সুচরিতা সেন চৌধুরী: কোচেরা যতই আবেগকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলুন না কেন, কলকাতা ডার্বি খেলার যে উন্মাদনা ছুঁয়ে গিয়েছে তাঁদেরও তা ফুটবলারদের কথায় স্পষ্ট। এই ডার্বি আবেগের, এই ডার্বি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের, এই ডার্বি তারকার উত্থানের। একটা সময় বলা হত, ডার্বি তারকা তৈরি করে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের বা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ইস্টবেঙ্গলের গোলের কারিগর সব সময়ই তারকা হয়ে উঠেছেন। আর বেশিরভাগ সময়ই এই জায়গাটা নিয়েছেন কোনও একজন ভারতীয়। তবে এই আইএসএল-এর যুগে সবাই তারকা। বিদেশিরাও বড় বড় লিগে খেলে এখানে যোগ দিচ্ছেন। তাও কলকাতা ডার্বি ঘিরে সবার বাড়তি উৎসাহ যে রয়েছে তা আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেন। আগের দিন সেই আবেগ দেখা গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার লাল চুংনুঙ্গার মধ্যেও। রাত পোহালেই আরও একটা ডার্বি। আর সেই ডার্বির আবহ দুর্ভাগ্যজনকভাবেই তৈরি হচ্ছে গুয়াহাটিতে। যা হতাশার। মেনে নিলেন ম্যাকলারেন।
আইএসএল ২০২৪-২৫-এর ফিরতি লেগের ডার্বি খেলতে শুক্রবার বিকেলেই উড়ে যাচ্ছে দুই দল। তার আগে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেন। একদিন আগেই সেই কাজ সেরে রেখেছিল ইস্টবেঙ্গল। এদিন এক বিমানেই গুয়াহাটির উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে দল। তবে ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে যে কেউ কাউকে জমি ছাড়বে না তা তাঁদের শরীরী ভাষায় স্পষ্ট। জেমির কাছে অবশ্য তাঁর দেখা সেরা ডার্বি এটাই। কারণ অবশ্যই দলের সমর্থকরা।
জেমি বলছিলেন, ‘‘এই বিশাল স্টেডিয়ামে দর্শক ভর্তি ঘরের মাঠে খেলতে না পারাটা সত্যিই হতাশাজনক। আমরা সমর্থকদের গুয়াহাটিতে মিস করব। এটা আমাদের হোম ম্যাচ, আমরা গুয়াহাটি থেকেও তিন পয়েন্ট নিয়ে ঘরে ফিরতে চাই সমর্থকদের জন্য।’’ এর সঙ্গে তিনি জুড়ে দেন, ‘‘আমি মোহনবাগানে ডার্বি খেলতে এসেছি। এত সমর্থক, এত ঐতিহ্য রয়েছে ক্লাবের। সবাই চায় এই ক্লাবের হয়ে খেলতে। আশা করি গুয়াহাটিতে ভালও দর্শক আসবে। আমার দেখা সেরা ডার্বি এটাই। আমার মনে এশিয়ার সেরা ডার্বি এটাই।’’
জেমির সুরে সুর মিলিয়েই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ভরসা নুঙ্গা বলেন, ‘‘ভারতীয় ফুটবলে এই ডার্বি একটি বড় বিষয় আর সে কারণেই আমরা গুয়াহাটিতে আমাদের ফ্যানদের মিস করব। পরিস্থিতির জন্য অনেকেরই যাওয়া সম্ভব নয়। তবে আমরা আমাদের খেলা খেলব জয়ের জন্যই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা বড় ক্লাব এবং প্রতিটি খেলা জেতার মানসিকতা নিয়েই আমরা মাঠে নামি।’’ রক্ষণের সমস্যা নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েকটি ম্যাচে আমরা সুযোগ পেয়েও ক্লিনশিট রাখতে পারিনি। ঘুরে দাঁড়াতে আমরা ভাল প্রশিক্ষণ নিচ্ছি এবং কোচের সাহায্যে সবকিছু উন্নত করার চেষ্টা করছি।’’
এই ডার্বি জিততে হলে এই ম্যাকলারেনদেরই আটকাতে হবে নুঙ্গাদের। তবে যে শুধু ম্যাকলারেন, কামিংস বা গ্রেগকে আটকালেই হবে তা নয় বরং আটকাতে হবে পুরো দলকে, সেটা বুঝিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার ফরোয়ার্ড। বলছিলেন, ‘‘আমি আরও বেশি গোল করতে পারলে ভাল লাগবে। কিন্তু আমাদের দলের প্রত্যেকেই গোল করতে পারে। তাই ম্যাকলারেন সবসময় গোল করবে সেটা খেলার পরিকল্পনা নয়। আমরা সামনে থেকে রক্ষণ করি এবং পেছন থেকে আক্রমণ করি। এবং এটি ব্যক্তিগত কোনও জায়গা নয়, এটি দলের বিষয়। আমি আরও বেশি গোল করব তবে আমার লক্ষ্য দলের জয়।’’
তিনি বলেই দিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে খেলাটা সহজ হবে না। সঙ্গে এও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা যাতে ক্লিনশিট রাখতে পারেন তার উপর কাজ করছে দল। দলের ক্লিনশিট রাখার জন্য গোলকিপার থেকে ব্যাক লাইন সবার প্রশংসা করেছেন তিনি। সঙ্গে এটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে লড়াই সহজ হবে না। তিনি বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল খুব ভাল দল। তারা ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে। তবুও আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা ম্যাচ জিতছি। এই ডার্বি, ভারতীয় ফুটবল আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমি এখনও ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছি।’’ তবে প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গল হওয়ায় বাড়তি কোনও চাপ যে তাঁর উপর নেই সেটাও দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। তবে এটাও পরিষ্কার করে দিয়েছেন, কোচ তাঁকে প্রথম দলে খেলান বা পরিবর্ত হিসেবেই নামান তাঁর খেলা একই থাকবে। বলেন, ‘কখনও কখনও প্লেয়ার পরিবর্তনের কারণে খেলা বদলে যায়। কোচের পরিকল্পনা যাই হবে, আমরা আমাদের সেরাটাই দেব।’’
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার