অলস্পোর্ট ডেস্ক: শনিবার ঘরের মাঠে লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে জিতে শিল্ড জয়ের উদযাপন করল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট, যা নিয়ে খুবই খুশি তাদের স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা। এ মরশুমেরই আগে তিনি দলের দায়িত্ব নেন এবং মরশুম শুরুর দিকে দল অতটা ছন্দে না থাকলেও ক্রমশ তিনি দলকে কঠিন লড়াইয়ের জন্য তৈরি করেন এবং তাঁরই নেতৃত্বে ধারাবাহিক সাফল্য পায় সবুজ-মেরুন বাহিনী। শেষ পর্যন্ত রেকর্ড সংখ্যক জয়, পয়েন্ট, ঘরের মাঠে জয়, ক্লিন শিট এবং আরও বেনজির সংখ্যা নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার শিল্ড জিতে নিল মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এই অসাধারণ ও ঐতিহাসিক সাফল্য নিয়ে কী বললেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর স্প্যানিশ কোচ হোসে মোলিনা?
শিল্ড জয় প্রসঙ্গে
শিল্ড জয় আমাদের এক বিশাল সাফল্য। এটা সবার সেরা। আমি এই মরশুমের প্রতিটি দিন উপভোগ করছি। আমি আমার খেলোয়াড়দের এই সাফল্যে সাহায্য করেছি। আমি সত্যিই খুশি—তাদের জন্য, ক্লাবের জন্য, মালিকের জন্য, ম্যানেজমেন্টের জন্য, কোচিং স্টাফের জন্য। অবশ্যই, আমাদের সমর্থকদের জন্যও। আমি সবার জন্যই আনন্দিত। আমি মনে করি, এটা আমাদের প্রাপ্য।
সবুজ-মেরুন কোচের চাপ
মোহনবাগানের কোচ হওয়া সবসময়ই একটা বড় দায়িত্ব। কারণ, সবাই জানেন, মোহনবাগানের কোচ হওয়ার মানে কী এবং কতটা চাপ নিতে হয়। গত মরশুমে শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, কিছুই সহজ ছিল না। পরপর শিল্ড জেতার পর বাড়তি চাপ ছিল। আমি আমার খেলোয়াড়দেরও বলেছিলাম— এই বছরটা খুব কঠিন হতে চলেছে, কারণ, তোমরা চ্যাম্পিয়ন। সবাই তোমাদের হারানোর চেষ্টা করবে। তাই তোমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে এবং সবাইকে প্রমাণ দিতে হবে যে তোমরা সত্যিই চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়াড়। কারণ, জয়ী হওয়া কঠিন। কিন্তু জিতে চলা, বারবার জেতা এবং সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আরও কঠিন।
আমার খেলোয়াড়রা প্রমাণ করেছে যে, তারা চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়। তারা গত বছর জিতেছিল। যদিও সবাই নয়, তবে অনেকেই সেই দলে ছিল। তারা আবারও এই বছর ফিরে এসেছে, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও। এই বছরটা নিশ্চিতভাবে গতবারের চেয়েও কঠিন ছিল। কারণ, প্রতি ম্যাচেই প্রতিপক্ষ আমাদের হারানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এই পর্যায়ে পৌঁছানো সত্যিই কঠিন ছিল।
কিন্তু আমরা এখানে এসে দারুণ খুশি, আবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমার জন্যও এটি বিশেষ কিছু। আমি আমার খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে পেরেছি এবং আমরা অবশ্যই এই সাফল্য আজ উদযাপন করব। তার পর আমরা আবার মাঠে ফিরে আসব এবং চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার জন্য লড়াই করব।
স্মরণীয় পারফরম্যান্স
আজ ম্যাচটা দারুন হয়েছে। তবে আমরা অনেক ভাল ভাল ম্যাচ খেলেছি। খেলোয়াড়রা তাদের চরিত্র, আবেগ, কঠোর পরিশ্রমের প্রমাণ দিয়েছে। তারা কখনওই হাল ছাড়েনি, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছে, ফিরে এসেছে এবং জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য এক অভিজ্ঞতা। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটাও এ রকমই ছিল। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিপক্ষে, বিশেষ করে এখানে, শুরুটা ছিল সত্যিই কঠিন, খুবই চ্যালেঞ্জিং। আর জামশেদপুরে, আমি অনেকবার বলেছি, আমার মতে সেটাই ছিল সেরা পারফরম্যান্সের একটি উদাহরণ। আমরা জিততে পারিনি। কিন্তু জামশেদপুরে সেই ম্যাচটি, পারফরম্যান্সের দিক থেকে, অসাধারণ ছিল। আর আমাদের বেশ কিছু দুর্দান্ত ম্যাচ হয়েছে— গোয়ায় আমরা সত্যিই ভাল খেলেছি। আমরা হেরেছি, কিন্তু ফুটবলে এসব হয়। ২৪ ম্যাচে মাত্র দুটি হার— এটা অসাধারণ এবং আমরা, এ জন্য খুশি। শুধু একটাই চিন্তা— পরবর্তী মরশুমে কী করব? কারণ, সবাই আশা করবে আমরা আরও ভাল করব। তাই পরের মরশুম সত্যিই কঠিন হবে। কারণ, এই মরশুম অসাধারণ কেটেছে। অবশ্যই আমরা আবার চেষ্টা করব। তবে পরের মরশুমেও একই রকম ভাল করা কঠিন হবে।
অসাধারণ রক্ষণ বিভাগ
১৫টা ক্লিন শিট। এরপর আমার ডিফেন্স নিয়ে আর কিছু বলার দরকার আছে? আমার মনে হয়, এটাই যথেষ্ট। কিন্তু, আমি আবারও বলছি, ডিফেন্স মানে শুধু ডিফেন্ডার বা গোলকিপার নয়। ডিফেন্স পুরো দলের ব্যাপার। স্ট্রাইকার থেকে গোলকিপার পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে রক্ষণ সামলায়। শুরুর দিকে এটা একটু কঠিন ছিল। আজ আপনারা দেখেছেন আমাদের রক্ষণ কেমন করেছে। মুম্বইয়ে আমরা সেটপিস থেকে দুটো গোল খেলেও, ডিফেন্স দুর্দান্ত ছিল। আমার মতে, স্ট্রাইকারদের রক্ষণে সাহায্য করাটাই আসল ব্যাপার। শুধু ডিফেন্স নয়, গোলকিপারও অসাধারণ পারফর্ম করেছে। কিন্তু আমি শুধুমাত্র ডিফেন্সের দিকে ফোকাস করতে চাই না। আমার কাছে দল মানে দল। আমি ডিফেন্স এবং আক্রমণকে আলাদা করে দেখতে পারি না। ডিফেন্ডার এবং গোলকিপার তাদের সাহায্য না করলে অ্যাটাকাররা গোল করতে পারবে না। যদি তারা সুযোগ তৈরি না করে, যদি সঠিকভাবে বিল্ড-আপ না হয়। তাহলে স্ট্রাইকাররা কিভাবে ভাল জায়গায় থাকবে গোল করার জন্য?
আন্তর্জাতিক অবকাশে ছন্দপতন?
আমি মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের বাড়ি যাওয়ার, প্রিয়জনদের সাথে দেখা করার, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এবং বিশ্রাম নেওয়া দরকার। তা হলে আমরা আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসব। আমি নিশ্চিত যে, খেলোয়াড়রা ফিরে এসে প্লে-অফ খুব উপভোগ করবে, কঠোর পরিশ্রম করে প্রস্তুত হয়ে ফিরে আসবে এবং ম্যাচ জেতার চেষ্টা করবে। দলের কয়েকজন খেলোয়াড় জাতীয় দলের শিবিরে থাকবে। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এটা তাদের জন্য ভাল। ক্লাবের জন্য এবং আমার জন্যও ভাল। আমাদের এতজন খেলোয়াড় জাতীয় দলে আছে, এর মানে আমাদের দল দুর্দান্ত, তাই না? ভারতের ম্যাচ হয়ে গেলে তারা ফিরে আসবে। এখনও জানি না সেমিফাইনালে কার বিপক্ষে খেলব। তবে এটা নিশ্চিত যে, আমরা সেমিফাইনালে যথেষ্ট শক্তিশালী দল হিসেবেই নামব। এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
সমর্থকদের ধন্যবাদ
সমর্থকদের ছাড়া এখানে খেলতে নামা অনেক সময় বেশ কঠিন। আমি আগেও বলেছি, এটা একটা বড় ফ্যাক্টর। ঘরের মাঠে খেলতে নামলে মনে হয়, আমরা যেন একজন অতিরিক্ত খেলোয়াড় নিয়ে খেলছি। কারণ, সমর্থকেরা আমাদের অনেক সাহায্য করে। কিন্তু সত্যি বলতে, আমরা সবসময় একইরকম খেলতে চেষ্টা করি—ঘরে হোক বা বাইরে। যখন আমরা গোয়ার মুখোমুখি হই, গোয়াতে গিয়েও আমরা একই রকম কিছু করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু গোয়ায় আমরা হেরেছিলাম। কারণ, কিছু কিছু মুহূর্তে ভুল হয়। কখনও কখনও আপনি ততটা সফল হতে পারেন না, যতটা চান। কিন্তু এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, এখানে আমাদের সমর্থকদের সামনে খেলা দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। তারা আমাদের অনেক সাহায্য করে। তাই তাদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনাদের সমর্থনের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনারা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ।”
ভাগ্যের সাহায্যে সেরা সাফল্য?
এটা আমার সেরা সাফল্য কিনা, আমি জানি না। আশা করি, আমার সেরা সময় এখনও আসেনি। আমি প্রতিদিন সফল হওয়ার জন্য পরিশ্রম করে চলেছি। আমি মনে করি, আমরা সবাই মিলে দারুণ একটা কাজ করেছি। যখন কারও কাজে পরিশ্রম আর আবেগ থাকে, তখন হয়তো সে ভাগ্যবান হতে পারে। কিন্তু ভাগ্য বিনামূল্যে আসে না।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার