Sunday, January 19, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলইতিহাসে ফার্স্ট ক্লাস, ফুটবলে ‘এ’ লাইসেন্সের পথে বাংলার মেয়ে ভরসা দিচ্ছে ওড়িশাকে

ইতিহাসে ফার্স্ট ক্লাস, ফুটবলে ‘এ’ লাইসেন্সের পথে বাংলার মেয়ে ভরসা দিচ্ছে ওড়িশাকে

সুচরিতা সেন চৌধুরী ○ ভুবনেশ্বর: ‘‘পাস পাস পাস, রাইট মে শট লে, সামনে দেখ।’’

ভুবনেশ্বরে এএফসি কাপ কভার করতে গিয়ে হঠাৎই দেখা এই মেয়ের সঙ্গে। একটি মাঠে মেয়েদের ফুটবল অনুশীলন দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম। দেখি আরও অনেক কোচের সঙ্গে অনুশীলন করাচ্ছেন এই মেয়েও। দেখেই চেনা ঠেকল। কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। ও-ই এগিয়ে এল। হ্যাঁ, ঠিকই চিনেছি। প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, ‘‘বাঙালি?’’ উত্তর এল, ‘‘হ্যাঁ, তো।’’ তার পর, ‘‘চেনা লাগছে খুব।’’ উত্তর এল, ‘‘এত বছর কলকাতায় খেলেছি তো। গত কয়েক বছর না-হয় বাইরে। পেশার টানে কী করব উপায় ছিল না।’’

বাংলা এবং ভারতের হয়ে টানা খেলেছেন পারমিতা সীট। ওড়িশার রাজ্য মহিলা দলের অনুশীলন শেষে মাঠে দাঁড়িয়েই আড্ডা হচ্ছিল পারমিতার সঙ্গে। বলছিলেন, ‘‘প্রথম জুনিয়র ন্যাশনাল খেলি ২০০২ সালে। তার পর ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ ২০০৪ এবং ২০০৬-এ সিনিয়র ইন্ডিয়া ক্যাম্পে সুযোগ পাই। তবে সে বার চোট পেয়ে ছিটকে যেতে হয়েছিল। এর পর ২০১১ থেকে টানা ২০১৩ পর্যন্ত ভারতীয় সিনিয়র দলের হয়ে খেলেছি, প্রি-অলিম্পিক কোয়ালিফায়ার, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ দলে ছিলাম। বাংলার হয়ে ২০০৫ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা খেলেছি।’’

এর পরেই রাজ্য ছাড়তে হয় ভাল সুযোগের সন্ধানে। এক বন্ধুই খোঁজ দেন। ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত খেলেন বেঙ্গালুরুর হয়ে। কর্নাটক টিমের হয়ে খেলেছেন আইডব্লুএল। তার পাশাপাশি কাজ করেছেন এডু স্পোর্টসে। সেখান থেকে খুলে যায় কোচিং কেরিয়ারের দরজাও। ‘সাউথ ইউনাইটেড ফুটবল অ্যাকাডেমি’তে সুযোগ চলে আসে। সেই সময় সেখানে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর ছিলেন টেরি ফিলান। তাঁর অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ ভাবে কাজে লেগেছে পারমিতার। বলছিলেন, ‘‘২০২২-এ এআইএফএফ-ওড়িশা জয়েন্ট ফুটবল ডেভলপমেন্ট প্রকল্পে সুযোগ চলে আসি। বাংলায় চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তেমন কোনও সুযোগ ছিল না। ইনকাম ট্যাক্সে চেষ্টা করেছিলাম চাকরির, কিন্তু শেষ পর্যন্ত হল না।’’

বাংলায় চাকরির কথা বলতে গিয়ে এখনও পারমিতার গলায় হতাশা ঝরে পড়ে। এত কথার মধ্যেও উঠে আসে রাজনীতির কথা। তিনি মনে করেন, যাঁদের যোগ্যতা ছিল তাঁরা ভাল জায়গায় যেতে পারল না। তাঁর কথায়, ‘‘বাংলার তথা ভারতীয় মহিলা ফুটবলের বড় বড় নামদের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করতে হচ্ছে। লজ্জার বিষয়। যারা রেলে চাকরি পেয়েছে তারা এক, দু’বার ইন্ডিয়া খেলেছে। সুজাতাদি (কর) লেজেন্ড। তাঁকে কনস্টেবলের কাজ করতে হচ্ছে। ওর কি ওখানে থাকার কথা! কিন্তু কী করবে! বাঁচতে তো হবে।’’

বাংলা নিয়ে যতই হতাশা থাক পারমিতা কিন্তু ফিরতে চান সেই বাংলাতেই। তাই হাল ছাড়েননি। বরং খেলা ছেড়ে কোচিংয়ে মন দিয়েছেন। এখন তিনি কোচ। ওড়িশার রাজ্য মহিলা দলের কোচিং স্টাফের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ তিনিও। থাকেন কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের হস্টেলে। জুটেছে একটা স্কুটি। হস্টেল থেকে মাঠ— সেই স্কুটিতেই যাতায়াত। নতুন প্রজন্মের মহিলা ফুটবলারদের তৈরি করার পাশাপাশি চলছে ‘এ’ লাইসেন্স করার কাজও। পড়াশোনাটা জন্মগত। তাই সহজেই টপকে গিয়েছেন ‘সি’, ‘বি’ লাইসেন্সের গণ্ডি। এ বার পালা ‘এ’ লাইসেন্সের।

কলিঙ্গ স্টেডিয়ামের অনুশীলন মাঠের সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে নির্দেশ দিচ্ছিলেন পারমিতা। কাছের মানুষদের জন্য তিনি ‘পারো’। এখনও বাংলার সাংবাদিক দেখে ফিরে ফিরে আসে ফেলে আসা কলকাতা ফুটবলের দিনগুলো। মনে পড়ে যায় কত কথা। আর তখনই মনে হয়, ফিরতে হবে শিকরের কাছে। ফিরিয়ে দিতে হবে যা দিয়েছে এই শহর তাঁকে। তাই মনের বারান্দায় বার বার উঁকি দিয়ে যায় কলকাতা ময়দান।

ফুটবল খেলতে গিয়ে পড়াশোনাকে কিন্তু বিদায় জানায়নি এই মেয়ে। বরং মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম ডিভিশনে পাশ করার পর স্নাতক স্তরেও ইতিহাসের মতো বিষয় নিয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন। মেধাবী এই ছাত্রীর তা-ও লক্ষ্য ফুটবলই। তবে পারিবারিক শিক্ষার প্রভাবটা ভীষণ ভাবে রয়েছে তাঁর মধ্যে। ৪৫ জনের জয়েন্ট ফ্যামিলি থেকে বাবার হাত ধরেই ফুটবলে পা। বলছিলেন, ‘‘বাবাই আমার প্রথম গুরু, বাবাই আমার সব থেকে বড় সাপোর্ট। আজ বাবা নেই তবুও মনে হয় আশপাশেই রয়েছে আর আমাকে দেখছেন। তাই ফুটবল নিয়েই কাজ করতে চাই।’’

একই সঙ্গে তিনি বলতে ভোলেন না শুভেন্দু পাণ্ডার কথাও। ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের কথা। এই প্রকল্পে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনিই হাতে ধরে সব কিছু শিখিয়েছেন। সঙ্গে ওড়িশার অসাধারণ পরিকাঠামো। বলছিলেন, ‘‘এত রাজ্য ঘুরেছি, খেলেছি, কাজ করেছি ওড়িশার মতো পরিকাঠামো কোথাও নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি ওড়িশা খুব দ্রুত ভারতের স্পোর্টস হাব হয়ে উঠবে।’’

তবুও ‘পারো’ ফিরতে চান তাঁর জন্মস্থানে। যেখানে মানুষ পারমিতা তৈরি হয়েছে, যেখানে তৈরি হয়েছে ফুটবলার পারমিতা। যে শহর লড়তে শিখিয়েছে, যে শহর নিজেকে চিনতে শিখিয়েছে। সেখানেই ফিরে এসে পরবর্তী প্রজন্মকে তুলে আনতে চায় এই মেয়ে। বাংলার প্রতিভাদের নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে পৌঁছে দিতে চান একটা উচ্চতায়। তবেই না স্বার্থক এই ফুটবলার জীবন! হাওড়ার বরগাছিয়া থেকে কলকাতা ময়দান হয়ে যে দৌড় শুরু হয়েছিল তা আজও চলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে ভূমিকা। কিন্তু ফুটবলার মেয়েটা একই থেকে গিয়েছে। তাই জোরগলায় বলেন, ‘‘যা হবে ফুটবলেই হবে, না হলে নয়।’’

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments