অলস্পোর্ট ডেস্ক: টানা এক ডজন ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর গত ম্যাচে, অর্থাৎ, সেমিফাইনালের প্রথম লেগে হারতে হয়েছে চলতি আইএসএলের লিগশিল্ড জয়ী মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে। তাও আবার শেষ মুহূর্তের গোলে। ফাইনালে উঠতে গেলে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে তাদের জামশেদপুর এফসি-কে তো হারাতে হবেই, অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততে হবে।
চলতি মরশুমে ঘরের মাঠে টানা এগারোটি ম্যাচ জিতে আইএসএলের নজির গড়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। সোমবার সেই ঘরের মাঠেই সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগ। এই ১১টি জয়ের মধ্যে মাত্র চারটিতে তারা ১-০-য় জিতেছে। বাকি সব ম্যাচেই একাধিক গোল করেছে তারা। এই জামশেদপুর এফসি-কেই ঘরের মাঠে ৩-০-য় হারিয়েছিল সবুজ-মেরুন বাহিনী। এ সব মাথায় রেখেই সোমবার একাধিক গোল করে ফাইনালে উঠতে বদ্ধপরিকর সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা।
দ্বিতীয় লেগে ‘অন্য খেলা’!
প্রথম সেমিফাইনালে ১-২-এ হারার পর তাদের কোচ হোসে মোলিনা বলেই দিয়েছিলেন, পরের ম্যাচে সম্পুর্ণ অন্য খেলা দেখাবে তাঁর দল। নিজেদের সমর্থকদের সামনে তারা যুবভারতীতে বরাবরই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সোমবারও যে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে তারা, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সবচেয়ে বড় কথা গত ম্যাচে পূর্ণশক্তির দল নিয়ে নামতে পারেনি কলকাতার দল। মনবীর সিং ও আপুইয়া চোটের জন্য খেলতে না পারায় আক্রমণের কৌশল পাল্টাতে হয় তাদের। এই দুই নির্ভরযোগ্য তারকা দলে ফিরলে চেনা আগ্রাসী মেজাজে দেখা যেতে পারে তাদের।
ডানদিক দিয়ে মনবীর ও বাঁ দিক দিয়ে লিস্টন কোলাসোর আক্রমণে ওঠা, মাঝখানে জেসন কামিংস, জেমি ম্যাকলারেন, দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, গ্রেগ স্টুয়ার্টদের মধ্যে দু’জনকে আক্রমণে রেখে বারবার যে ভাবে বাজিমাত করেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী, সে ভাবেই আর এক ম্যাচে বাজিমাত করার পরিকল্পনা নিয়েই নিশ্চয়ই মাঠে নামবে তারা। রক্ষণে দুই বিদেশী আলবার্তো রড্রিগেজ ও টম অলড্রেড এবং অভিজ্ঞ অধিনায়ক শুভাশিস বোস ও আশিস রাইদের ভরসাও পাবে দল। সব মিলিয়ে যে দল নিয়ে শিল্ড-অভিযানে সফল হয়েছেন মোলিনা, এ বার সেই দল নিয়েই কাপ জয়ের লক্ষ্যেও সফল হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নামবে তারা।
অতি রক্ষণাত্মক ইস্পাতবাহিনী?
যাঁরা ভাবছেন, গত ম্যাচ জিতে থাকায় এই ম্যাচে জামশেদপুরের ওপরে চাপ কম থাকবে, তাঁরা বোধহয় ঠিক নয়। ফাইনালে উঠতে গেলে খালিদ জামিলের দলের ড্র করলেই চলবে, এটা ঠিকই। সে জন্য জামশেদপুর এফসি অতি রক্ষণাত্মক ফুটবলও খেলতে পারে। কিন্তু মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মতো আগ্রাসী দলের বিরুদ্ধে টানা ৯০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলার পরিকল্পনা নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেদের দূর্গ ধরে রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে কি না, সেটাই প্রশ্ন।
সোমবারের ম্যাচ বেশ কঠিন হতে চলেছে জামশেদপুরের পক্ষে। কারণ, প্রথম সেমিফাইনালে চতুর্থ হলুদ কার্ড দেখায় এই ম্যাচে খেলতে পারবেন না তাদের প্রথম দলের দুই নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার স্টিফেন এজে ও আশুতোষ মেহতা। এ ছাড়া তার আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় এমনিতেই মাঠের বাইরে রয়েছেন মোবাশির রহমান। ফলে সেরা এগারো নামানো কঠিন খালিদের পক্ষে।
এ পর্যন্ত এ মরশুমে ৪৪টি গোল খেয়েছে জামশেদপুর এফসি এবং মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ১৮টি গোল খেয়েছে। গত ম্যাচে সবুজ-মেরুন রক্ষণে ফাটল ধরিয়ে দু-দু’টি গোল করার কৃতিত্ব ইস্পাত-বাহিনীকে দিতেই হবে। কিন্তু গত দুই ম্যাচে রক্ষণে যে রকম উন্নতি করেছে তারা, তা অবশ্যই উল্লেখযোগ্য।
নজরে নর্থইস্ট মডেল!
নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র গোলমেশিন, লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা আলাদিন আজারেইকে আটকে রেখে ও তাঁর দিকে যাবতীয় বল সাপ্লাই বন্ধ করে দিয়ে সে দিন বাজিমাত করেছিল খালিদ জামিলের দল। ২৯ মিনিটে সেটপিস থেকে গোল করে এগিয়ে যাওয়ার পর নিজেদের গোলের সামনে প্রায় পাঁচিল তুলে দেয় তারা। এই ম্যাচে তাদের গোল করার তাগিদ সে রকম নেই। কিন্তু গোল আটকাতেই হবে তাদের। তাই হয়তো গত দুই ম্যাচের মতোই প্রতিপক্ষের প্রধান স্ট্রাইকারদের কড়া পাহাড়ায় রেখে তাদের আক্রমণকে নিষ্ক্রিয় করার পরিকল্পনা করেই দল নামাবেন ইস্পাতনগরীর দলের ভারতীয় কোচ।
কিন্তু নর্থইস্ট ইউনাইটেড ও মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের মধ্যে তফাৎ হল কলকাতার দলে আক্রমণ বিভাগের খেলোয়াড়দের আটক করা হলে। ডিফেন্ডাররাও গোল করে আসতে পারেন। তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার নাম শুভাশিস বোস, যিনি একাই এই লিগে ছ’টি গোল করেছেন। আর এক ডিফেন্ডার আলবার্তো রড্রিগেজও পাঁচ গোল করেছেন। টম অলড্রেড, দীপেন্দু বিশ্বাসও গোল করেছেন। সব মিলিয়ে দলের ডিফেন্ডাররা ১৪ গোল করেছেন। নিজেদের গোলের সামনে এদেরও সামলাতে হবে জামশেদপুরকে।
স্টিফেন এজে, আশুতোষ মেহতাদের ছাড়া তাদের রক্ষণের শক্তি কতটা বজায় থাকবে, এটাও একটা বড় প্রশ্ন। গত ম্যাচে গ্রেগ স্টুয়ার্টের পিছনে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল আশুতোষ মেহতাকে। সেই কাজটা করতে গিয়ে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখতে হয়। সোমবার এজের জায়গায় হয়তো লাজার সিরকোভিচকে নামাবে জামশেদপুর। প্রতীক চৌধুরিকে না পাওয়ায় প্রণয় হালদারকে রক্ষণে খেলানো হচ্ছে। কিন্তু আশুতোষের জায়গা নেবেন কে, সেটাই দেখার।
দুই দলই সেট পিস গোলে সেরা। চলতি লিগে সবচেয়ে বেশি সেটপিস গোল করেছে এই দুই দলই। এ পর্যন্ত ২০টি সেটপিস গোল করেছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। জামশেদপুরও এই বিষয়ে তাদের চেয়ে বেশি পিছিয়ে নেই। সেটপিসে ১৯টি গোল আছে তাদের। সেটপিস গোলে দুই দলই সেরা দুই জায়গায় রয়েছে। ফলে এই লড়াইয়ে সেটপিস থেকে গোলের প্রতিযোগিতাও দেখা যেতে পারে।
পরিসংখ্যান তত্ত্ব
দলগত: আইএসএলে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে টানা ছয় ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর গত বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালের প্রথম লেগে তাদের কাছে হারে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এই লিগে তাদের শেষ চারটি প্লে অফ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে হেরেছে সবুজ-মেরুন বাহিনী। তবে প্লে অফে কখনও টানা তিন ম্যাচে হার মানেনি তারা। শেষ ছ’টি হোম ম্যাচে ক্লিন শিট বজায় রেখেছে দু’বারের শিল্ডজয়ীরা। আইএসএলের ইতিহাসে ধারাবাহিক ভাবে এর চেয়ে বেশি ক্লিন শিট বজায় রাখতে পারেনি কোনও দল। এ মরশুমে এ পর্যন্ত তারা প্রথমার্ধে আটটি গোল খেয়েছে, যা লিগের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।
শেষ চারটি ম্যাচেই একাধিক গোল করেছে জামশেদপুর এফসি। এই চার ম্যাচে আট গোল করেছে তারা। তবে আইএসএলে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের বিরুদ্ধে কখনও টানা দু’টি ম্যাচে একের বেশি গোল করার নজির নেই তাদের। প্রথমার্ধে ২৩ গোল খাওয়ার নজির রয়েছে জামশেদপুরের, যা তারা এই মরশুমেই খেয়েছে।
ব্যক্তিগত: কলকাতার দলের অস্ট্রেলীয় তারকা জেমি ম্যাকলারেন এখন পর্যন্ত ৬টি জয়সূচক গোল করেছেন। ২০২০-২১-এ রয় কৃষ্ণা আটটি ও ২০১৫-য় স্টিভেন মেনডোজা সাতটি জয়সূচক গোল করেছিলেন। সেই রেকর্ড ভাঙতে আরও তিনটি জয়সূচক গোল করতে হবে ম্যাকলারেনকে।
জামশেদপুরের স্প্যানিশ তারকা আইএসএলে যত ম্যাচে গোল করেছেন, কোনও ম্যাচেই তাঁর দল হারেনি। এমন ১৪টি ম্যাচে জিতেছে তাঁর দল ও পাঁচটি ম্যাচে ড্র হয়েছে। মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গ্রেগ স্টুয়ার্টেরও একই পরিসংখ্যান রয়েছে (জয়-১৬, ড্র-৩)। এ মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের গোলকিপার বিশাল কয়েথ বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া প্রতিপক্ষের ৩৪টি শট সেভ করেছেন। জামশেদপুরের গোলকিপার আলবিনো গোমস বক্সের ভিতর থেকে নেওয়া প্রতিপক্ষের ৬৩টি শট সেভ করেছেন, যা এক অনন্য নজির।
দ্বৈরথের ইতিহাস
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ১১ বার। পাঁচটিতে জিতেছে কলকাতার দল। চারটিতে জামশেদপুর এফসি এবং দু’টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। দুই দলের মধ্যে ম্যাচে মোহনবাগান ১৫টি ও জামশেদপুর দশটি গোল করেছে। এ মরশুমেই আইএসএল প্লে অফে প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার