীয় ফুটবলারদের মধ্যে মুম্বই সিটি এফসি থেকে আসা মিডফিল্ডার আপুইয়া সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গোলকিপার বিশাল কয়েথও ভাল ফর্মে রয়েছেন। মনবীর, কোলাসো, অনিরুদ্ধ, শুভাশিস, আশিস, সহালরা নিজেদের সেরা জায়গায় নিয়ে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোচ মোলিনার আশা, লিগ যত এগোবে, তাঁরা ততই উন্নতি করবে। শনিবার মোহনবাগান গত ম্যাচের চেয়েও ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে বোঝা যাবে, কোচ ঠিকই বলেছেন।
কিন্তু ঘরের মাঠে বেঙ্গালুরুকে হারানো কি অতই সোজা হবে সবুজ-মেরুন বাহিনীর পক্ষে? বেঙ্গালুরু এফসি মরশুমটা বেশ ভালই শুরু করেছে। ডুরান্ড কাপের সেমিফাইনালে ওঠে তারা। দু’গোলে এগিয়েও যায় মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। কিন্তু টাই ব্রেকারে বিশাল কয়েথের হাতে আটকে যায়। গত মরশুমের দলের দুই বিদেশী আলেকজান্দার জোভানোভিচ ও রায়ান উইলিয়ামসকে এ বার রেখে দিয়েছে তারা। নতুন চার বিদেশীকে নিয়ে এসেছে।
গতবারের কাপজয়ী মুম্বই সিটি এফসি থেকে জর্জ পেরেইরা দিয়াজ ও আলবার্তো নগুয়েরা ছাড়াও এসেছেন পেদ্রো কাপো ও এডগার মেনদেজ। মুম্বই শিবির থেকে অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার রাহুল ভেকে ফিরে এসেছেন তাঁর পুরনো দলে। পাঞ্জাব এফসি থেকে এসেছেন মোহম্মদ সালাহ। এঁদের নিয়েই এ বার নতুন করে অভিযান শুরু করেছেন কোচ গেরার্দ জারাগোজা।
প্রথম ম্যাচে ভিনিথ ভেঙ্কটেশের ২৫ মিনিটের গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারায় তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে সুনীল ছেত্রীর জোড়া গোল ও রাহুল ভেকের গোলে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে জেতে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে শুরু থেকে নামা সুনীল ও জোভানোভিচকে দ্বিতীয় ম্যাচে পরে নামিয়ে বাজিমাত করেন গেরার্দ। রক্ষণ ও আক্রমণ, দুই বিভাগেই যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছেন সুনীলরা। শনিবার সেই শক্তিরই মোকাবিলা করতে হবে মোলিনার দলকে।
পরিসংখ্যান বলছে
গত মরশুমের শুরু থেকে মোহনবাগান এসজি ওপেন প্লে থেকে ৪৩টি গোল করেছে, যা বেঙ্গালুরুর চেয়ে ২৫টি বেশি। আর কোনও দল এই সময়ের মধ্যে ওপেন প্লে থেকে এত গোল করতে পারেনি। আইএসএলের গত তিন ম্যাচেই একাধিক গোল খেয়েছে মোহনবাগান। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে যখনই তারা ক্লিন শিট বজায় রাখতে পারেনি, তখনই তারা একাধিক গোল খেয়েছে। সুনীল ছেত্রীদের বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে সবচেয়ে বেশি গোল অবদান রয়েছে রয় কৃষ্ণা ও দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের। দু’জনেই চারটি করে গোল করেছেন ও একটি করে করিয়েছেন। আর একটি গোল অবদান রাখতে পারলে রয়কে পিছনে ফেলে দেবেন দিমি। বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে তাঁর পাঁচটি ম্যাচের মধ্যে চারটিতেই দিমির গোল অবদান ছিল।
এ বারের লিগে প্রথম দুটি ম্যাচে এখনও গোল খায়নি বেঙ্গালুরু এফসি। গেরার্দ জারাগোজা তাদের কোচ হয়ে আসার পর বেঙ্গালুরু এফসি আইএসএলে তাদের ন’টি হোম ম্যাচের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে। একমাত্র হারটি ছিল গত এপ্রিলে মোহনবাগানের কাছে ০-৪-এ। গত মরশুমের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বেঙ্গালুরু আইএসএলে ম্যাচের শেষ ১৫ মিনিটে ছ’টি গোল করেছে।
দ্বৈরথের ইতিহাস
আইএসএলে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ৯ বার। তার মধ্যে ৬ বারই জিতেছে মোহনবাগান, একবার বেঙ্গালুরু ও দু’টি ম্যাচে ড্র হয়। ২২-২৩ মরশুমে প্রথম মুখোমুখিতে দিমিত্রিয়স পেট্রাটসের গোলে জেতে কলকাতার দল। ফিরতি লিগে ২-১-এ জিতে মধুর প্রতিশোধ নেয় বেঙ্গালুরু। প্লে অফে ২-২ হয়। ২১-২২ মরশুমে সুনীল ছেত্রী-হীন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ৩-৩-এ ম্যাচ অমীমাংসিত রেখে মাঠ ছাড়ে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ফিরতি লিগে ২-০-য় জেতে মোহনবাগান। ২০২০-২১ মরশুমে প্রথমে এটিকে মোহনবাগান ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে জেতে ও পরেরবার রয় কৃষ্ণা ও মার্সেলো পেরেরার গোলে জেতে। গত মরশুমে প্রথম মুখোমুখিতে হুগো বুমৌসের গোলে জেতে মোহনবাগান এসজি। ফিরতি লিগে রীতিমতো দাপুটে ফুটবল খেলে সুনীল ছেত্রীর বেঙ্গালুরু এফসি-কে ৪-০-য় হারান পেট্রাটসরা।
ম্যাচ- বেঙ্গালুরু এফসি বনাম মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
ভেনু- শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু
সময়- ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, সন্ধ্যা ৭.৩০
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার