অলস্পোর্ট ডেস্ক: ভারত কবে বিশ্বকাপ ফুটবলের মূলপর্বে খেলবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই ঠিকই। তবে সেই স্বপ্ন দেখেন ভারতীয় ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী এবং তাঁর ধারণা ভারতীয় ফুটবল দল ফিফা বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করলে তা হবে এক বিশাল ঘটনা। সেই দিনের অপেক্ষাতেই নাকি রয়েছেন সুনীল ছেত্রী। বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফা-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক।
তিনি বলেছেন, “ভারত যে দিন বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলবে, সারা দেশ পাগল হয়ে যাবে। ভারতীয় হিসেবে সেই দিনটা হবে আমার জীবনের অন্যতম সেরা দিন। এ রকম একটা দিন দেখা আমার স্বপ্ন। একটা বিশাল ব্যাপার হবে”।
ভারতের সামনে আগামী বিশ্বকাপের মূলপর্বে ওঠার একটা ক্ষীণ আশা থাকলেও সে রাস্তা বেশ কঠিন। কিন্তু বাছাই পর্বের এমন ফরম্যাট বজায় থাকলে, এর পরের বিশ্বকাপগুলিতেও অংশগ্রহনকারী দলের সংখ্যা ৪৮ থাকলে বা আরও বাড়লে এবং ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি যদি হতে থাকে, তা হলে হয়তো সুনীল ছেত্রীর স্বপ্ন পূরণ হবে।
কী ভাবে পূরণ হতে পারে সুনীলের সেই স্বপ্ন?
আগামী বিশ্বকাপের মূলপর্বে এশিয়া থেকে আটটি দল সরাসরি মূলপর্বে উঠবে এবং আরও একটি দল উঠতেও পারে বা নাও পারে। সে জন্য এশীয় বাছাই পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডে মোট ৩৬টি দলকে ৯টি গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রতি গ্রুপে থাকবে চারটি দল। যেমন ‘এ’ গ্রুপে আছে কাতার, কুয়েত, ভারত এবং আফগানিস্তান। প্রতি দল হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে ছ’টি করে ম্যাচ খেলার পর প্রতি গ্রুপের সেরা দু’টি দল পৌঁছবে তৃতীয় রাউন্ডে। অর্থাৎ ন’টি গ্রুপের দুটি করে দল, মোট ১৮টি দল উঠবে তৃতীয় রাউন্ডে।
তৃতীয় রাউন্ডে ১৮টি দলকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হবে। অর্থাৎ, ছ’টি করে দল থাকবে প্রতি গ্রুপে। এখানেও হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে প্রতি দলকে মোট দশটি করে ম্যাচ খেলতে হবে দ্বিতীয় রাউন্ডের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কঠিন প্রতিদ্বন্দীর বিরুদ্ধে। এই তিন গ্রুপের সেরা দু’টি করে দল, অর্থাৎ মোট ছ’টি দল, ২০২৬ বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে সরাসরি। কিন্তু তিন ও চার নম্বর দলগুলির তখনও আমেরিকায় যাওয়ার আশা বেঁচে থাকবে। তাদের তখন খেলতে হবে চতুর্থ রাউন্ডে। অর্থাৎ, চতুর্থ রাউন্ডে ছ’টি দল উঠবে।
চতুর্থ রাউন্ডে ওঠা ছ’টি দলকে দু’টি গ্রুপে ভাগ করা হবে। প্রতি গ্রুপে থাকবে তিনটি করে দল। এই রাউন্ডে প্রতি দলকে বাকি দুই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একবার করে খেলতে হবে নিরপেক্ষ ভেনুতে। দুই গ্রুপের এক নম্বর দলগুলি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র পাবে। অর্থাৎ, এখানেই আটটি এশীয় দলের জায়গা পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। কিন্তু এর পরেও পড়ে থাকবে আরও একটি স্থান।
সেজন্য আবার পঞ্চম রাউন্ড খেলতে হবে চতুর্থ রাউন্ডের দুই গ্রুপের রানার্স আপ দলগুলিকে। একে অপরের মধ্যে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতিতে দুটি ম্যাচ খেলে যারা জয়ী হবে, তারা ইন্টার কনফেডারেশন প্লে-অফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
ছ’টি কনফেডারেশন থেকে ছ’টি দল এই পর্বে অংশ নেবে। ফিফা ক্রমতালিকায় অবস্থান অনুযায়ী সেরা দু’টি দলকে শীর্ষবাছাইয়ের তকমা দেওয়া হবে। বাকি চারটি দলকে একটি করে নক-আউট ম্যাচ খেলে দুই শীর্ষবাছাই দলের মুখোমুখি হতে হবে। এই চার দলের মধ্যে হওয়া টুর্নামেন্টে সেরার শিরোপা পাওয়া দল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ ২০২৬-এর মূলপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে।
ভারত তৃতীয় রাউন্ডে উঠলে টানা তৃতীয়বার এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলার ছাড়পত্র পেয়ে যাবে। যা হবে আরও এক অভূতপূর্ব ঘটনা। তবে এই রাউন্ড থেকেই আমাদের জাতীয় দল সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে যাবে, এটা বোধহয় মোটেই বাস্তবসম্মত ভাবনা নয়। কিন্তু ভারত যদি তৃতীয় রাউন্ডে উঠে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে থেকেও শেষ করতে পারে, তা হলেও একটা সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে পারবে। যদিও সে এখন অনেক দূরের ভাবনা। কিন্তু বিশ্বকাপ মূলপর্বের কাছাকাছি যেতে পারলেও তা ভারতীয় ফুটবলের কাছে বড় প্রাপ্তি হবে। সুনীল ছেত্রী সেই সম্ভাবনার আশাই করছেন হয়তো।
কিন্তু ৩৯ বছর বয়সের সুনীল আর কতদিন ভারতের জার্সি গায়ে মাঠে নামবেন? এই প্রশ্ন এখন প্রায় সব ফুটবলপ্রেমীরই মুখে মুখে। যদিও এই ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে চাননি তিনি। শুধু বলেন, “আমি যে খেলতে পারছি, এতেই আমি খুশি। এখন আমি বোনাস পিরিয়ডে আছি। সময়টা উপভোগ করছি। জানি না সময়টা কবে ফুরিয়ে যাবে। তবে যতদিন পারছি উপভোগ করে যেতে চাই”।
ভারতের হয়ে ২০০৫-এ প্রথম মাঠে নামার পর থেকে ১৪৩টি ম্যাচ খেলেছেন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে। ৯৩টি গোল করেছেন। ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। সারা দুনিয়ায় এখনও খেলে যাওয়া ফুটবলারদের মধ্যে তিনিই তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এই তালিকায় তাঁর ওপরে রয়েছেন শুধু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ও লিওনেল মেসি। তবে আর বেশিদিন যে তাঁকে ফুটবল মাঠে দেখা যাবে না, সেই ইঙ্গিত দিয়ে সুনীল বলেন, “বয়স ৩৯ হয়ে গিয়েছে যখন, তখন আর বেশিদিন খেলতে পারব বলে মনে হয় না। আমি আপাতত পরের তিন মাস নিয়ে ভাবছি। তার পরে আবার তিন মাস নিয়ে ভাবব। তার পরে দেখা যাক কী হয়”।
২০২৬-এর বিশ্বকাপের সময় সুনীলের বয়স হবে ৪২। তখন যে আর তিনি খেলতে পারবেন না, তা তিনি নিজেও জানেন। কিন্তু ভারত বিশ্বকাপে খেলছে, এই স্বপ্ন দেখবেন বলেই জানিয়েছেন। “একজন ভারতীয় হিসেবে এই স্বপ্ন দেখি আমি। দেশের একজন ফুটবলপ্রেমী হিসেবে দেখি। তখন আমি কী ভাবে দেশের ফুটবলের সঙ্গে থাকব, সেটা বড় কথা নয়। তবে ভারতীয় দলের প্রত্যেকটা ম্যাচ দেখব এবং দলের জন্য গলা ফাটাব”, বলেছেন তিনি।
ভারতীয় ফুটবলের সাম্প্রতিক উন্নতির জন্য জাতীয় সিনিয়র দলের ক্রোয়েশিয়ান কোচ ইগর স্টিমাচকে কৃতিত্ব দেন সুনীল। বলেন, “উনি আমাদের খেলোয়াড়দের প্রত্যেকের মনস্তাত্বিক দিকটা খুব ভাল করে বোঝেন। প্রত্যেকের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ থাকে। উনি প্রত্যেকের মাথায় এটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন যে জাতীয় দলের হয়ে অনেক ভাল ফুটবল খেলতে হবে। এ ছাড়া সাফল্যের কোনও রাস্তা নেই”।
(লেখা আইএসএল ওয়েব সাইট থেকে)
খেলার খবরের জন্য ক্লিক করুন: www.allsportindia.com
অলস্পোর্ট নিউজের সঙ্গে থাকতে লাইক আর ফলো করুন: ফেসবুক ও টুইটার