Friday, February 14, 2025
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলমোহনবাগানের ২০২৩ কেমন গেল, ফিরে দেখা বছর

মোহনবাগানের ২০২৩ কেমন গেল, ফিরে দেখা বছর

অলস্পোর্ট ডেস্ক: ২০২৩-কে বিদায় জানানোর আগে মোহনবাগান সমর্থকেরা হতাশ হতে পারেন। কিন্তু ফেলে আসা বছরটার দিকে একবার ফিরে তাকালে বোধহয় অতটা হতাশ হবেন না। কারণ, ইন্ডিয়ান সুপার লিগে সবচেয়ে ভাল খবরটা তারা পেয়েছে এই বছরেই। নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাননি আইএসএল ২০২২-২৩ মরশুমে কাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার দিনটির কথা? কেমন গেল মোহনবাগানের ২০২৩, জেনে নেওয়া যাক।

মনে করিয়ে দেওয়া যাক সেই দিনটার কথা। ম্যাচটা যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে হলে বোধহয় ৬০ হাজার মানুষের চিৎকারে চারদিকের বাড়িগুলির দেওয়ালে ফাটল ধরে যেত। সুদূর মারগাওয়ে পন্ডিত জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে কুড়ি হাজার মানুষের চিৎকারই যেরকম তুঙ্গে ওঠে, তাতেই বোঝা যায়, সে দিন গোয়ার স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে কত সবুজ-মেরুন সমর্থক ছিলেন।

স্মরণীয় সেই মুহূর্ত

আসলে মুহূর্তটাই ছিল সে রকম। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় ১৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর অস্ট্রেলীয় ফরোয়ার্ড দিমিত্রিয়স পেট্রাটস। প্রথমার্ধের একেবারে শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকেই গোল শোধ করেন সুনীল ছেত্রী। ৭৮ মিনিটে কর্নারে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন প্রাক্তন সবুজ-মেরুন তারকা রয় কৃষ্ণা। কিন্তু ৮৫ মিনিটের মাথায় ফের পেনাল্টি পায় মোহনবাগান ও তা থেকে ফের সমতা আনেন পেট্রাটস। ২-২ হওয়ার পরেও জয়সূচক গোলের একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে তারা। 

অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পরে ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে গড়ায়। মোহনবাগানের দিমিত্রিয়স পেট্রাটস, লিস্টন কোলাসো, কিয়ান নাসিরি ও মনবীর সিং একের পর এক গোল করে চলে যান। তাঁদের গোলকিপার গোল্ডেন গ্লাভজয়ী বিশাল কয়েথ প্রথমে বেঙ্গালুরুর ব্রুনো সিলভার শট আটকাতেই জয়ের উল্লাস শুরু হয় গ্যালারিতে। শেষে সুনীল ছেত্রীর দলের মিডফিল্ডার পাবলো পেরেজ বারের ওপর দিয়ে বল উড়িয়ে দিতেই প্রায় শব্দের বিষ্ফোরণ ঘটে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে। এ রকম একটা কষ্টার্জিত অথচ অনিশ্চয়তায় ভরা সাফল্যের পর এ রকম প্রতিক্রিয়া হওয়াই স্বাভাবিক। আর বঙ্গ ফুটবলপ্রেমীরা যে ফুটবলের জন্য পাগল, সে তো সারা দুনিয়া জানে। 

টানা দুই মরশুম অপেক্ষার পর কলকাতা তাদের প্রিয় দল এটিকে মোহনবাগানকে চ্যাম্পিয়ন হতে দেখে নেয় সেই দিনে, ১৮ মার্চ ২০২৩। তাই এই উল্লাস একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। ফতোরদা স্টেডিয়ামে শুধু নয়, সারা বাংলা, ভারত জুড়ে আনাচে কানাচে সর্বত্র সে দিন সবুজ-মেরুন বাহিনীর সাফল্য উদযাপন করেন এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাবের সমর্থকেরা। 

সাফল্যের অমসৃণ পথ 

গত বারের লিগের শেষটা যে রকম রোমহর্ষক ও ধারাবাহিক সাফল্য দিয়ে করেছিল চ্যাম্পিয়নরা, লিগ পর্বে তাদের চলার পথ কিন্তু এতটা মসৃণ ছিল না। এমনকী প্লে অফ পর্বেও ফাইনালের আগে তাদের পারফরম্যান্স সমর্থকদের বেশ চিন্তায় রেখেছিল। কেন চিন্তায় রাখবে না? দুই সেমিফাইনালের একটিতেও নির্ধারিত সময়ে কোনও গোল করতে পারেনি তারা। হায়দরাবাদ এফসি-র বিরুদ্ধে প্রথম লেগে ০-০ করার পরে দ্বিতীয় লেগেও একই ফলে শেষ করে তারা। অতিরিক্ত সময়েও কোনও গোল করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুট আউটে ৪-৩ জিতে ফাইনালে ওঠে তারা। 

একটা সময় যে রকম গোলখরা দেখা গিয়েছিল এটিকে মোহনবাগান শিবিরে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল আদৌও তারা প্লে-অফ পর্বে উঠতে পারবে কি না। কিন্তু লিগের শেষ বেলায় সঠিক ছন্দ ও ফর্মে ফিরে আসায় অবশেষে বাজিমাত করেন পেট্রাটস, হুগো বুমৌসরা। তাদের লিগপর্বের দৌড় সমর্থকদের কখনওই খুব একটা স্বস্তি দেয়নি। এই জয় তো এই হার, এই কার্ড সমস্যা তো এই চোট-আঘাত। দুই বিদেশি ফুটবলার জনি কাউকো ও ফ্লেরোন্তিন পোগবাকে চোটের জন্য দেশে ফেরতও পাঠিয়ে দিতে হয়। ফলে ধারাবাহিকতার অভাব খুব বেশি রকমই ছিল তাদের। 

২০২৩ শুরুর পর লিগপর্বে ন’টি ম্যাচের মধ্যে মাত্র চারটিতে জেতে তারা। দুটিতে ড্র ও তিনটিতে হার। বছর শুরু হয় মুম্বইয়ের কাছে ০-১ হার দিয়ে। হায়দরাবাদে গিয়ে ফিরতি লিগে হারের পর তাদের সামনে শেষ দুই ম্যাচ (ফিরতি ডার্বি-সহ) হয়ে ওঠে নক আউটের মতো। জিততে পারলে প্লে অফে উঠতে পারবে তারা, না পারলে ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা অবশ্যই ছিল। সেই জায়গা থেকে প্লে অফে পৌঁছে চ্যাম্পিয়নের ট্রফিও জিতে নেয় তারা। এই অভিযান সত্যিই মনে রাখার মতো।

নতুন মরশুমে চাঁদের হাট

চলতি মরশুমের আগে দলবদলে বেশ কয়েকটি চমক দেয় মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। কাতার বিশ্বকাপে নামা সেন্টার ফরোয়ার্ড জেসন কামিংস ও আলবানিয়ার জাতীয় দলের হয়ে ইউরো ২০১৬-য় খেলা সেন্টার ফরোয়ার্ড আরমান্দো সাদিকু যোগ দেন তাদের শিবিরে। তার আগের মরশুমে দলে যোগ দেওয়া অস্ট্রেলিয়ার তারকা অ্যাটাকার দিমিত্রিয়স পেট্রাটস ও ফরাসি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হুগো বুমৌস তো ছিলেনই সবুজ-মেরুন শিবিরে।

রক্ষণের দায়িত্ব গত মরশুমে দলে যোগ দেওয়া ব্রেন্ডান হ্যামিল, আশিস রাই ও পুরনো সঙ্গী শুভাশিস বোসের ওপর ছিলই। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন ক্রিশ্চিয়ান রোনাল্ডোর বিরুদ্ধে খেলা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হেক্টর ইউস্তে। এ ছাড়াও এফসি গোয়া থেকে সবুজ-মেরুন শিবিরে যোগ দেন ভারতীয় দলের নিয়মিত ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি। যিনি মরশুমের শুরু থেকেই ছিলেন ফর্মের তুঙ্গে। আনোয়ারের মতো ভারতীয় দলের আরও কয়েকজন নিয়মিত তারকাকেও এ বার সই করায় সবুজ-মেরুন ব্রিগেড।

ভারতীয় দলের আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপার সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করে সবুজ-মেরুন বাহিনী। এ বার তাঁর সঙ্গে যোগ দেন কেরালার আর এক নির্ভরযোগ্য তারকা সহাল আব্দুল সামাদও। দলবদলে চমক দেওয়ার পরে তারা আরও একটা চমক দেয় মরশুম শুরুর আগে। প্রাক্তন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাসকে ফিরিয়ে আনে মোহনবাগান। তবে এ বার অন্য ভূমিকায়। দলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর বা টিডি হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

অনেকেরই হয়তো মনে আছে, আইএসএলে সফল কোচেদের মধ্যে সামনের সারিতে থাকা হাবাস যখন এটিকে এফসি-র কোচ ছিলেন, তখন তাদের দু’বার হিরো আইএসএল খেতাব জেতান। ২০১৪ ও ২০১৯-২০-তে। ২০১৫-য় তাঁর প্রশিক্ষণে কলকাতার দল সেমিফাইনালে উঠেছিল। ২০২০-২১-এ এটিকে মোহনবাগানকেও তুলেছিলেন ফাইনালে।

… তবু বিপর্যয়!

দুর্দান্ত একটা দল তৈরি করলেও মরশুমের শুরুতেই দুঃসংবাদ আসে তাদের শিবিরে, মরশুমের শুরুতে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট পেয়ে কার্যত সারা মরশুমের জন্যই ছিটকে যান আশিক কুরুনিয়ান। এখান থেকেই বিপর্যয়ের শুরু। আশিকের পর চোট পেয়ে যান আনোয়ার আলিও। তাঁরও দ্রুত মাঠে ফেরা অনিশ্চিত। আনোয়ার আলির অনুপস্থিতিতে দলের রক্ষণ অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।

ব্রেন্ডন হ্যামিল, হেক্টর ইউস্তে, শুভাশিস বোস, আশিস রাই-রা অবশ্য দলকে ভরসা জোগান। কিন্তু ফুল মার্কস পাননি তাঁরা। যিনি ক্রমশ ফর্মে ফিরছিলেন, সেই মনবীর সিংও মরশুমের মাঝখানে চোট পেয়ে ছিটকে যান। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার পেট্রাটসও চোটের তালিকায় নাম লিখিয়েছিলেন। তবে তিনি তাঁর হ্যামস্ট্রিং সমস্যা সারিয়ে মাঠে ফিরে আসেন। জেসন কামিংস, আরমান্দো সাদিকুরা দলকে নিয়মিত গোল করে সাহায্য করতে পারেননি। গোদের ওপর বিষফোড়া, মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে লাল কার্ড দেখে আশিস রাই, হেক্টর ইউস্তে ও লিস্টন কোলাসোর সাসপেন্ড হওয়া।

বছরের শেষে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে তারা খেলতে পারেননি। কেরালা ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে প্রথম দু’জন ফিরলেও লিস্টন কোলাসো ফিরতে পারেননি। তাঁকে চার ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

নতুন মরশুমেও দুঃসময়

এই মরশুমের শুরুতেও অবশ্য ফর্মের তুঙ্গে ছিল না সবুজ-মেরুন বাহিনী। ডুরান্ড কাপের গ্রুপ লিগে চিরপ্রতিদ্বন্দী ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যায়। যা ছিল ৫৫ মাস পরে তাদের প্রথম ডার্বি-হার। সেটাই ছিল মরশুমের শুরুতে তাদের ঘুম ভাঙানোর অ্যালার্ম। টানা চারটি ম্যাচ জিতে ডুরান্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কোয়ার্টার ফাইনালে মুম্বই সিটি এফসি-কে হারায়, যা ছিল মুম্বইয়ের ক্লাবের বিরুদ্ধে তাদের সর্বপ্রথম জয়। সেমিফাইনালে এফসি গোয়াকেও হারায় তারা এবং ফাইনালে ডার্বি হারের বদলাও নিয়ে নেয়।

আইএসএলের দশম মরশুমে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য তারকাকে ছাড়াই সাতটি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে দাপুটে জয় দিয়ে শুরু করলেও, দ্বিতীয় ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে ততটা দাপট দেখাতে পারেনি মোহনবাগান এসজি। বুমৌসের গোলে জেতে তারা। চেন্নাইয়ে আত্মবিশ্বাস ও আধিপত্য নিয়ে ৩-১-এ জয় পায় তারা। জামশেদপুরে এক গোলে পিছিয়ে থেকেও শেষে ৩-২-এ জেতে সবুজ-মেরুন বাহিনী। ২-০-য় হায়দরাবাদ এফসি-কে হারিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে জয়ের নজির তৈরি করে তারা। শেষ এগারো মিনিটে ব্রেন্ডান হ্যামিল ও আশিস রাই গোল করেন। 

ওডিশার বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচে সাদিকুর জোড়া গোলে ২-২ ড্র করে তারা। নর্থইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে দীপক টাঙরি, জেসন কামিংস ও শুভাশিস বোসের গোলে ৩-১-এ জয়ে ফেরে তারা। কিন্তু সাতটি ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর মুম্বইয়ে গিয়ে প্রথম হার মানতে হয় তাদের, ১-২-এ। তার ওপর একসঙ্গে তিনজনের লাল কার্ড দেখা। এর পর ঘরের মাঠে এফসি গোয়া এবং কেরালা ব্লাস্টার্সের কাছেও হার। আইএসএলে এর আগে কখনও টানা তিনটি ম্যাচে হারেনি মোহনবাগান।  

গত বছর যেমন দুঃসময়ের কালো মেঘ মরশুমের অনেকটা সময়েই তাদের আকাশে ঘুরে বেড়িয়েছিল, এ বারেও সেই মেঘ ফের দেখা দিয়েছে। বর্ষশেষে যেন কালবৈশাখী এসে তাদের শিবিরের ওপর আছড়ে পড়েছে। এ বার সামনে নতুন বছর। নতুন বছরের নতুন ভোরের আলো হুয়ান ফেরান্দোর বাগানে সাফল্যের ফুল ফোটাতে পারবে কি না, সে তো সময়ই বলতে পারবে। 

মাঝখানে পুরো জানুয়ারি মাসের অবকাশে যেমন চোট পাওয়া খেলোয়াড়দের মাঠে ফেরানোর সময় পাবেন তিনি, তেমনই তাদের খেলতে হবে কলিঙ্গ সুপার কাপও। তার ওপর তাঁর দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য ফুটবলার যাবেন কাতারে, ভারতীয় দলের হয়ে এএফসি এশিয়ান কাপের আসরে নামতে। সেখানে তাদের চোট-আঘাতের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। নতুন বছরে ফের নতুন করে শুরু করুক মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। ফের আগের মতো মাথা তুলে দাঁড়াক তাদের প্রিয় দল, সমর্থকেরা নিশ্চয়ই এটাই চাইছেন।  

২০২৩-এ মোহনবাগান এসজি’র আইএসএল অভিযান: ম্যাচ– ২২, জয়- ১০, হার- ৬, ড্র- ৬, গোল- ৩০, প্রতিপক্ষের গোল- ২১, ওপেন প্লে থেকে গোল- ২৩, সেট পিস থেকে গোল- ৭, সেভ- ৫৩, ক্লিন শিট- ৯। 

বছরের সেরা পাঁচ স্কোরার: দিমিত্রিয়স পেট্রাটস- ১০, জেসন কামিংস- ৪, আরমান্দো সাদিকু- ৩, কার্ল ম্যাকহিউ- ২, মনবীর সিং- ২, হুগো বুমৌস- ২। 

সেরা নজির: ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১৩টি ম্যাচে অপরাজিত (জয় ৯, ড্র ৪)। 

(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments