অলস্পোর্ট ডেস্ক: ইন্ডিয়ান সুপার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার এবং মেরিনার্সদের প্রথম দল হিসেবে লিগ শিল্ড ধরে রাখার সাফল্যে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের তারকা মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্ট। ওডিশা এফসির বিপক্ষে লিগ শিল্ড নিশ্চিত করার পর শনিবার রাতে সবুজ-মেরুন বাহিনী তাদের শেষ হোম ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে লিগ পর্ব স্মরণীয় ভাবে শেষ করে। ১৭টি জয়ের রেকর্ড-সহ হোসে মোলিনার দল মরশুম শেষ করে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে, যা লিগের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
গোয়ার বিরুদ্ধে ২-০ জিতে চলতি মরশুমে ঘরের মাঠে তাদের ১১ নম্বর জয় নিশ্চিত করে হোসে মোলিনার দল, যা আইএসএলের এক মরশুমে কোনও দলের সর্বোচ্চ হোম উইন-এর নতুন রেকর্ড। এ ছাড়া, তারা চতুর্থ দল হিসেবে একটি আইএসএল মরশুমের লিগ পর্বে হোম ম্যাচগুলোতে অপরাজিত থাকার কৃতিত্ব অর্জন করে।
অসাধারণ এক মরশুম শেষে আইএসএল শিল্ড চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বসিত গ্রেগ স্টুয়ার্ট। লিগ পর্ব দারুণভাবে শেষ করতে পারায় উচ্ছ্বসিত এই স্কটিশ প্লেমেকার।
“ক্লাবের সঙ্গে জড়িত সবার জন্যই এটি একটি বিশেষ দিন। সমর্থক, মালিক এবং সব ব্যাকরুম স্টাফ। খেলোয়াড়দের জন্যও এটি অনেক বড় দিন। বিশেষ করে এই মানুষটির– দিমিত্রি পেত্রাতোস। গত সপ্তাহে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে ও”, তিনি ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ওয়েবসাইটকে জানান।
“আমরা জানতাম যে আমরা শিল্ড জিতছি। তবে আমরা এটাও জানতাম যে তিন পয়েন্ট নেওয়া গেলে সেটা আরও ভাল হবে। তাই দুটো একসঙ্গে করতে পেরে দিনটা আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে। পরিবার এখানে, সবাই একসঙ্গে আনন্দ করছে। অসাধারণ এক দিন,” তিনি আরও বলেন।
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের সমর্থকরা গ্যালারিতে উপছে পড়েন কলকাতার দলের ঐতিহাসিক লিগ শিল্ড জয়ের মুহূর্তের সাক্ষী হওয়ার জন্য। গ্যালারি জুড়ে ছিল তাদের প্রাণবন্ত স্লোগান, চোখধাঁধানো টিফো এবং মেক্সিকান ওয়েভ, যা পুরো সেলিব্রেশনকে আরও রঙিন করে তোলে।
সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন স্টুয়ার্ট এবং পুরো মরশুম জুড়ে নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনের জন্য ধন্যবাদও জানা তাদের। বলেন, “গ্যালারির পরিবেশ ছিল দুর্দান্ত। কতজন ছিল, ষাট হাজার? অসাধারণ! এ কারণেই আমরা ফুটবল ভালবাসি। এই সমর্থকদের সামনে খেলতে পারাটা সত্যিই দারুণ। তারা প্রতি সপ্তাহে আমাদের সমর্থন করে, আর তাদের হাতে শিরোপা তুলে দিতে পারাটা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল। তাই, এটা একসঙ্গে আমাদের বিশাল অর্জন। এখন আমরা কিছুটা উপভোগ করতে পারি, বিশ্রাম নিতে পারি। তবে আমরা জানি, প্লে-অফের জন্য আমাদের এখনও অনেক কাজ বাকি আছে”।
গতকালের গোলটি করার সঙ্গে সঙ্গে আইএসএলে ৫০টি গোলে অবদান রাখলেন স্টুয়ার্ট। যা এক অনন্য নজির। গোয়ার বিরুদ্ধে ৯৪ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় গোলটি করে তিনি। এই নিয়ে লিগে ২৪টি গোল ও ২৬টি অ্যাসিস্ট হল তাঁর। তিনি এখন লিগের নবম খেলোয়াড়, যিনি এই কীর্তি গড়লেন।
গোল কেরে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে মোহনবাগান সুপার জায়ান্টকে পুরো তিন পয়েন্ট এনে দিতে পারায় দারুন খুশি স্কটিশ মিডিও বলেন, “নিঃসন্দেহে গোল করা সব সময়ই দারুণ ব্যাপার, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, দল হিসেবে তিন পয়েন্ট অর্জন করা। স্কোরশিটে নাম তুলতে পেরে অবশ্যই ভাল লেগেছে”।
তাঁকে যিনি অ্যাসিস্ট করেন, সেই জেসন কামিংসের প্রশংসা করে স্টুয়ার্ট বলেন, “জেসন (কামিংস) অসাধারণ একটি অ্যাসিস্ট করেছে। সে দলের জন্য আত্মত্যাগ করেছে, আমার ডান পায়ে ও নিখুঁতভাবে বলটা তুলে দেয়। যখন বল জালে জড়ায়, তখন সেটা সবসময়ই দারুণ অনুভূতি দেয়”।
গোল করলেও রক্ষণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: অলড্রেড
আর এক স্কটিশ তারকা ডিফেন্ডার টম অলড্রেড, যিনি শনিবারের ম্যাচের সেরার খেতাবও জিতে নেন, তাঁর কাছেও এটা স্মরণীয় সাফল্য। ম্যাচের পর তিনি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। কিন্তু এত সমর্থক, ক্লাবের ঐতিহ্য এবং কলকাতার মানুষের কাছে এর গুরুত্ব— এ সব দিক থেকে এটা সম্ভবত সবচেয়ে বড় ক্লাব, যেখানে আমি খেলছি। মোহনবাগানের মতো একটি ফুটবল ক্লাবে খেলা সত্যিই এক অবিশ্বাস্য সম্মান”।
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “আমরা খেলোয়াড়দের দায়িত্ব মাঠে ভাল পারফরম্যান্স করা এবং দলকে ম্যাচ জেতানো। আমরা সৌভাগ্যবান যে, এই মরশুমে সেটা করতে পেরেছি। আমার মনে হয়, এই দিনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন আমরা নিজেদের ঘরের দর্শকদের সামনে ম্যাচ ও শিল্ড জিতি, সেই মুহূর্তের আবহ ছিল অসাধারণ”।
ডিফেন্ডার হয়েও চলতি লিগে দলের তিনটি গোলে অবদান রাখেন অলড্রেড। দুটি নিজে করেন ও একটিতে অ্যাসিস্ট করেন। আর ১৫টি ম্যাচে গোল অক্ষত রাখার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান ছিল যথেষ্ট। এই দুই ভূমিকাতেই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা নিয়ে অলড্রেড বলেন, “আমি স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, ইউকে এবং অস্ট্রেলিয়ায় খেলেছি। কিন্তু মনে হয়, এটা ভাগ্যেরই লিখন ছিল। আমরা প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। এখন সারা বিশ্বের ফুটবলে ডিফেন্ডারদের বল পায়ে খেলা ও পাস দেওয়া নিয়ে অনেক আলোচনা হয়, যা নিঃসন্দেহে দারুণ এবং একটি বাড়তি সুবিধা। তবে আমরা রক্ষণকে ভালবাসি, নিজেদের শরীর দিয়ে বল আটকাতে ভালোবাসি। ক্লিন শিট রাখা নিয়ে গর্ব অনুভব করি। আমাদের এই সাফল্যের রহস্য হল, আমরা রক্ষণকে ভালোবাসি এবং ক্লিন শিট ধরে রাখাটাকে উপভোগ করি। দল হিসেবেও আমরা এটা উপভোগ করি। এখন তো সবাই মজা করে বলছে, পরের বছর তুমি স্ট্রাইকার হিসেবে সাইন করবে!”
ভারতে এসে এটিই তাঁর প্রথম মরশুম এবং প্রথম মরশুমেই এত বড় সাফল্য পেয়ে রোমাঞ্চিত অলড্রেড। বলেন, “এটা আমার প্রথম লিগ শিরোপা। সমর্থক এবং খেলোয়াড়— দুপক্ষেরই পারফরম্যান্সের দায়িত্ব থাকে। আমরা একসঙ্গে জিতেছি এবং তার জন্য হৃদয় ও আত্মা উজাড় করে দিয়েছি। আমাদের সামনে এখনও ম্যাচ আছে, যেখানে আমাদের পতাকা ওড়াতে হবে এবং পরবর্তী ট্রফি জয়ের জন্য লড়াই করতে হবে”।
সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে অলড্রেড বলেন, “প্রতি সপ্তাহে আমাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। ঘরে-বাইরে প্রতিটি ম্যাচেই অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করেছেন আপনারা। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই, প্রতিটি ম্যাচে, আমাদের জন্য আপনাদের উপস্থিতি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে। এটা সত্যিই দারুণ অনুভূতি যে, আমরা আপনাদের ভালবাসার প্রতিদান দিতে পেরেছি। তাই সবাইকে ধন্যবাদ”।
আমাদের মানসিকতাই মূল শক্তি: শুভাশিস
মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, অবিচল সংকল্প এবং লড়াইয়ের মানসিকতাই তাদের লিগ টেবলের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে এবং টানা দ্বিতীয়বার মর্যাদাপূর্ণ লিগ শিল্ড জয়ের গৌরব এনে দিয়েছে বলে মনে করেন সবুজ-মেরুন বাহিনীর অধিনায়ক শুভাশিস বোস।
সবুজ-মেরুন অধিনায়ক শুভাশিস দলের কখনও হার না মানা মনোভাবের প্রশংসা করে indiansuperleague.com-কে জানান, “আমি আমার দলের জন্য গর্বিত। টানা দ্বিতীয়বার আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এটাই আমরা, এটাই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট”। শুভাশিস মনে করেন, চ্যাম্পিয়নশিপ জয় সম্পূর্ণভাবে তাঁদের প্রাপ্য ছিল, যা মাঠে এবং মাঠের বাইরে দলের প্রতিটি সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল।
এই প্রসঙ্গেই সতীর্থদের মানসিকতার প্রশংসা করে তিনি বলেন,”আমাদের মানসিকতা, কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত, সব সময়ই ছিল শিল্ডজয়ের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। তারা সব সময় আমাদের বিশ্বাস জুগিয়েছে যে আমরা ট্রফি জিততে পারি। ট্রফি ছাড়া আমাদের কোনও মূল্য নেই। আমাদের মানসিকতাই আমাদের আসল শক্তি”।
শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে উৎসবের আবহ দেখে, সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শুভাশিস। বলেন, “খেলোয়াড় জীবনে আমি আগে কখনও এমন পরিবেশ দেখিনি। এই কারণেই কলকাতাকে ভারতীয় ফুটবলের মক্কা বলা হয়। আমি এমন অসাধারণ আবহ তৈরি করার জন্য সমস্ত সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা কাপ জিতে তাদের আরও বেশি আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করব”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার