অলস্পোর্ট ডেস্ক: ইউরোর মাঠে লাল ঝড়। স্বপ্ন দেখিয়েও হতাশাই জুটল ইংল্যান্ডের ভাগ্যে। কেউ কাঁদল জয়ের কান্না, কেউ যন্ত্রণায় ডুবল। গ্যালারি থেকে স্পেনের পরবর্তী প্রজন্মের সাফল্য দেখলেন জাভি, ইনিয়েস্তারা। জার্মানির অলিম্পিয়াস্টেডিয়নে আরও একবার ইউরো কাপের উপর খোদাই করা হল স্পেনের নাম। আরও একবার পুরো টুর্নামেন্টে দাপট দেখিয়েই চ্যাম্পিয়ন স্পেন।
ফাইনাল বলে কথা, আর যখন দুই যুযুধান প্রতিপক্ষ মুখোমুখি কাপের লড়াইয়ে তখন শুরুতে যে একে অপরকে মেপে নেওয়ার খেলাতেই মাতবে দুই দল তা স্বাভাবিক। এতদিন নক-আউট পর্বে বার বার দেখা গিয়েছে ম্যাচের শুরুতেই গোল করে কোনও না কোনও দল এগিয়ে গিয়েছে এবং এমনও দেখা গিয়েছে, দ্রুত গোল করে এগিয়ে যাওয়া দল শেষ পর্যন্ত হেরে গিয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে সেমিফাইনাল এই ঘটনা বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে। তবে ফাইনালে সাবধানী স্পেন ও ইংল্যান্ড। দুই দলই দাপটের সঙ্গে ইউরো ২০২৪-র ফাইনালে পৌঁছেছিল। আর এদিন ছিল শেষ লড়াইয়ের মুহূর্ত। সেখানে প্রথমার্ধকে মেপে নেওয়ার জন্যই রেখেছিল দুই পক্ষ।
প্রথমর্ধের সমানে সমানে লড়াইয়ের শেষটা হয় গোলশূন্যভাবেই। কারণ কোনও পক্ষই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি। তবে দ্বিতীয়ার্ধটা যেন অন্য মেজাজেই শুরু করল স্পেন। চোটের জন্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রডরিকে তুলে মার্টিনকে নামাতে বাধ্য হলেন স্পেন কোচ। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটেই অবশ্য স্পেন এগিয়ে গেল। স্পেন ও ইংল্যান্ড দ্বিতীয়ার্ধে নেমেছিল ০-০ স্কোর নিয়ে। কিন্তু গুছিয়ে নেওয়ার আগেই নিকো উইলিয়ামসের অসাধারণ ফিনিশ অবাক হয়ে দেখা ছাড়া ইংল্যান্ডের কিছু করার ছিল না। শুরু করল স্পেন, শেষটাও লেখা থাকল তাদেরই নামে। মাঝে একবার জ্বলে উঠেছিল ইংল্যান্ড।
স্পেনের প্রথম গোলের পিছনে ভূমিকা রেখে গেলেন সেই দলের ওয়ান্ডার বয় লামমিন ইয়ামাল। উইলিয়ামসকে গোলের ফাইনাল পাসটি বাড়িয়েছিলেন ইয়ামালই। সেই বল বক্সের এককদম বাঁ দিকের কোণায় ধরে গোল লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন উইলয়ামস। যা এগিয়ে আসা ইংল্যান্ড গোলকিপারেকে ডজ করে দ্বিতীয় পোস্টের দিক দিয়ে চলে যায় গোলে। ৪৬ মিনিটে এগিয়ে গিয়েই ৪৮ মিনিটেও সহজ সুযোগ চলে এসেছিল স্পেনের সামনে। দানি ওলমোর গোলমুখি শট অল্পের জন্য বাইরে যায়। এর পর পুরোটাই প্রায় স্পেনের আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত থাকতে হয় ইংল্যান্ড রক্ষণকে।
প্রথমার্ধে দুই পক্ষই কিছুটা ফিজিক্যাল গেম খেলায় বেশ কিছু ফাউল হয়। যার ফলে দুই দলই একাধিক ফ্রি-কিক জিতে নেয় কিন্তু কোনও পক্ষই তা কাজে লাগাতে পারেনি। স্পেনের দানি ওলমো ও ইংল্যান্ড অধিনায়ক হ্যারি কেনকে হলুদ কার্ডও দেখতে হয়। স্পেনের পক্ষেপ প্রথমার্ধে বেশ কিছু আধা সুযোগও তৈরি হয়। কিন্তু তা থেকে গোল আসেনি। তবে দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম গোল তুলে নেওয়ার পর আক্রমণে ঝাঁঝ বাড়ে স্পেনের। পুরো টুর্নামেন্টে যে দাপটের সঙ্গে খেলে ফাইনালে পৌঁছেছে তার ঝলক দেখা যায় ফাইনালেও।
প্রথম গোল হজমের পর ইংল্যান্ড গোলের নিচে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন ইংল্যান্ড গোলকিপার। যে কারণে স্পেনের নিশ্চিত গোলের একাধিক সুযোগ আটকে যায় তাঁর হাতে। না হলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। আর তার মধ্যেই সমতায় ফেরে ইংল্যান্ড। ৭২ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন বেলিংহ্যাম। কিন্তু ততক্ষণে তাঁকে ঘিরে ফেলেছে স্পেন রক্ষণ। তিনি নিশ্চিত হয়ে যান এখান থেকে কোনওভাবেই তিনি গোলে শট নিতে পারবেন না। সুযোগ বুঝে ব্যাকপাস করেন। বক্সের বাইরে সেই বল পেয়ে যান কোল পামার। চলতি বলেই তাঁর জোড়াল শট স্পেন রক্ষণ ও গোলকিপারকে চমকে দিয়ে চলে যায় গোলে।
যদিও ইংল্যান্ডের সমতায় ফেরার উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেয়নি স্পেন। ৮৫ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় তারা। মার্ক কুকুরেলার ক্রস থেকে মাইকেল ওয়ারজাবালের গোলকিপারকে কাটিয়ে বক্সের মধ্যে থেকে শট গোল চিনতে ভুল করেনি। ২-১ গোলে এগিয়ে যায় স্পেন। হাতে তখনও নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিটের সঙ্গে এক্সট্রা টাইম বাকি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই কর্নার থেকে নিশ্চিত সুযোগ চলে এসেছিল ইংল্যান্ডের সামনে যা স্পেন গোলকিপার ও রক্ষণের বোঝা পড়ায় আটকে যায়। আর এখানেই শেষ হয়ে যায় ২০২৪-এর ইউরো কাপ ফাইনাল। ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন স্পেন।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার