অলস্পোর্ট ডেস্ক: ভারতের সর্বকালের সেরা কোচ পিকে ব্যানার্জি একটা কথা প্রায়ই বলতেন, চচ্চড়ির মশলা দিয়ে বিরিয়ানি রাঁধা যায় না। কিন্তু বিরিয়ানির মাল মশলা নিয়ে কেউ চচ্চড়ি রাঁধলে, তাঁকে পাকা রাঁধুনি তো বলা যাবে না। চলতি মরশুমে কী এমন ঘটল, গত মরশুমে দলকে আইএসএল শিল্ড ও কাপ জেতানো মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট কোচ হোসে মোলিনা বিরিয়ানি রাঁধতেই ভুলে গেলেন হাতে সবরকম মাল মশলা থাকা সত্ত্বেও? তবে কি তিনি নিদের দলের ফুটবলারদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন? নাকি, গত মরশুমের আকাশছোঁয়া সাফল্যের আত্মতুষ্টির ঘোর কাটিয়ে এখনও উঠতে পারেননি বাগান ফুটবলাররা? অনেক সময় দলে একাধিক তারকার উপস্থিতিতে ইগোর লড়াইয়ে অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্টের মতো সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষ করে বিদেশি ফুটবলারদের মধ্যে একটা গ্রুপ পলিটিক্স ভাল খেলার পরিবেশটাই মাটি করে দেয়।
এর কোনটা ঠিক, সেটা বলা কঠিন। তবে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গোয়ার মাঠে শুক্রবারের ডার্বিতে ড্র করে সুপার কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পর মোহনবাগান এসজি কোচ হোসে মোলিনা যেভাবে প্রচারমাধ্যমের সামনে টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন, তাতে দলের কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কা ও টিমের সঙ্গে জড়িত থাকা সুপার জায়ান্ট কর্তারা যে ব্যাপারটাকে ভালভাবে নেবেন না , সেটা বলাই বাহুল্য। বরং বলা যেতে মোলিনার সঙ্গে তাঁদের মধুচন্দ্রিমার দিন শেষ। গোয়া থেকে কলকাতায় ফেরার পর মোলিনাকে এর জন্য তিরষ্কার তো বটেই, এমনকি ছাঁটাইয়ের মতো পরিস্থিতির মুখেও পড়তে হতে পারে।
ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এমন ফল হল কেন? কীসের অভাব আপনার দলে? এত ভাল ফুটবলার তো দেশের অন্য কারও দলে নেই। এই দল নিয়ে তো গতবার দুটো বড় ট্রফি জিতেছেন। এবার তাহলে সেই পারফরমেন্সের দেখা মিলছে না কেন? ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে শুরু থেকে বিদেশি ফুটবলার না খেলিয়ে, কেন ওই জায়গায় সাহালকে খেলালেন? এই প্রশ্নে মোলিনার বিষ্ফোরক জবাব, ‘ এই দল আমার হাতে তৈরি নয়, টিম ম্যানেজমেন্টের বেছে দেওয়া। আমি যে ফুটবলারদের চেয়েছিলাম বিশেয় বিশেষ পজিশনে, তা পাইনি। তাতেই আশানুরূপ ভাল খেলা মিলছে না, সঙ্গ ফলও। নাম্বার টেন পজিশনে তেমন কোনও বিদেশি নেই বলেই সাহালকে ব্যবহার করতে হয়েছে।’ মোলিনার এই কথায় একটাই ইঙ্গিত মিলেছে, তিনি রবসন রোবিনহোর রিক্রুটমেন্টে খুশি নন। তিনি দলের নাম্বার টেন পজিশনে গ্রেগ স্টুয়ার্টের মতো একজন ফুটবলার চেয়েছিলেন, যিনি আক্রমণভাগটা পরিচালনা করবেন ভাল পাসিং ফুটবলে।
ডেম্পো ম্যাচে দল গোলশূণ্য ড্র করার পর মোলিনা দল গঠন ও কৌশল নিয়ে নিজের ভুলের কথা তুলে ধরেছিলেন। বলেছিলেন, এই ফলের জন্য তিনি দায়ি। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ড্রয়ের পর সুপার কাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার দায় সরাসরি নিজের ঘাড়ে নেননি। বরং বলেন, ‘ দল যে খারাপ খেলেছে এমন নয়। সেরা দলই নামিয়েছিলাম। কিন্তু ম্যাচ জিততে গেলে গোল করতে হয়, সেটা করতে পারেনি। গোলের সুযোগ যে পায়নি এমন নয়, কিন্তু লক্ষ্যভেদের অভাবে গোলটা আসেনি। প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলও তো গোল করার তেমন কোনও সুযোগ পায়নি একবার ছাড়া। তার জন্য আমাদের ডিফেন্ডারদের প্রশংসা প্রাপ্য। ইস্টবেঙ্গলের দরকার ছিল ড্র। ওরা সেই লক্ষ্যপূরণ করে সেমিফাইনালে গেছে। আমরা পারিনি। এখন ভাবতে হবে, গোল না আসার কারণ কী, আর তার সমাধানই বা কী?’
গতবারের ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে এবার মোহনবাগানের কতটা ফারাক? মোলিনার জবাব, ‘ আমরা একইজায়গায় আছি, সেখানে ইস্টবেঙ্গল ভাল ফুটবলার নিয়ে গুনগত মানের পার্থক্যটা কমিয়ে এনেছে।’
আপাতত মোহনবাগানের সামনে দীর্ঘদিন কোনও খেলা নেই। কবে আইএসএল শুরু জানা নেই কারও। স্বাভাবিকভাবে ফুটবলারদের অধিকাংশই সরাসরি গোয়া থেকে নিজের বাড়ির পথে রওনা হয়ে গেছেন। শনিবার কয়েকজন যাবেন। কয়েকজন জাতীয় দলের শিবিরে যোগ দিতে চলে যাবেন। সবমিলিয়ে মোহনবাগান টিমটা আবার একটা ছন্নছাড়া জায়গায় চলে যাবে। চলতি মরশুমে দেরিতে প্রিসিজন প্র্যাকটিস শুরু করার জন্য মোহনবাগান দলটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। শিল্ড জয় ছাড়া কোনও সাফল্য নেই। অবশ্য মোলিনা নিজে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ। বললেন, গত মরশুমের শুরুটাও চমকপ্রদ ছিল না। তারপর মরশুম যত এগিয়েছে, তত ধারালো হয়েছিল দলের খেলা।
হয়ত মোলিনার কথাটা ঠিক। তবে যেভাবে টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা নিয়ে বিষোদ্গার করেছেন তিনি, এরপর বেশিদিন মোহনবাগানে কোচিং করানোর সুযোগ পাবেন কিনা সন্দেহ? সেটা অবশ্য সময়ই বলবে।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





