অলস্পোর্ট ডেস্ক: দেড় মাস, এবং ৮৭ ম্যাচ পরে, আগামী ৯০ বা সম্ভবত ১২০ মিনিট বা তার কিছু বেশি সময় পর হায়দরাবাদের জিএমসি বালাযোগী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে নেমে শেষ হতে চলেছে একটা দীর্ঘ লড়াইয়ের। যেখানে সন্তোষ ট্রফি ২০২৪-২৫-এর ৭৮তম জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে কেরালার মুখোমুখি হবে বাংলা। যে দু’টি রাজ্য যথাযথভাবে ভারতীয় ফুটবল হাবের ট্যাগ অর্জন করেছে তারা জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে কোনও অপরিচিত নাম নয়। বাংলা রেকর্ড ৪৭তম ফাইনালের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যখন কেরালা সন্তোষ ট্রফিতে তাদের ১৬তম ফাইনাল খেলতে চলেছে।
উভয় দলই টুর্নামেন্টে তাদের অসাধারণ ফুটবল ও ফর্ম দেখিয়েছে, তাদের ১০টি ম্যাচের মধ্যে নয়টি জিতেছে এবং একটি ড্র করেছে।
ঐতিহাসিকভাবে, বাংলা এই পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে, সন্তোষ ট্রফির ৩২ বারের চ্যাম্পিয়ন, আর কেরালা সাতবার চ্যাম্পিয়ন। ইতিহাস সমানে সমানে না হলেও এই পর্যায়ে দাঁড়িয়ে সমানে সামনে একে অপরের বিরুদ্ধে নামবে দুই দল। সাম্প্রতিক সময়ে কেরালা বেশ কয়েকবার বাংলাকে বেগ দিয়েছে। ২০১৭-১৮ এবং ২০২১-২২ সন্তোষ ট্রফি তারা জিতেছে বাংলাকে হারিয়েই।
বাংলার প্রধান কোচ সঞ্জয় সেন বিশ্বাস করেন, নতুন বছরের প্রাক্কালে ফাইনালে খেলায় ইতিহাসের কোনও ভূমিকা নেই৷ “সম্ভবত (সন্তোষ ট্রফি) ফাইনালে পৌঁছানো অন্যান্য রাজ্যের জন্য একটি অর্জন, তবে এটি আমাদের ক্ষেত্রে নয়৷ বাংলার কাছে এর কোনও মানে নেই – জিরো! যদি আমরা ট্রফি জিততে না পারি, সবকিছুই মূল্যহীন,’’ বলেন সঞ্জ সেন।
“হ্যাঁ, আমরা অতীতে ৩২বার টুর্নামেন্ট জিতেছি, কিন্তু সন্তোষ ট্রফি এখন অনেক বড় টুর্নামেন্ট, এতে অংশগ্রহণকারী রাজ্যের সংখ্যার দিক থেকে। আমি অতীতের সাফল্যকে ছোট করতে চাই না, তবে আমি মনে করি যে এটি এখন জেতা আরও কঠিন,” সঞ্জয় সেন বলেন।
সঞ্জয় সেনের প্রতিপক্ষ বিবি থমাস মুত্তাথ তাঁর নিজ রাজ্যের তরফেও একই প্রত্যাশা করছেন। “সন্তোষ ট্রফি কেরালায় নিয়ে যাওয়া আমাদের কাছে বিশ্বকাপের মতো। আমাদের কাছে ন্যূনতম প্রত্যাশা ছিল ফাইনালে পৌঁছানোর, তবে অবশ্যই, সবাই জয়ের চেয়ে কম কিছু চায় না,” তিনি বলেন।
দুই দল এখনও পর্যন্ত ১০টি ম্যাচে আক্রমণাত্মক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে, কেরালা ৩৫টি গোল করেছে, আর বাংলা ২৭টি গোল করেছে। নসিব রহমান (৮), মহম্মদ আজসাল (৯)) এবং সজিশ ই (৫)— কেরালার গোলের তালিকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
কেরালার খেলোয়াড়রা বাংলার কাছে অপরিচিত নন। সেমিফাইনালের হ্যাটট্রিক হিরো মহম্মদ রোশাল পিপি-সহ বর্তমান কেরালার দলের হাফ ডজন খেলোয়াড় রয়েছেন, যাঁরা কলকাতায় সিএফএল দলে খেলেন এবং ময়দানের পরিচিত মুখ।
অন্যদিকে বাংলার হয়ে গোল করার জন্য মূল দুটো নাম, রবি হাঁসদা (১১), এবং নরোহরি শ্রেষ্ঠা (৭)। হেড কোচ সঞ্জয় সেন অবশ্য ফরোয়ার্ডদের উপর তার দলের অতিরিক্ত নির্ভরতা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এটা অবশ্যই স্ট্রাইকারদের জন্য ভাল, কিন্তু যতক্ষণ আমরা জিতব, কে স্কোর করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এটি দলে অনেক স্কোরার রাখতে সাহায্য করে, কারণ আমাদের রবি বা নরোহরির উপর নির্ভর করতে হবে না। কিন্তু এই পর্যায়ে এই ছেলেদের নিয়মিত গোল করতে দেখে আমি খুশি।”
বিবি থমাস মনে করেন যে এটি একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালের জন্য তৈরি হতে হবে। “আমি মনে করি চারটি সেমিফাইনালিস্টের মধ্যে যে কোনও একজনেরই টুর্নামেন্ট জেতার মতো যথেষ্ট গুণ ছিল, কিন্তু ভাগ্যক্রমে বা অন্যথায়, ফাইনালে বাংলা এবং কেরালা। উভয়ই ভারতীয় ফুটবলের কেন্দ্রবিন্দু, এবং আমরা ম্যাচের দিন কঠিন লড়াই আশা করছি, “তিনি বলেন।
হাঁসদা, যিনি বর্তমানে স্কোরার চার্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তিনি তাঁর প্রথম সন্তোষ ট্রফি ফাইনালের অপেক্ষায় রয়েছেন। “এটি এখন পর্যন্ত আমার জন্য একটি অসাধারণ টুর্নামেন্ট ছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে আমি এতগুলো গোল করতে পেরেছি। এটা প্রথমবার যে আমি ফাইনাল খেলব, তাই আমি আমার সেরাটা দিতে চাই।”
নিজো গিলবার্ট, যিনি মিডফিল্ডে কেরালার জন্য এতদিন সেরাটা দিয়ে এসেছেন, তিনি মনে করেন যে তাঁর দল এবং বাংলার মধ্যে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে তা ২০২৪-২৫ সন্তোষ ট্রফির ফাইনালকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে।
“বাংলা এবং কেরালার মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে – এটি প্রায় ডার্বির মতো। আমি মনে করি এটি একটি খুব কাছাকাছি লড়াই হবে, তবে আশা করি, আমরা ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরব। আমাদের জন্য যা গুরুত্বপূর্ণ তা হল আমাদের কোচ আমাদের জন্য যে পরিকল্পনা তৈরি করেছেন, সেই অনুযায়ী খেলা,” তিনি বলেন।
সন্তোষ ট্রফি (ফাইনাল রাউন্ড) হেড টু হেড:
ম্যাচ খেলেছে: ৩২; বাংলা ১৫ জিতেছে, কেরালা জিতেছে ৯, ড্র ৮
ফাইনাল ম্যাচ: ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৭.৩০
ম্যাচ সম্প্রচার: ssen.com-এ স্ট্রিম করা হবে এবং ডিডি স্পোর্টসে।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার