সুচরিতা সেন চৌধুরী: বিদায় ক্যাপ্টেন, বিদায় ৯৪ গোলের মালিক।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করছেন গত একমাস ধরে। তাঁর অবসর ঘিরে যখন আবেগান্বিত গোটা দেশ তখনও বার বার বলেছেন, ‘‘ম্যাচটা আমার নয়, ভারতের। আপনারা তাতে ফোকাস করুন।’’ সত্যিকারের টিমম্যান। তাঁকে ছাড়া এই ভারতীয় দলকে ভাবা যায় না। ভাইচুং ভুটিয়া পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ফুটবলের মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনিই। তাঁর পর কে? এখন এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। প্রতিভা হয়তো অনেকই রয়েছে কিন্তু তারকা হয়ে উঠতে পারবেন ক’জন? ভাইচুংয়ের জায়গা নিয়েছিলেন সুনীল, সুনীলের জায়গা কে নেবেন? সুনীলকে জিজ্ঞেস করলে কষ্ট করে গোটা তিনেক নাম বলবেন। কিন্তু আদৌ কি তাঁরা তারকা হয়ে উঠতে পারবেন? এই একগুচ্ছ প্রশ্নের মধ্যেই অবসর নিয়ে নিলেন সুনীল ছেত্রী। খেলে ফেললেন কেরিয়ারের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
অবসরের জন্য বেছে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের যোগ্যতা নির্ণায়ক ম্যাচ। সঙ্গে বেছে নিয়েছিলেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে। যে কলকাতা থেকে পেশাদার কেরিয়ার শুরু করেছিলেন সেই মাঠেই শেষ করলেন ১৯ বছরের উজ্জ্বল ফুটবল জীবনের। ম্যাচটা জিতে সুনীলকে উপহার দিতে চেয়েছিলেন দলের বাকি সদস্যরা, কিন্তু সেটা হল না। ম্যাচ ড্র হয়ে গেল। যার ফলে ভারত পুরোপুরি ছিটকে না গেলেও কঠিন হয়ে গেল পরবর্তী পর্ব। তবে এই ম্যাচ যে সুনীল ছেত্রীর ম্যাচ ছিল তা ম্যাচ শেষে আরও একবার প্রমান হয়ে গেল। সুনীলের সঙ্গে কাঁদল গোটা গ্যালারি।
ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজতেই চুপ করে মাঠে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন বিদায়ী ক্যাপ্টেন। তখন চুপ পুরো দল। সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে কোচিং স্টাফ। এর পর ছিল ফ্যানদের বিদায় জানানোর পালা। গ্যালারির দিকে মুখ করে হাত জোড় করে পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করলেন শেষবারের মতো। এই মাঠে হয়তো তিনি আবার খেলবেন, হয়তো বেঙ্গালুরু এফসির জার্সি গায়ে কিন্তু দেশের নীল জার্সিটা আর পরা হবে না। ক্লাব নয় সুনীল ছেত্রী তো দেশের হয়ে সব থেকে বেশি সফল। দেশকে উজার করে দিয়েছেন ১৯ বছরের কেরিয়ারে। যার ইতি হয়ে গেল ৬ জুন ২০২৪-এর এক সন্ধ্যায়।
মাঠ প্রদক্ষিণ সেরে দলের প্লেয়ার আর সাপোর্ট স্টাফদের গার্ড অফ অনার নেওয়ার আগে কান্নায় ভেঙে পড়লেন। নিজেকে সামলাতে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললেন। তাও নিজেকে সামলাতে পারলেন না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। গ্যালারিতে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সুনীলের বাবা, মা, স্ত্রী। একে অপরকে জরিয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন ফ্যানরাও। ভেজা চোখে বাড়ির পথ ধরলেন তাঁরা। সুনীল শেষ বারের মতো ভারতের জার্সি পরে ঢুকলেন ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে। বসে পড়লেন সিঁড়িতে। এই সিঁড়ি তো তাঁর বড্ড চেনা।
এর পর ছিল তাঁকে সম্বর্ধনা দেওয়ার এলাহী ব্যবস্থা। আবার তিনি ফিরলেন মাঠে। তখন গায়ে ভারতের পতাকা। রাজ্যসরকারের তরফে তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হল সোনার চেন। তুলে দেওয়া হল পুষ্পস্তবক। আইএফএ ও সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের তরফেও তাঁকে সংবর্ধিত করা হল। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান ক্লাবের তরফেও ছিল তাঁকে সংবর্ধিত করার পালা। সুনীলের সতীর্থ মেহতাব, নবি, দীপঙ্কর, অ্যালভিটোর মতো প্রাক্তনরাও তাঁকে সংবর্ধিত করলেন। ছিলেন আইএম বিজয়নও। এই আবেগের বিস্ফোরণ এর আগে কোনও ভারতীয় ফুটবলারের অবসরে হয়নি। তাই হয়তো দুঃখ ভুলে ভালবাসার জোয়ারে ভাসলেন সুনীল ছেত্রী।
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার