অলস্পোর্ট ডেস্ক: ১৮ আগস্ট ২০২৪, ভারতীয় তথা কলকাতা ফুটবলের ইতিহাসে লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। এই দিন লেখা থাকবে, ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান তথা বাও ফুটবল সমর্থকদের নামে। ১৯৭৬ সালে একটা অগস্ট হয়েছিল। ইডেন গার্ডেনে দুই প্রধানের ম্যাচে গ্যালারিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৬ জন ফুটবল সমর্থকদের। সেই দিন এই বঙ্গে ফুটবলপ্রেমী দিবস পালন হয়। হয় ঘটা করে রক্তদান শিবির। আরও একটা ফুটবলপ্রেমী দিবস যুক্ত হল ক্যালেন্ডারে। সেদিন দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল আর আজ তিন প্রধানের সমর্থকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন।
আর সমর্থকদের সেই প্রতিবাদের মঞ্চেই সবাইকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে হাজির হলেন সস্ত্রীক মোহনবাগান অধিনায়ক শুভাশিস বোস। তাঁর স্ত্রীর হাতে ধরা ছিল প্ল্যাকার্ড। শুভাশিস অবশ্য গলা মেলালেন জাস্টিস চেয়ে সমর্থকদের সঙ্গে। বললেন, “আজ আমি এখানে এসেছি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে। এর বিচার চাই। যতদিন না এর বিচার হবে ততদিন এই আন্দোলন চলবে।”
এই না হলে ক্যাপ্টেন? সব ঠিক থাকলে এই সন্ধ্যায় নিজের সর্বস্ব দিয়ে ৯০ মিনিটের লড়াইয়ে নামতেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। কিন্তু আতঙ্কে সে ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। গ্যালারিতে নাকি উত্তেজনা ছড়ানোর এক কষেছে কারা। তাই বাতিল ডার্বি। পাশাপাশি নাকি পুলিশের অভাব। সব মিলে নিরাপত্তার অভাব দেখিয়ে বাতিল ডার্বি। কিন্তু প্রতিবাদ বাতিল করা গেল না। যে প্রতিবাদ গ্যালারিতে হওয়ার কথা ছিল সেই প্রতিবাদ দেখা গেল স্টেডিয়ামের বাইরে। তা থামাতে শয়ে শয়ে পুলিশ হাজির হলেন কিন্তু গ্যালারির নিরাপত্তায় পুলিশের অভাব। লক্ষ্য লক্ষ্য সমর্থকদের মধ্যে ছয় জনকে গ্ৰেফতার করল পুলিশ।
ফিরে আসি শুভাশিসের কথায়। এদিন যৈ ভূমিকায় তাঁকে দেখা গেল তাঁকে স্যালুট করছেন ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরাও। শুভাশিস বলছিলেন, “আমি ফুটবলে বাঁচি। আমরা এই ম্যাচটার জন্য মুখিয়ে থাকি। অনেক ডার্বি তো হয় না। কিন্তু একটা ফুটবল ম্যাচ, একটা ডার্বির থেকে এই ঘটনা অনেক বড়। আমার মা, বোন, দিদিরা যদি নিশ্চিন্তে রাস্তায় না বেরতে পারে তাহলে সেটা আমাদের লজ্জা। সব মহিলাদের নিরাপত্তা দিতে হবে আমাদের।”
শুভাশিসের এই প্রতিবাদে সামিল হওয়া আরও একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কোথায় ইস্টবেঙ্গলের সিনিয়র ও অন্যতম বাঙালি তারকা? শৌভিক চক্রবর্তীর দিকেই ইঙ্গিত বোঝাই যাচ্ছে। তাঁকে রাস্তায়, প্রতিবাদে এখনও দেখা যায়নি। তবে শুরুতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদী পোস্ট করে ফেসবুক অ্যাকাউন্টই তাঁর ব্লক হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে সবাইকে অবাক করে আগেই এই প্রতিবাদে পায়ে পা মিলিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের এক বিদেশি। দলের ফিছিও সেনের আলভারেজকে দেখা গিয়েছে সস্ত্রীক এই প্রতিবাদে অংশ নিতে। শৌভিক ও নিশ্চই এই প্রতিবাদে একদিন রাস্তায় নামবে। তাঁর আগে সমর্থকদের তরফে শুভাশিসকে স্যালুট ও শৌভিককে লাল কার্ড।
তবে বাংলার প্রাক্তন, বর্তমান ফুটবল প্রজন্মের গর্বিতদের এখনও তেমনভাবে দেখা যায়নি। যশপ্রীত বুমরাহ, মহম্মদ সিরাজ, বিরাট কোহলির মতো কয়েকজনকে এই নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে কিন্তু বাকিরা কোথায়? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এমন মন্তব্য করলেন যার ফল আবার তাঁকে নিজের বক্তব্যের পক্ষে বক্তব্য দিতে হল। তবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান সমর্থকরা যে উদাহরণ ১৮ অগস্ট তৈরি করল, তাঁর পর লজ্জায় ক্রীড়াবিদরা আদৌ সামনে আসেন কিনা সেটাই দেখার।
(ছবি: ফেসবুক থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার