অলস্পোর্ট ডেস্ক: এক শিবিরে যখন হতাশার অন্ধকার নেমে এসেছে, অন্য শিবিরে তখনও আত্মবিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট। শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে কলকাতা ডার্বি গোলশূন্য হওয়ার পর দুই শিবিরের চেহারা এ রকমই।
এ দিন মহমেডান এসসি-র বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে দুই নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার নন্দকুমার শেকর ও নাওরেম মহেশ সিং লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর প্রায় ৭৫ মিনিট (বাড়তি সময়-সহ) ন’জনে মিলে লড়াই করে দুর্দান্ত রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে ইস্টবেঙ্গল এবং নিজেদের গোল অক্ষত রাখে। এ দিনই চলতি লিগের প্রথম পয়েন্ট অর্জন করে নেয় তারা। উল্টোদিকে ইস্টবেঙ্গলকে এই অবস্থায় পেয়ে ঘন ঘন আক্রমণ করেও একবারও গোলের মুখ খুলতে পারেনি মহমেডান। এই আফসোস অনেক দিনই রয়ে যাবে তাদের।
ম্যাচের পর মহমেডান কোচ চেরনিশভ বলেন, “আটজনের বিরুদ্ধে খেলেও আমরা গোল করতে পারলাম না, ম্যাচটা জিততে পারলাম না, এটা খুবই হতাশাজনক। আমাদের জেতা উচিত ছিল। অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করেছি আমরা। বেশ কিছু ভাল ক্রস দিয়েছি। কিন্তু কখনও গোলকিপার খুব ভাল খেলেছে, কখনও আমরা ফিনিশ করতে পারিনি। এ ভাবে অনেক সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। একটা দল যখন ন’জনে খেলে, অন্য দল এগারো জনে, তখন সবাই আশা করে দ্বিতীয় দলই জিতবে। আমাদের সত্যিই আজ জেতা উচিত ছিল। সে জন্যই এই ফলে আমরা খুশি নই”।
তাঁর প্রতিপক্ষের কোচ অস্কার ব্রুজোঁ হতাশার মধ্যেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের ম্যাচে আমাদের কী সমস্যা হয়েছে, তা আমাদের সমর্থকেরা বুঝতে পেরেছে। এটা আমাদের নৈতিক জয়। কারণ, যে অবস্থায় আমরা ছিলাম, তাতে আমরা এই ম্যাচটা হারতে পারতাম। কিন্তু তা হতে দিইনি। টানা চারটি ম্যাচে আমরা হারিনি। আট মাস পরে আমরা এই প্রথম ক্লিন শিট রেখে মাঠ ছাড়তে পারলাম। এই ম্যাচে আমাদের তিন পয়েন্ট পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। সেই লক্ষ্যেই নেমেছিলাম আমরা। কিন্তু পরিস্থিতি যে রকম তৈরি হল, তাতে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। এখন আমাদের ইতিবাচক হওয়া প্রয়োজন। আমাদের সমর্থকেরা আজ আমাদের পাশে ছিল। তারা আমাদের ছেলেদের চারিত্রিক দৃঢ়তার পরিচয় পেয়েছে। ভবিষ্যতে এটা আমাদের কাজে লাগবে”।
মহমেডানের রাশিয়ান কোচ চেরনিশভ তাঁর দলের ফুটবলারদের পারফরম্যান্সে যে খুশি নন, তা তাঁর কথায় স্পষ্ট। বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে গোলের মুখে শেষ শটের ক্ষেত্রে। একটা আত্মবিশ্বাসী দল যখন আক্রমণে ওঠে, তখন তাদের ভাল ক্রস, ফাইনাল পাস এগুলো দেওয়া উচিত। কিন্তু আজ আমরা তা পারিনি। অথচ এগুলো অনুশীলন করেছি আমরা। কিন্তু ছেলেরা যদি পরপর ভুল করতে থাকে এবং তার ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস যদি হঠাৎ কমে যায়, তা হলে আরও সমস্যা বাড়ে। আমাদের ফাইনাল শটে আরও নিখুঁত হতে হবে”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমরা আক্রমণে তীব্রতার বাড়ানোর জন্য একাধিক পরিবর্তন করেছিলাম। একাধিক স্ট্রাইকারও আনি। কিন্তু শেষটাই যদি ভাল না হয়, তা হলে ৪-৫ জন স্ট্রাইকার খেলিয়েও লাভ নেই। আক্রমণে আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে”।
ইস্টবেঙ্গলের লড়াই নিয়ে মহমেডান কোচ বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের এই ফলে খুশি হওয়া উচিত। গতবার আই লিগে একটা ম্যাচে আমাদেরও এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল। সেই ম্যাচে আমরা ন’জনে খেলেছিলাম এবং এ রকমই লড়াই করেছিলাম। এটা ওদের নৈতিক জয় বলা যেতেই পারে”।
ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কারও তা মেনে নেন। তিনি বলেন, “আমাদের অনেক ভাল দিক আছে, যেগুলো আমরা কাজে লাগিয়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরতে পারি। আমরা যে আত্মবিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেটা ক্রমশ ফিরে আসছে। লিগ টেবলের শেষ জায়গাটা থেকে উঠতে হলে আমাদের কয়েকটা জয় পরপর পেতেই হবে। কারণ, ১২ নম্বরের সঙ্গে আমাদের এখনও চার পয়েন্টের পার্থক্য। তবে আজকের এই এক পয়েন্টই আত্মবিশ্বাস জোগাল। আমাদের দলের ছেলেদের মানসিকতা, চারিত্রিক দৃঢ়তাই বুঝিয়ে দিয়েছে, আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি”।
লাল কার্ড দেখে দুই উইঙ্গার বেরিয়ে যাওয়ার পর দলের যে পরিস্থিতি হয়, তা নিয়ে লাল-হলুদ কোচ বলেন, “বিরতিতে ছেলেদের বলি, মনে করো ওরা ন’জনে খেলছে আর আমরা এগারো জনে খেলছি। কিন্তু আমাদের ৪-৩-১-এ খেলতে হচ্ছিল তখন। নিজেদের গোল রক্ষা করাটাই তখন প্রধান লক্ষ্য ছিল। কী করে গোল করা সম্ভব? তাই দলের সাতজনকে নিয়ে ওদের আটকানোর কাজটা করতে হয়েছে। একজন স্ট্রাইকারকে ওপর দিকে রাখতেই হয়েছিল, যদি কোনও সুযোগ আসে। বিরতিতে যে বার্তাটা আমি ছেলেদের দিয়েছিলাম, সেটা ওরা বুঝতে পেরেছে এবং সেই অনুযায়ীই খেলেছে। আমরা বাঘের মতো নিজেদের গোল রক্ষা করেছি”।
ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের বিরুদ্ধে এক পয়েন্ট অর্জন করতে পেরে অবশ্য কিছুটা হলেও খুশি চেরনিশভ। বলেন, “ইস্টবেঙ্গলের মতো দলের বিরুদ্ধে নেমে এক পয়েন্ট বের করে আনাটা অবশ্য খারাপ নয়। তবে এই পরিস্থিতিতে ম্যাচটা আমরা জিততে চেয়েছিলাম। তাই খুশি হতে পারছি না। তবে ফুটবলে এমন হতেই পারে। আরও খাটতে হবে আমাদের। আক্রমণের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে”।
আসন্ন আন্তর্জাতিক অবকাশকে কাজে লাগাতে চান লাল-হলুদ কোচও। মহেশের পারফরম্যান্সে যে তিনি খুশি নন, তা জানিয়ে অস্কার বলেন, “মহেশ আমাদের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়। ওকে আরও ভাল খেলতে হবে। গতবার ওর পারফম্যান্স আরও ভাল ছিল। সামনে যে অবকাশ আসছে, সেই সময়ে ওর সমস্যা দূর করার চেষ্টা করব। দলের আরও যে সব সমস্যা আছে, সেগুলোও মেরামত করতে হবে”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার