সুচরিতা সেন চৌধুরী: তিনিই কি আইএসএল-এর সফলতম কোচ? ভারতীয় ফুটবলের অল্প-সল্প খবর রাখা মানুষও একবাক্যে এর উত্তর দেবেন ‘হ্যাঁ’। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে কুইজের এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি তাঁর সোচ্চারছে উচ্চারিত হলে তখন ফাইনালের জন্য চোয়িল শক্ত হচ্ছে সহাবাসের। এবার একটা বৃত্ত সম্পূর্ন করতে চান আন্তেনিও লোপেজ হাবাস। মোহনবাগানের মরসুমটা ডুরাণ্ড কাপ জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল সবুজ-মেরুনের। দলকে চ্যাম্পিয়ন করেও বিদায় নিতে হয়েছিল তৎকালীন কোচ হুয়ান ফেরান্দোকে। হাবাস যখন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর থেকে কোচ হয়ে যোগ দিলেন দলের সঙ্গে তখন আইএসএল বন্ধ, ভুবনেশ্বরে সহকারি কোচের তত্ত্বাবধানে চলছে কলিঙ্গ কাপ।
আইএসএল-এ টানা চার ম্যাচে হার এবং কলিঙ্গ কাপের ব্যর্থতার পর দলের হাল ধরলেন তিনি। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল দল। তিনি যেন মোহনবাগানের জন্য আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ হয়ে এলেন। আবার সেই চেনা ছন্দে সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। মরসুম শেষের আগেই ঘরে চলে এসেছে অধরা লিগ শিল্ড। অতীতে আইএসএল ট্রফি হাতছাড়া হয়েছিল এই মুম্বইয়ের কাছে হেরেই। এবার কি তাহলে বদলার পালা?
হাবাস বলছেন, “বদলা কথাটা শুনলে মাফিয়া মাফিয়া মনে হয়। তাই বদলা নয়। এটা ফুটবল। নতুন একটা দিন। আমরা ফাইনালটা জিততে চাই। চ্যাম্পিয়ন হয়ে বৃত্তটা সম্পূর্ন করতে চাই।” একই কথা বলছেন অধিনায়ক শুভাশিস। তিনি বলছেন, “ওটা অতীত। ওই ফল আমরা বদলাতে পারব না তাই সেটি নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সামনে যেটা আছে সেটাই আসল। ক্লিনশিট রেখে জিততে চাই।”
এবার পরপর দু’বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ। মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট সমর্থকরা মাঠে বসে প্রিয় দলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সাক্ষী থাকতে চাইছেন। অতীতে এমনটা হয়নি ফলে টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে আর এখন চেয়েও আর লাভ নেই কারণ ‘সোল্ড আউট’এর বোর্ড ঝুলে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এক কথায় আবেগের বিস্ফোরনের অপেক্ষা। রাত পোহালেই সেই মুহূর্ত তখন শহরের সব রাস্তা গিয়ে মিশবে সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে। তবে তার আগে কিছুটা হলেও নিরুত্তাপ আইএসএল-এর সফলতম কোচ হাবাস। আসলে জিতেই আবেগে ভাসতে ভালবাসেন তিনি।
এদিন তাঁর সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু, দিমিত্রি পেত্রাতোস, সাহাল আব্দুল সামাদ। চলতি মরসুমে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হলে মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট ত্রিমুকুট জয়ের কৃতিত্ব পেয়ে যাবে। আর এখন সেটাই লক্ষ্য পুরো দলের। পুরো মরসুমে দারুণ ছন্দে বাগানের দিমি। কখনও গোল করাচ্ছেন, কখনও করছেন। এই আবেগটা কোথা থেকে পান তিনি? এদিন সেটাই খোলসা করলেন। বলছিলেন, “কলকাতায় খেলতে আসার পর থেকেই ভালবাসাটা শুরু হয়েছিল। আর এখন তো এটা আমার সেকেন্ড হোম। এই দল আমার পরিবার।” বাড়ি, পরিবারের জন্য তাঁর এই উজার করে দেওয়াটা তাঁর জন্য খুবই স্বাভাবিক।
চারবার ফাইনালে উঠে দু’বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন কোচ হাবাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আইএসএল এবং হাবাস সমার্থক। সবচেয়ে বেশি আইএসএল ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব পকেটে রাখা হাবাস চলতি আইএসএল ফাইনালের আগে সতর্ক। প্রতিপক্ষ মুম্বই সিটি এফসি চিরকালই মোহনবাগানের গাঁট। তাই সতর্ক পুরো দল।
কার্ড সমস্যায় সাদিকু নেই। বাকি সকলেই আছে মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট সাজঘরে। হাবাস বলছেন, “আইএসএল লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ন। কারণ লিগের অনেক ম্যাচ ধারাবাহিকভাবে খেলার পরে আপনি সেই সুযোগটা পাচ্ছেন। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হওয়া কয়েকটি নক আউট ম্যাচ খেলার মাধ্যমে হয়ে থাকে। তবুও আরও একটা ফাইনাল যা আমরা জিততে চাই।”
প্রচণ্ড গরমে আইএসএল ফাইনাল খেলা। নক আউট ম্যাচ মানে অতিরিক্ত সময় এবং টাইব্রেকারের সম্ভাবনা থাকে। হাবাস প্রচণ্ড গরমের কথা মাথায় রেখে মজা করে বলছেন, “আমি তো ম্যাচটা ৪৫ মিনিটে শেষ করতে চাই। প্রচণ্ড গরমে খেলা সবসময়ই কষ্টকর। তবে এটা ফুটবল। আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। চাইব নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ করতে।” যে কথা তিনি নকআউটের শুরু থেকেই বার বার বলেছেন।
তিনবছর আগে মুম্বই সিটি এফসি আইএসএল লিগ শিল্ড এবং আইএসএল ফাইনাল দুটোতেই মোহনবাগানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবার যেন উলটপূরান। মোহনবাগান সুপারজায়ান্ট লিগ শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মুম্বই সিটি এফসিকে হারিয়ে। আইএসএল ফাইনালেও দুটো দল পরস্পরের মুখোমুখি। হিসেব চুকানোর পালা এবার মনবীর, শুভাশিস পেত্রাতোসদের। তবে শেষ কথা বলবে ৯০ মিনিট বা ১২০ মিনিট বা টাইব্রেকার। আর একটা নতুন ভোরের অপেক্ষায় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার