অলস্পোর্ট ডেস্ক: সামনে আইএসএলের শেষ চার ম্যাচ। সঙ্গে মার্চে এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দু’টি ম্যাচও রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। অর্থাৎ, সামনের দিনগুলি কঠিন হতে চলেছে তাদের। আইএসএলে লক্ষ্যপূরণ হয়নি। এখন সেই হতাশা ভোলার একটাই উপায়, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল কিছু করা এবং সুপার কাপের খেতাব ধরে রাখা। ইস্টবেঙ্গল শিবির যে সেই কঠিন চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি হচ্ছে, তা বোঝা গেল তাদের অধিনায়ক ও তারকা মিডফিল্ডার সউল ক্রেসপোর কথাতেই।
শনিবার পঞ্জাব এফসি-র ঘরের মাঠে চলতি লিগে তাদের ২১ নম্বর ম্যাচ খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল এফসি। কয়েকদিন আগেই চোট সারিয়ে মাঠে ফেরা স্প্যানিশ মিডিও ক্রেসপো তার আগে জানিয়ে দিলেন, এখন তাঁদের ফোকাস শুধুমাত্র এই ম্যাচেই। পাঞ্জাবকে কী করে হারানো যায়, তার নীল নকশা তৈরিতেই ব্যস্ত তাঁরা।
গত ৭ ডিসেম্বর চেন্নাইন এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচে চোট পাওয়ার পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি মাঠে ফেরেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার। এর মাঝে দলের ন’টি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে তাঁর সতীর্থ মিডফিল্ডার মাদি তালাল এবং ডিফেন্ডার হিজাজি মাহেরও চোট পেয়ে সারা মরশুমের জন্য ছিটকে যান। একই কারণে বসে পড়েন ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভাও। তাঁদের অনুপস্থিতিতে দল সেরা ছয়ে পৌঁছনোর লক্ষ্যে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।
গত রবিবার ম্যাচের ৬১ মিনিটের মাথায় নন্দকুমার শেকরের বদলে সউল ক্রেসপোকে মাঠে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজোন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর এই সিদ্ধান্তের সুফল পায় দল। মাঠে নামার মাত্র চার মিনিটের মধ্যেই গোলের সন্ধান পান ক্রেসপো। বক্সের মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় থাকা তাঁকে লক্ষ্য করে ক্রস পাঠান রাফায়েল মেসি বৌলি এবং নিখুঁতভাবে ডান পায়ের নীচু শটে গোলের বাঁদিকের কোণ দিয়ে জালে বল জড়িয়ে দেন ক্রেসপো। এ মরশুমে এটিই তাঁর একমাত্র গোল। মোট ২৯ মিনিট মাঠে থেকে একটি শট গোলে রাখেন তিনি এবং সেটি থেকেই গোল পান। একটি গোলের সুযোগও তৈরি করেন ক্রেসপো।
নিজে গোল করতে না পারলেও দলের জন্য মোট দশটি গোলের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি। কার্যকরী ফুটবলার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা ক্রেসপো পাঞ্জাব-ম্যাচ খেলতে দিল্লি যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের বলেন, “এটা ঠিকই যে, গত ম্যাচে আমরা ভাল খেলেছি। তবে আমাদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এখন আমরা শুধু পাঞ্জাবের কথা ভাবছি। কারণ, এই ম্যাচটা ফাইনালের মতো এবং আমরা এখন শুধুমাত্র এই ম্যাচেই মনোনিবেশ করছি”।
গত মরশুমে লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চারটি গোল করা ক্রেসপো তাঁর এ মরশুমের পারফরম্যান্স নিয়ে বলেন, “আমি মনে করি আমার পারফরম্যান্স ভাল ছিল। কিন্তু এটাও ঠিক যে, চোটের কারণে আমি অনেকদিন মাঠের বাইরে ছিলাম। সে জন্য আমি খুশি নই। তবে এখন আমি দু’সপ্তাহ ধরে দলের সঙ্গে অনুশীলন করছি এবং আমার ফিটনেসও ভাল অবস্থায় আছে। আশা করছি, মরশুমটা ভালভাবে শেষ করতে পারব। আমি মনে করি সংখ্যা আমাদের পক্ষে আছে এবং আমাদের ইতিমধ্যেই সেরা ছয়ে পৌঁছনোর সুযোগও রয়েছে। তাই আমরা বিশ্বাস রাখছি, আত্মবিশ্বাসী আছি। এএফসি গ্রুপ পর্বেও আমরা খুব ভাল খেলেছি এবং আমি নিশ্চিত যে, পরের রাউন্ড কঠিন হবে, কিন্তু আমরা প্রস্তুত থাকব লড়াই করে জেতার জন্য”।
কেন এ মরশুম এমন কাটল, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ক্রেসপো বলেন, “আমরা রোটেশন নিয়ে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি, ক্লান্তি ছিল এবং আমাদের পক্ষে এটা কঠিন মরশুম ছিল। আমরা খারাপভাবে শুরু করেছিলাম এবং স্পষ্টতই অনেক চোটের সম্মুখীন হয়েছি। কিছু গুরুতর চোটও ছিল। তবে আমি মনে করি, অজুহাত দেওয়ার কোনও মানে নেই, আমাদের মরশুমটা ভালভাবে শেষ করতে হবে—এএফসি এবং আইএসএল, দুটোতেই”।
হতাশ সমর্থকদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে ক্রেসপো বলেন, “আমি ম্যাচের পর সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলেছি, এবং আমরা সমর্থকদের অনুভূতি বুঝতে পারি। তারা চটে আছে, যেটা স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য লড়াই করব। আশা করি, মরশুমের শেষ অংশে আমরা ভাল ফল অর্জন করতে পারব এবং সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব”।
অস্কার ব্রুজোনের দলের প্লে-অফে পৌঁছানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। তাদের অবশ্যই বাকি সব ম্যাচ জিততে হবে, যার মধ্যে পাঞ্জাব এফসি ও নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসির বিপক্ষে জয় অন্তর্ভুক্ত। তবুও, তারা নির্ভর করবে অন্যান্য দলের পারফরম্যান্সের ওপর। নর্থইস্ট ইউনাইটেড এফসি-কে বাকি দুই ম্যাচ হারতে হবে, কেরালা ব্লাস্টার্সকে চার পয়েন্ট হারাতে হবে। ওডিশা এফসিকে ছয় পয়েন্ট হারাতে হবে এবং চেন্নাইন এফসিকে তাদের যে কোনও একটি ম্যাচে পয়েন্ট হারাতে হবে। শর্তগুলো বেশ কঠিন, তবে ফুটবলে কিছুই অসম্ভব নয়!
(লেখা আইএসএল ওয়েবসাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার