মুনাল চট্টোপাধ্যায়: মানোলো মারকোয়েজের বিদায়ের পর ভারতীয় ফুটবল দলের নতুন কোচ নিয়োগের কাজটা দ্রুত অথচ নিয়মমাফিক পদ্ধতি মেনেই সারতে চান ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের কর্তারা। ইতিমধ্যেই কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে কোচ নিয়োগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকছে ফেডারেশনের টেকনিকাল কমিটির ওপর। তবে সেই কমিটি কোচ বাছাইয়ের পথে হাঁটবে আবেদনকারী কোচদের তালিকা হাতে পাওয়ার পরই।
তার জন্য ফেডারেশন বিজ্ঞাপন দেবে ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছুক কোচদের নাম পেতে। সেটা পেয়ে গেলে আইএম বিজয়নের চেয়ারম্যানশিপে টেকনিকাল কমিটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, যাবতীয় প্রক্রিয়া মেনে কোচ নিয়োগের কাজ সম্পূর্ণ করবে। তবে এখানে কয়েকটা কথা বলা জরুরি। ইগর স্টিমাচকে বরখাস্ত করার পর রীতিমতো ঝামেলায় পড়েছিলেন ফেডারেশন সভাপতি কল্যান চৌবে ও অন্যান্য পদাধিকারীরা, সভাপতি কল্যানের কাজকর্ম নিয়ে ক্রোয়েশিয়ান বিশ্বকাপার স্টিমাচ তীব্র আক্রমণ শানানোয়। সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন ফেডারেশনে তাঁর ভূমিকা নিয়ে।
শেষপর্যন্ত স্টিমাচকে বিশাল পরিমান আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে মুখ বাঁচে কল্যান ও ফেডারেশনের। ক্ষতিপূরণ দিয়ে আর্থিক ভাঁড়ারে এতই টান পড়ে, নতুন কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে ফেডারেশনকে আর্থিক দিকটা মাথায় রেখেই এগোতে হয়েছিল। সেসময় আন্তোনিও লোপেজ হাবাস, মানোলো মারকোয়েজ, সঞ্জয় সেন সহ আরও বেশি কিছু দেশি ও বিদেশি কোচ ভারতীয় দলের দায়িত্ব নিতে আবেদন জানালেও, একপ্রকার বলতে গেলে ফেডারেশন সভাপতির অঙ্গুলিহেলনে টাকা বাঁচাতে এএফসি গোয়ার কোচ মানোলো মারকোয়েজকে বাছে টেকনিকাল কমিটি। কারণ মানোলোকে যেহেতু ভারতীয় দলের কোচিং করানোর পাশাপাশি সমান তালে এফসি গোয়ার কোচিং করবেন এই শর্তে নেওয়া হয়, মানোলোর ভারতীয় দলে কোচিং করার জন্য ফেডারেশনকে কোনও টাকা দিতে হয়নি। সেটা পুরোটাই বহন করে এফসি গোয়া।
মানোলোর এই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার কারণেই ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভারতীয় ফুটবল দল। মানোলোর কোচিংকালে দেড় বছর মেয়াদে ভারতীয় দল জিতেছিল একটা মাত্র ম্যাচ। এরপর জাতীয় দলের দায়িত্বে মানোলো থাকলে আরও খারাপ হত। দেরিতে হলেও কিছুটা বোধোদয় হয়েছে ফেডারেশনের। পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে মানোলোকে ভারতীয় কোচের পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে ফেডারেশন। বুঝেছে, মানোলোর মতো আবার কোনও পার্টটাইম কোচ নিয়োগ করে ভারতীয় ফুটবলকে আরও সর্বনাশের পথে ঠেলে দিলে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। ফেডারেশন সভাপতি কল্যানের আসন এমনিতেই টলমল, তারওপর হঠকারি কোনও সিদ্ধান্ত নিলে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তাঁকে সরতে হবে।
নতুন কোচের দাবিদার হিসেবে জোরালো ভাবে সঞ্জয় সেন, খালিদ জামিলের সঙ্গে আরও বেশ কিছু নাম শোনা যাচ্ছে। বিজ্ঞাপন বেরুলে আগেরবারের মতো ভারতীয় ক্লাব ফুটবল ও বাংলার অন্যতম সফল কোচ সঞ্জয় সেন ভারতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য আবেদন করবেন, এটা জানিয়েছিলেন তিনি। এবার সেটাই করবেন। আইলিগ চ্যাম্পিয়ন, আইএসএল সহকারী কোচের ভূমিকায় কাজ করা, বাংলাকে সন্তোষ ট্রফি এনে দেওয়া প্রোলাইসেন্সধারী কোচ সঞ্জয় সম্প্রতি এলিট কোচিং রিফ্রেশার্স কোর্স সেরে এসেছেন নিজের প্রোলাইসেন্স ডিগ্রির মান ও পয়েন্ট বাড়াতে। এগুলো প্রোলাইসেন্সধারী কোচদের করতেই হয়, ডিগ্রি ধরে রাখতে।
গতবার টাকা বাঁচাতে সঞ্জয় সেন ও হাবাসের নাম শর্টলিস্টে রেখেও মানোলোকে কোচ করেছিল ফেডারেশনের টেকনিকাল কমিটি। এবার ফেডারেশনের একাংশ জামেশদপুর এফসির কোচ খালিদ জামিলকে যেমন চাইছেন ভারতীয় কোচের ভূমিকায়, তেমন অন্য অংশ জোরালোভাবেই সঞ্জয়কেই কোচ হিসেবে দেখার পক্ষপাতী। সঞ্জয় সেনের এর আগে ভারতীয় যুব দলে কলিন টোলের সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এখন দেখার এবার সঞ্জয়কে কোচ করার শুভবুদ্ধি মাথায় নিয়ে গতবারের ভুলের প্রায়শ্চিত্ত টেকনিকাল কমিটি করে কিনা?
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন:ফেসবুক ও টুইটার





