সুচরিতা সেন চৌধুরী: ভারতীয় ফুটবল দলের তারকা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী বুধবার তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে চলেছেন। যদিও এই ম্যাচ ভারতীয় ফুটবল দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এই ম্যাচের পুরোটা নিয়েই রয়েছেন সুনীল ছেত্রী। যদিও সেটা সাংবাদিকদের তৈরি করা বলেই তিনি মনে করেন। যে কলকাতার মাটিতে পেশাদার ফুটবলার জীবন শুরু করেছিলেন সেখানেই শেষ ম্যাচ খেলবেন। মাঝে আর মাত্র কয়েকঘণ্টা। তার পরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দেশের জার্সি গায়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নামবেন সুনীল ছেত্রী। তার আগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের কনফারেন্স রুম জুড়ে যেন শুরু থেকেই বিরাজ করলেন তিনি। পুরো সময়টাই আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে গেলেন। তবে এটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন, আর যাই হোক কোচিং করাবেন না কখনও।
পাশেই তখন বসে কোচ ইগর স্টিমাচ। তাঁকে দেখিয়ে সুনীল বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে যখন এখানে এসেছিলেন তখন একজন ইয়ং, দারুণ দেখতে কোচকে পেয়েছিলাম। আর আজকে দেখুন (ইগরের মাথার দিকে আঙুল দেখিয়ে)। আমি খুব কাছ থেকে কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি জানি কী চাপ নিতে হয় কোচকে। আমি সেটা পারব না। বরং আমি এই জীবনটা উপভোগ করব। সকালে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে হবে না। আর যাই করি কোচিং করাব না।’’ এর মাঝে অবশ্য স্টিমাচ তাঁর ইচ্ছের কথাও জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আমি তোমাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চাই।’’
কুয়েতের বিরুদ্ধে দলের গুরুত্বপূর্ণ ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচের আগে যেন তিনি শত চেষ্টা করেও পারলেন না সবার ফোকাস তাঁর থেকে ম্যাচে ফেরাতে। ঘুরে ফিরেই চলে এল তাঁর কথা। তবে এটাও ঠিক, বৃহস্পতিবার একটি জয় ভারতীয় দলকে ফিফা বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউন্ডে প্রথমবারের মতো পৌঁছে দিতে পারে। “এটা আমার এবং আমার শেষ ম্যাচের কথা নয়। আমি বারবার এটা বলতে চাই না। আমরা সত্যিই এই ম্যাচটি জিততে চাই। এটা সহজ হবে না, কিন্তু আমরা প্রস্তুত নিজেদের সেরাটা দিতে,” বলছিলেন সুনীল ছেত্রী।
তিনি গত মাসেই ঘোষণা করেছিলেন যে দ্বিতীয় লেগে কুয়েতের বিপক্ষে ম্যাচটি হবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাঁর শেষ ম্যাচ। ১৯ বছরের গৌরবময় কেরিয়ারের সমাপ্তির ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। এবার শুধু সেই নির্দিষ্ট সময়টার অপেক্ষা। সুনীল যতই তাঁর শেষ ম্যাচ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করতে চান তা যে সম্ভব নয় সেটা তিনি নিজেও জানতেন। বলছিলেন, ‘‘গত তিন দিন ধরে আমার শেষ ম্যাচ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এখন শুধু ভারতের ম্যাচ নিয়ে কথা বলব। কারণ এই ম্যাচ সহজ হবে। এই ম্যাচের গুরুত্ব সম্পর্কে সবার জানা। আমরা প্রচুর খেটেছি। আশা করছি আমরা এই ম্যাচ জিতব। আমরা আত্মবিশ্বাসী।’’
তিনিই ভারতীয় দলের নেতা। তাঁর পর কে সেটা এখনও কারও জানা নেই। তিনি বলছিলেন, “প্রতিদিন আমি ছেলেদের সাথে কথা বলি, আমি তাদের এই স্বপ্ন সম্পর্কে বলতে থাকি। দীর্ঘ শিবির দলের মধ্যের বোঝাপড়া তৈরি করতে সাহায্য করে, কারণ আমরা ভিন্ন মানসিকতা থেকে এসেছি। এটি আপনাকে বিশদে অনেক কাজ করার জন্য অনেক বেশি সময় দেয়।”
তবে দল যদি তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছে যায় তাহলে তো লড়া্ইটা আরও কঠিন হবে। যে স্বপ্নের কথা তিনি দলকে সারাক্ষণ বলেন সেই স্বপ্ন ছুঁতে তখন যে তাঁর উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তাহলে কি অবসরের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে?
“না স্যার, স্যুট তৈরি করা হয়েছে এবং আমি ছেলেদের খেলা দেখতে যাচ্ছি। আমি এটি নিয়ে অনেক ভেবেছি। আমি এই ১৯ বছর ধরে দুর্দান্ত একটা যাত্রা পথ অতিক্রম করেছি। এর পর থেকে আমি একজন ভক্ত হিসাবে যাব এবং দল যেখানেই যাবে দলকে সমর্থন করব।”
আন্তর্জাতিক কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচে গোল করে শুরু করেছিলেন শেষ ম্যাচেও সুনীলের থেকে গোল দেখতে চান ভক্তরা। তবে তিনি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে নারাজ। বলছিলেন, ‘‘যে কেউ গোল করতে পারে। এই জায়গা নেওয়ার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন মনবীররা, আমার যাওয়ার অপেক্ষা, ভাবছে কতক্ষণে যাব (মজা করে)। তবে হ্যাঁ গোল করতে পারলে ভাল লাগবে।’’
সুনীল জানিয়ে দিলেন দলের উপর কোনও চাপ নেই। চাপ মুক্ত হয়েই বৃহস্পতিবার খেলতে নামবে দল। বলছিলেন, ‘‘আমি সব সময় বলি মাঠে নেমে নিজের খেলাটা উপভোগ করো। কাল একটা অসাধারণ ম্যাচ হতে চলেছে। আশা করছি আমরা উপভোগ করব।’’
শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে জামাই সুনীল ছেত্রীকে কী উপদেশ দিলেন সুব্রত ভট্টাচার্য? প্রশ্ন শুনে সাময়িক হেসে ফেলেছিলেন ভারত অধিনায়ক। পাস থেকে তখন প্রশ্নটা না বুঝতে পেরে সুনীলের কাছে জানতে চান কোচ স্টিমাচ। তাঁকে সুব্রত ভট্টাচার্য আর তাঁর সম্পর্কের কথা এক শব্দে বুঝিয়ে এক লাইনে সুনীলের জবাব, ‘‘আমার মেয়েকে দেখে রেখো।’’
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার