Friday, December 6, 2024
No menu items!
Google search engine
Homeফুটবলসাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ খেলতে আসা পাকিস্তান দলের কী অবস্থা

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ খেলতে আসা পাকিস্তান দলের কী অবস্থা

অলস্পোর্ট ডেস্ক: সে দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার ধারে কাছে আসে না আর কোনও খেলাই। ফুটবলও তার মধ্যে অন্যতম। জাতীয় ক্রিকেট দলের এগারোজনের নাম অনর্গল বলে দিতে পারে, এমন অনেক লোক পাওয়া গেলেও পাকিস্তান দলের এগারোজন ফুটবলারের নাম বলে দিতে পারবে, এমন লোক না পাওয়া গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেই অবস্থার মধ্যেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৩ খেলতে ভারতে আসছে পাকিস্তান ফুটবল দল।

আসলে যেখানে সাফল্য বলতে প্রায় কিছুই নেই, সে দিকে লোকে ঝুঁকবেই বা কেন? ভারতের তাও একটা ক্লাব ফুটবলের পরিকাঠামো রয়েছে। এ দেশে এমন অনেক ক্লাব রয়েছে, যাদের প্রচুর সমর্থক আছে এবং সেই ক্লাবগুলির জনপ্রিয়তা জাতীয় দলের জনপ্রিয়তার চেয়েও বেশি। কিন্তু পাকিস্তানে ক্লাব ফুটবলের হালও বেশ খারাপ। তার ওপর তৃতীয় পক্ষ (রাজনৈতিক মহল) বারবার ফুটবল প্রশাসনে নাক গলানোয় ফিফার নির্বাসনের খাঁড়া নেমে এসেছে পাকিস্তানি ফুটবলের ওপর। সেই সময় সেই দেশ আন্তর্জাতিক ফুটবলেও অংশ নিতে পারেনি। ফলে জনপ্রিয়তা আরও কমে গিয়েছে। দেশটাও ফিফা ক্রমতালিকায় পিছোতে পিছোতে ২০০-র কাছাকাছি চলে গিয়েছে।

এখন যা অবস্থা, জাতীয় দল তৈরি করতে হিমশিম খেতে হয় পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশনকে। বিদেশে খেলা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ফুটবলারদের ডেকে আনতে হয় আন্তর্জাতিক ফুটবলে সে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। তাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্ব দিয়ে খেলাতে হয় পাকিস্তানের হয়ে। কারণ, তাদের ফুটবল-কর্তাদের যুক্তি, দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার পাওয়াই বেশ কঠিন। যদিও এই নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। সে সবে না হয় পরে আসা যাবে।

তার আগে দেখে নেওয়া যাক ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের ফুটবল দ্বৈরথের ইতিহাস কী রকম। স্বাধীনতার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান ফুটবল মাঠে একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে ২৪বার। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১১ বার ও পাকিস্তান জিতেছে তিনবার। বাকি দশবার ড্র হয়েছে।

ভারত-পাক ফুটবল দ্বৈরথ

১৯৫৯-এ দুই প্রতিবেশী দেশপ্রথম ফুটবল-যুদ্ধে মুখোমুখি হয়। সে ছিল এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্ব। দুই লেগে দুই দলই একবার করে ১-০-য় জেতে। ১৯৬৮-র এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বেও ১-১-এ ড্র হয় ভারত-পাক ম্যাচ। ১৯৮৪-র এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ভারত জয় পায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ২-০-য় সেই জয়ে ভারতের পক্ষে দুই গোলই করেছিলেন সাব্বির আলি। আশির দশকের শেষ মোলাকাত ছিল ১৯৮৭-তে, সাউথ এশিয়ান গেমসে। কলকাতায় সেই ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়।

১৯৯১-এর সাফ গেমসেও দুই দলের মধ্যে ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। পরের বছর ফের এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে দেখা হয় ভারত, পাকিস্তানের। লোকে লোকারণ্য সে দিনের সল্ট লেক স্টেডিয়ামে আইএম বিজয়নের জোড়া গোলে জেতে ভারত। পরের বছর, ১৯৯৩-এ, ফের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করেন বিজয়ন। সে বার ৩-১-এ জেতে ভারত। তৃতীয় গোলটি ছিল কুমারেশ ভাওয়ালের। ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯-এর মধ্যে দুই দেশের দেখা হয় চারবার। ভারত তিনবার জেতে। দু’বার ২-০-য় ও একবার ৫-২-এ (১৯৯৯, সাফ গেমস)। অন্য ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হয়। এদের

নতুন শতাব্দীতে পড়ার পর দুই চিরপ্রতিদ্বন্দী দেশের ফুটবল-দ্বৈরথ দেখা গিয়েছিল ন’বার। এর মধ্যে পাকিস্তান জেতে মাত্র তিন বারও ভারতও জেতে তিন বার। ২০০৩-এর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তান জিতেছিল ১-০-য় ও ২০০৫-এ এক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে জেতে ৩-০-য়। তিনবার অমীমাংসিত থাকে। শেষবার দুই দেশ মুখোমুখি হয় ২০১৮-য়। ঢাকায় সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সে বার ভারত ৩-১-এ। মনবীর সিংয়ের জোড়া গোল ছাড়াও ছিল সুমিত পাসির গোল। পাকিস্তানের মুহাম্মাদ আলি দলের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন।

ফিফার নির্বাসন ও অবনয়ন

ফিফা ক্রমতালিকায় অবস্থানের মতো পাকিস্তান যে হার-জিতের পরিসংখ্যানেও ভারতের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে, এই নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই। তবে ফিফা ক্রমতালিকায় এখন যেখানে রয়েছে পাকিস্তান (১৯৫), কয়েক বছর আগে তার চেয়ে অনেক ভাল জায়গায় ছিল তারা। ১৯৯২-৯৩-এ ১৪০-এর ঘরে ছিল তারা। কিন্তু ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা যত বাড়তে থাকে, পাক ফুটবলের প্রতি অবহেলা ততই বাড়তে থাকে এবং ক্রমতালিকায় ততই পিছতে শুরু করে তারা।

এর মধ্যে ফুটবল প্রশাসনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের জন্য ২০১৭-র অক্টোবর থেকে ২০১৮-র মার্চ পর্যন্ত এবং ২০২১-এর এপ্রিল থেকে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসিত করে তাদের। যার ফলে তাদের আন্তর্জাতিক অগ্রগতি আরও পিছিয়ে যায়। ২০১৭-র শেষে ফিফা ক্রমতালিকায় তাদের জায়গা হয় ২০১ নম্বরে। ২০১৯-এ ২০৪-এ। সেই সময় থেকে ২০০-র আশেপাশেই ঘোরাফেরা করছে পাকিস্তান। বর্তমানে যারা রয়েছে ১৯৫-এ। তবে সাম্প্রতিক ব্যর্থতা তাদের ফের দুশোর দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারনা।

এ বছর প্রথম তারা মরিশাসে খেলতে যায় সেখানকার চতুর্দেশীয় টুর্নামেন্টে খেলতে। মরিশাস, কেনিয়া এবং জিবুতির কাছে সাত গোল খেয়ে ভারতে আসছে তারা। তিনটি ম্যাচে মাত্র একটি গোল করেছে। মার্চে মলদ্বীপে একটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এক গোলে হারে তারা। গত বছর নভেম্বরে নেপালের কাছেও ০-১-এ হারে তারা। গত এক বছরে তাদের পারফরম্যান্সের খতিয়ান এ রকমই।

ইউরোপে খেলা একঝাঁক ফুটবলার, তবু…

অথচ দলে এক ঝাঁক ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা নিয়মিত ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে থাকেন। ইউসুফ বাট, রাহিস নবি, হাসান বশির, ইশা সুলেইমান, ওটিস খান, হারুন হামিদ, আবদাল্লা ইকবাল, আদনান মহম্মদরা কেউই পাকিস্তানে থাকেন না। এরা ইউরোপ, আমেরিকায় বিভিন্ন দেশে থাকেন, সেখানকার ক্লাব লিগে খেলেন এবং যখন প্রয়োজন হয়, তখন তাঁদের দ্বৈত নাগরিকত্বের বলে পাকিস্তান ফুটবল ফেডারেশন তাদের ডেকে নিয়ে আসে জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।

ইশা সুলেইমান যেমন ইংল্যান্ডের অনূর্ধ্ব ২০ দলের অধিনায়ক হিসেবে অনূর্ধ্ব ২০ ইউরো কাপ জিতেছেন। অ্যাস্টন ভিলার যুব দল থেকে উঠে এসেছেন তিনি। আপাতত খেলেন পর্তুগীজ লিগে। গোলকিপার ইউসুফ বাট থাকেন কানাডায়। ডেনমার্কের তৃতীয় ডিভিশনে খেলেন। ২০ বছর বয়সী স্টপার আবদাল্লা ইকবাল খেলেন ডেনমার্কের দ্বিতীয় ডিভিশনে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড ও শেফিল্ড ইউনাইটেডের যুব দলে বেড়ে ওঠা ওটিস খান এখন খেলেন গ্রিমসবি টাউন ক্লাবে। রাহিস নবিও খেলেন রেডিচ ইউনাইটেডে। দুই ফরোয়ার্ড বশির খানের জন্ম ডেনমার্কে, খেলেনে সে দেশের চতুর্থ ডিভিশনে। হারুন হামিদ খেলেন কুইন্স পার্ক রেঞ্জার্সের যুব দলে। আদনান মহম্মদ খেলেন সেখানকার চতুর্থ ডিভিশনে। ইউরোপ-আমেরিকায় খেলা এতজন ফুটবলার নিয়েও তা হলে এই বেহাল দশা কেন পাকিস্তানের?

প্রয়োজন দেশীয় ফুটবলার

পাকিস্তানের প্রাক্তন সহকারী কোচ নাসির ইসমাইলের দেওয়া ব্যাখ্যা অনেকটা এ রকম, “যে প্রবসী ফুটবলাররা পাকিস্তানের হয়ে খেলছে, তাদের কেউই দেশের কোনও ক্লাবের সঙ্গে জড়িত নয়। জাতীয় আবেগও তাদের নেই। ফলে দেশের প্রতি দায়বদ্ধতাও নেই। তাছাড়া একসঙ্গে দীর্ঘ প্রস্তুতি শিবিরও করা হয় না এদের নিয়ে। সে জন্য নিজেদের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট বোঝাপড়া তৈরি হয়নি। যে যার নিজের মতো খেলে। এ ভাবে একটা দলগত খেলায় সাফল্য পাওয়া যায় না”। ফুটবলপাকিস্তান ডট কম ওয়েবসাইটে কথাগুলি বলেন নাসির।

এএফসি-র এ লাইসেন্স পাওয়া এই কোচ চান পাকিস্তানের স্থানীয় ফুটবলারদের জাতীয় দলে নিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় দলের জার্সি দেওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য যে জাতীয়তাবোধ থাকা দরকার খেলোয়াড়দের মধ্যে তা থাকবে। এক্ষেত্রে ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন,“ভারত যেমন তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে এনে তাদের নিয়ে দল গড়ে তাদের আন্তর্জাতিক স্তরের অভিজ্ঞতা অর্জন করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এই পথ অবলম্বন করে ওরা বিশ্বের ১০১ নম্বরে চলে এসেছে। আমাদেরও সেই পথই অনুসরণ করা উচিত”।

দরকার প্রস্তুতি শিবির

পাকিস্তানের  প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ এসা পাকিস্তানের এই ফুটবল ওয়েবসাইটকে বলেন, “প্রবাসী ফুটবলারদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এরা কোনও প্রস্তুতি শিবির করে না  এবং সরাসরি ও অনেক দেরি করে  দলে যোগ দেয়। ফলে যে টুর্নামেন্টেই আমরা খেলি, তার প্রথম ম্যাচেই শোচনীয় ভাবে হেরে যাই এবং তার নেতিবাচক প্রভাব সারা টুর্নামেন্টে পড়ে। ওরা যদি একটা অন্তত ২০ দিনের প্রস্তুতি শিবির করে তার পরে খেলতে নামে, তা হলে তারা অনেক বেশি কার্যকর হবে”।

সাম্প্রতিক ম্যাচের উদাহরণ দিয়ে এসা বলেন, “মরিশাসের বিরুদ্ধে ম্যাচেই দেখা যায়, দলের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। ফলে তারা ০-৩-এ হেরে যায়। পরের ম্যাচগুলোতে যার প্রভাব পড়ে সরাসরি ভাবে। গত দু’দশক ধরে আমরা প্রবাসী ফুটবলারদের নিয়ে খেলছি কোনও ইতিবাচক ফল ছাড়াই। এর ফলে স্থানীয় ফুটবলারদের প্রতি আমরা অবিচার করছি। এ ভাবে পাকিস্তানের ভবিষ্যথ তৈরি হবে না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের আগে আমাদের বেঙ্গালুরুতে সপ্তাহ দুয়েকের একটা প্রস্তুতি শিবির করা উচিত ছিল”।

একেই এই অবস্থা। তার ওপর ভিসা বিভ্রাটে পাকিস্তান দল সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম ম্যাচ খেলার দিনই হয়তো এসে পৌঁছবে। এই অবস্থায় ভারতের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তারা কতটা ভাল খেলতে পারবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

(লেখা ও ছবি আইএসএল ওয়েবসাইট)

খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com

অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments